Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 12:48 am

রাসায়নিক কেনার নামে অর্থ লোপাট

বেলায়েত সুমন, চাঁদপুর: বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) নদীকেন্দ্র, চাঁদপুরের নিয়ন্ত্রণাধীন চাঁদপুরস্থ নদীকেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ শীর্ষক প্রকল্পের গবেষণায় ব্যবহারের জন্য রাসায়নিক দ্রব্যাদি ক্রয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানকালে জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের শেষ মাসে রিকুইজিশন ছাড়া বিধিবহির্ভূতভাবে সরকারি অর্থ তামাদি এড়ানোর উদ্দেশ্যে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৫ টাকার রাসায়নিক দ্রব্যাদি অনিয়মিতভাবে ক্রয়ে অনিয়ম করা হয়েছে। অপ্রয়োজনীয়ভাবে বছরের শেষ মাসে রাসায়নিক দ্রব্যাদি কেনা হয়েছে শুধু অর্থ তামাদি এড়ানোর জন্য। অর্থবছরের শেষ মাসে রাসায়নিক দ্রব্যাদি কেনা হলেও তা ইস্যু, মজুত করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পিপিআর, ২০০৮-এর বিধি ১৬ অনুসরণ না করে এপিপি বহির্ভূতভাবে গবেষণা কাজে ব্যবহƒত রাসায়নিক দ্রব্যাদি অর্থবছরের শেষ মাসে কেনায় এবং বর্তমান মজুত প্রদর্শন না দেখাতে পারায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। ‘চাঁদপুরস্থ নদীকেন্দ্রে ইলিশ গবেষণা জোরদারকরণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অর্থছাড়ের নথি, ক্যাশবই, বিল-ভাউচার ও অন্যান্য নথি বিশ্লেষণে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।


প্রকল্প পরিচালক এমএ আবুল বাসার কর্তৃক শেয়ার বিজকে সরবরাহকৃত প্রকল্পের মজুত রেজিস্টারের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার হাটখোলা এলাকার লামিয়া সায়েন্টিফিক অ্যান্ড সার্জারি নামীয় ভূঁইফোঁড় প্রতিষ্ঠান থেকে ০৩০৬১৯ নম্বর বিলে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৫৮৫ টাকার ১৬ ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য কেনা হয়। যেখানে এক কেজি বরিক অ্যাসিডের দাম দেখানো হয় ৫৮ হাজার ৯৯০ টাকা। যদিও বাজারে তা প্রকারভেদে ৭০০ থেকে ৭ হাজার টাকায় পাওয়া যায়। রেজিস্টারে মোট ১৬ ধরনের রাসায়নিক কেনার তথ্য থাকলেও ১৬ নম্বর ক্রমিকের হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড লিটার ১৪ হাজার ৯৯৫ টাকা দরে কেনা করা হয়। পাঁচ লিটার হাইড্রোক্লোরিক এসিডের দাম ক্রয়কারীদের হিসাবে ৭৪ হাজার ৯৭৫ টাকা হওয়ার কথা থাকলেও মজুত রেজিস্ট্রারে উল্লেখ করা হয় ২৯ হাজার ৯৯০ টাকা।

ফরমালিন লিটারপ্রতি ৩ হাজার ৯৯৫ টাকা দরে ১০ লিটার ১৫ হাজার ৯৮০ টাকা, সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড কেজিপ্রতি ১ হাজার ৩৮৫ টাকা দরে ১০ কেজি ১৩ হাজার ৮৫০ টাকা, গ্লুকোজ এক কেজি ১১ হাজার ৯৯০ টাকা, গ্লুকোজ ওয়ান ফসফেট ৬ গ্রাম ৯ হাজার ৯৯৫ টাকা, গ্লুকোজ সিক্স ফসফেট ৩ গ্রাম ১৯ হাজার ৯৯০ টাকা, ম্যালিক এসিড এক কেজি ৩০ হাজার ৯৯০ টাকা, ইথানল ৭ হাজার ৯৯০ টাকা দরে সাড়ে সাত লিটার ২৩ হাজার ৯৭০ টাকাসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য কেনা হয়। এই রাসায়নিক দ্রব্য কে, কোথায়, কী ধরনের গবেষণা কাজে ব্যবহার করেছেন এমন ব্যবহারকারী কিংবা ব্যবহারের কোনরূপ প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এমনকি এই রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করে প্রাপ্ত গবেষণালব্ধ ইলিশ গবেষণা সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য নদীকেন্দ্র চাঁদপুরে পাওয়া যায়নি। প্রকল্প পরিচালক এ প্রতিনিধিকে তথ্য না দিয়ে তিন বছর পর্যন্ত তালবাহানা করেন।

২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রকল্পের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে রাসায়নিক দ্রব্যাদি কেনায় অনিয়মের বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তোলে নিরীক্ষা দল। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহারের কোনো প্রমাণ না পাওয়ায় অনিয়মের সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলেও প্রকল্পের অর্থলোপাটের সঙ্গে জড়িতদের গোপন কারসাজিতে ধামাচাপা দেয়া হয় অনিয়মের বিষয়টি।
অপরদিকে প্রকল্পে অঙ্গভিত্তিক সব ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ
উঠে বিএফআরআই ময়মনসিংহ কার্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। সেই কর্মকর্তার নির্দেশেই প্রকল্প পরিচালক প্রকল্পের যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করার অভিযোগ উঠে।