নিজস্ব প্রতিবেদক : রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও করপোরেশনগুলোর অনুমোদিত মূলধন কত হবে, তা নির্ধারণ করবে সরকার। একইসঙ্গে বেসরকারিকরণকৃত শিল্প-কারখানাগুলো বাদ দিয়ে বিদ্যমান আইনের কিছু সংযোজন-বিয়োজন করে ‘বাংলাদেশ শিল্প-প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ আইন, ২০১৭’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের জানান, ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির ১৬ নম্বরের আদেশের মাধ্যমে শিল্প-প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে আরও কিছু সংশোধনী আনা হয়। সামরিক শাসনামলের হওয়ায় আইনটি পরিমার্জনসহ বাংলায় রূপান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগের আইনের তফসিলে জাতীয়করণ করা আড়াইশ’র বেশি শিল্প-প্রতিষ্ঠানের তালিকা ছিল। পরবর্তী সময়ে যেগুলো বিরাষ্ট্রীকরণ ও বিক্রি করা হয়েছে, সেগুলো নতুন আইনে রাখা হয়নি। কেবল সরকারের বর্তমানের শিল্প-প্রতিষ্ঠানের নাম প্রস্তাবিত আইনের তফসিলে রাখা হয়েছে। নতুন আইনের তফসিলে জাতীয়করণকৃত শিল্প-প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৯টি। তবে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের আওতায় চলে যাওয়ায় পেট্রোবাংলাকে এ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন যে করপোরেশনগুলো আছে, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তালিকাটা শুদ্ধ এবং সংখ্যাগতভাবে সঠিকতা যাচাই করা হয়েছে। ভুল-টুল যা ছিল ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আগের আইন থেকে অনেক জিনিস বাদ দিয়ে খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে। জাতীয়করণের কারণে শিল্প-প্রতিষ্ঠান সরকারের কাছে ন্যস্ত হয়ে যাওয়ায় আইন থেকে ন্যস্ত করার বিধান বাদ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানি আইনের প্রযোজ্যতা নতুনভাবে আইনে সংযোজন করা হয়েছে। আগের আইন থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের অংশটিও বাদ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নতুন আইনে করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন কী পরিমাণ হবে, সেটা নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারের হাতে রাখা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, এছাড়া মন্ত্রিসভায় ‘স্ট্যান্ডার্ড ওজন ও পরিমাপ আইন, ২০১৭’-এর খসড়া এবং ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন আইন, ২০১৭’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
স্ট্যান্ডার্ড ওজন ও পরিমাপ আইন: মানহীন বাটখারা বা পরিমাপক ব্যবহার ও তৈরির শাস্তি বাড়িয়ে ‘স্ট্যান্ডার্ড ওজন ও পরিমাপ আইন, ২০১৭’-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এ আইনটি অনুমোদনের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইনটি মূলত ১৯৮২ সালের ‘দি স্ট্যান্ডার্ডস অব ওয়েট অ্যান্ড মেজার্স অর্ডিন্যান্স’। এটি বিএসটিআই আইন নামে পরিচিত। ১৯৮২ সাল সামরিক শাসনামল হওয়ায় সুপ্রিমকোর্টের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এটাকে সংশোধন ও পরিমার্জন করে বাংলায় অনুবাদ করে নিয়ে আসা হয়েছে। একইসঙ্গে এটি হালনাগাদ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে আমাদের মান নিয়ন্ত্রণের যে সম্পর্ক রয়েছে, সে জিনিসগুলো এখানে নিয়ে আসা হয়েছে।
‘নতুন আইনে অপরাধ ও দণ্ডের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে সব ক্ষেত্রেই আর্থিক শাস্তি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে’ বলে জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মানদণ্ডহীন বাটখারা বা পরিমাপক ব্যবহারের শাস্তি ছিল সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ তিন হাজার টাকা জরিমানা। প্রস্তাবিত আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড ঠিক আছে, সর্বোচ্চ জরিমানা ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, মানহীন বাটখারা বা পরিমাপক বানানোর শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা। কারাদণ্ড আগের মতোই আছে, তবে আগে জরিমানা ছিল ১০ হাজার টাকা।’
তিনি জানান, সরকারের অনুমতি নিয়ে সম্পূর্ণভাবে রফতানির উদ্দেশ্যে তৈরি বা উৎপাদিত ওজন বা পরিমাপক ছাড়া অন্য কোনো ওজন বা পরিমাপক তৈরি করলে শাস্তি সর্বোচ্চ এক বছরের জেল বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা। আগে জরিমানা ছিল ৫ হাজার টাকা।
এছাড়া কেউ যদি বাটখারা বা পরিমাপকের ত্রুটি সংশোধন না করে বা প্রচলিত মান পরিবর্তন করে, তবে তিনি সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। এক্ষেত্রেও আগে জরিমানার পরিমাণ ছিল পাঁচ হাজার টাকা।
বিএডিসি আইন অনুমোদন: ‘বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন আইন, ২০১৭’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ১৯৬১ সালের বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) আইনটি ইংরেজিতে ছিল, এখন বাংলায় অনুবাদ করে নতুনভাবে আনা হয়েছে।
Add Comment