রাষ্ট্রীয় সদিচ্ছার অভাবে বাজেটীয় উপাত্তের ঘাটতি প্রকট

নিজস্ব প্রতিবেদক: যে কোনো দেশের ফিসক্যাল ডেটা (বাজেটীয় উপাত্ত) উন্নয়ন প্রক্রিয়া ও নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ উপাত্তের অবাধ প্রবাহ জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার নির্দেশক। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চাহিদা অনুযায়ী, সময়মতো মানসম্পন্ন বাজেটীয় উপাত্ত পাওয়া যায় না। এ উপাত্ত ব্যবহার উপযোগীর মাধ্যমে প্রকাশের ক্ষেত্রেও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সদিচ্ছার ঘাটতি রয়েছে। এতে করে দেশের নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত চিত্র জানার ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকছেন। তাই বাজেটীয় তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারের প্রধান প্রতিষ্ঠান অর্থ মন্ত্রণালয়কে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে।

রাজধানীর বনানীতে একটি হোটেলে গতকাল ‘বাংলাদেশে নীতিনির্ধারণে বাজেটীয় উপাত্তের উন্নতি সাধনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এ কথা বলেন। এশিয়া ফাউন্ডেশনের সহযোগিতা এ সংলাপের আয়োজন করে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সংগঠন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংলাপে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

‘বাজেটের তথ্য-উপাত্ত যে কেবল গবেষকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তা নয়, বরং এটি জনপ্রতিনিধি ও নীতিনির্ধারকদের জন্য আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সময়মতো ও সঠিক তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা না হলে উপাত্তের ব্যবধান ও ঘাটতি বিরাজমান থাকে। এতে করে সঠিক নীতি প্রণয়ন বিঘিœত হয়।’ তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে সরকারের বাইরের মানুষদের প্রভাবে বিভিন্ন উপাত্ত পরিবর্তন করা হয়। এতে করে উপাত্তের গুণগত মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘যে কোনো দেশে বাজেটীয় উপাত্ত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা ও নীতিনির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এ উপাত্তের অবাধ প্রবাহ জনগণের করের অর্থ ব্যয়ের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে চাহিদা অনুযায়ী মানসম্মত বাজেটীয় তথ্যের প্রাপ্যতা নেই। অনেক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে তথ্য পেতে অনেক বেগ পেতে হয়।’ তিনি বলেন, বাজেটীয় উপাত্তের বিষয়ে নাগরিকদের মধ্যে চেতনা বা সচেতনতার ঘাটতি নেই। কিন্তু এ উপাত্তের সরবরাহ অংশ অত্যন্ত দুর্বল।

তথ্য-উপাত্তের প্রবাহ সঠিক নিয়মে সময়মতো করার জন্য সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে তথ্য কালেন্ডার প্রণয়নের তাগিদ দেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি সংলাপে অংশ নিয়ে বলেন, কেবল বাজেটীয় তথ্য-উপাত্ত নয়, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিভিন্ন সেবা সংস্থার তথ্য-উপাত্ত প্রকাশেও অনেক ঘাটতি রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ তিনি ওয়াসা, পেট্রোলিয়াম করপোরেশনসহ অন্যান্য রাষ্ট্রীয় সেবা সংস্থার আয়-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণী প্রকাশের দাবি জানান। একই সঙ্গে বাজেটীয় উপাত্ত যাতে সহজে ব্যবহার করা যায়, সে জন্য তিনি এগুলো পিডিএফ ফরম্যাটের পরিবর্তে এক্সেল বা ওয়ার্ড প্ল্যাটফর্মে প্রকাশের প্রস্তাব দেন।

সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। তিনি মূল প্রবন্ধে বলেন, মানসম্মত বাজেটীয় উপাত্ত সময়মতো প্রকাশ করা হলে তা দেশে বাজেট-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের পাশাপাশি সুশাসন নিশ্চিতে সহায়তা করে। এ সময় তিনি আর্থিক খাতের তথ্যের প্রাপ্যতা, সহজলভ্যতা নির্ভুলতা ও সময়মতো পাওয়া প্রভৃতি বিষয়ের ওপর জোর দেন। তিনি মাসভিত্তিক বাজেটীয় উপাত্ত প্রকাশ প্রক্রিয়া জোরদার করার ওপর জোর দেন।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য ডেটা (উপাত্ত) একটি প্রধান পূর্বশর্ত বলে মনে করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, শুধু আর্থিক খাত নয়, সার্বিকভাবে ডেটা নিয়ে আমাদের সমস্যা আছে, চ্যালেঞ্জ ও আছে। গত বছর আমরা যেসব পরিকল্পনা নিয়েছি, তা কতটুকু বাস্তবায়ন হলো তা জানার জন্য উপাত্ত দরকার। তাই আমি মনে করি, উপাত্তের প্রকাশ ঘটানো হলে তা আমাদের সফলতা ও ব্যর্থতা পরিমাপে সহায়তা করবে।

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, বাজেট নিয়ে সংসদে তেমন কোনো আলোচনা হয় না। আমাদের সংসদীয় আসনের জন্য কতটা বরাদ্দ দরকার, তা নিয়ে তেমন কোনো আলোচনাই হয় না। বাজেট হয়ে গেছে অনেকটা মন্ত্রিপরিষদ ভিত্তিক। সেখান থেকে যা আসে, সেটাই সংসদে অনুমোদিত হয়ে যায়। বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় সংসদ সদস্যদের অংশগ্রহণের সুযোগ খুবই সীমিত হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে অনেক সময় সংসদ সদস্যদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাও অনেকখানি দায়ী বলে তিনি উল্লেখ করেন। আর সংসদে কার্যকর বিতর্ক না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদকে চিহ্নিত করেন।

অধিবেশন শেষে উম্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন উচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারক, গবেষক, উন্নয়ন কর্মী, শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা প্রতিনিধি ও গণমাধ্যমকর্মীরা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০