Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 2:58 pm

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ঠিকাদারিতে ন্যায্যতা নিশ্চিত হোক

ডিজিটাল বাংলাদেশে ই-টেন্ডার একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। সঠিকভাবে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা গেলে দরপত্র প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হবে। সরকার অনলাইন বা ই-টেন্ডার চালু করেছে ১০ বছর হয়ে গেছে, অথচ এখনও কার্যক্রমটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়নি। সব ঠিকাদার এখনও ই-টেন্ডারে তালিকাভুক্ত হয়নি। দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে এখনও ম্যানুয়াল পদ্ধতিই অনুসরণ করা হয় বলে আমাদের ধারণা।

২০১১ সালের ২ জুন ই-টেন্ডার পদ্ধতির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এটি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সরকারি কেনাকাটায় স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি নির্মূল হওয়ার কথা, কিন্তু গত ১০ বছরে এর অগ্রগতি সন্তোষজনক নয়। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এজন্য অসাধু সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার পরিষদের কর্মকর্তারাও দায়ী। অভিযোগ রয়েছে, ই-টেন্ডারে নানা জটিলতা থাকায় ঘুরেফিরে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানই কাজ পাচ্ছে। সরকার পরিষদের কর্মকর্তা বিশেষ করে মেয়ররা এর দায় এড়াতে পারেন না।

গতকাল শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল ‘পছন্দের ঠিকাদারে চলছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন: তিন বছর লাইসেন্স নবায়ন বন্ধ ৩৫০ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের’। শিরোনামেই সব কথা উঠে এসেছে। খবরে জানা যায়, তিন বছর ধরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনে (গাসিক) অনেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ পাচ্ছে না। অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে কাজ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে গুটিকয়েক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। আর প্রায় তিন বছর ধরে ৩৫০টির মতো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাদের লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছে না। তবে নানা ভয়ে প্রতিবাদ করছেন না ব্যবসায়ীরা।

এর আগে আমরা দেখেছি, জি কে শামীম, ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং, মাসুদ অ্যান্ড কোম্পানিসসহ কয়েকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় প্রতিটি মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিভাগের কাজ নিয়মিত পেয়ে থাকে। ক্লাবগুলোয় ক্যাসিনোকাণ্ডের পর তাদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমেছে বা তারা অনেকটা আড়ালে চলে গেছে।

গাজীপুর সিটিতে তিন বছর লাইসেন্স নবায়ন থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো বিপাকে আছে। অভিযোগ রয়েছে, গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিতে বহু প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে না। ম্যানুয়াল পদ্ধতির সুযোগে বেশিরভাগ ঠিকাদার কমিশনের বিনিময়ে নিজেদের পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দিয়ে থাকে। স্বচ্ছতা আনতে এ প্রবণতা বন্ধ করা আবশ্যক।

২০১৯ সালে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে করপোরেশনের কয়েক কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সময় মেয়র বলেছেন, ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে সঙ্গে সঙ্গে বরখাস্ত করা হবে। আর এখন অনিয়মের কারণেই হয়তো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স নবায়ন করতে পারছে না। আমরা আশা করি, কর্তৃপক্ষ প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে আইন মেনে চলা ঠিকাদারদের লাইসেন্স নবায়নে ব্যবস্থা নেবেন। পছন্দের ঠিকাদারে কোনো সিটি করপোরেশন চলতে পারে না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে ন্যায্যতা নিশ্চিত হলেই ই-টেন্ডার পদ্ধতির সুফল পাবে জনগণ।