Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 11:52 am

রাসায়নিক গুদামের প্রথম বাণিজ্য অনুমতি দিল ডিএসসিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক: নিমতলী ও চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পর পুরান ঢাকা থেকে শ্যামপুরে স্থানান্তরিত রাসায়নিক গুদাম হিসেবে একটি প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য অনুমতি দিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এর ফলে দীর্ঘ এক যুগ পর রাসায়নিক গুদাম হিসেবে প্রথম কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য অনুমতি দিল দক্ষিণ সিটি।

শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক রাজধানীর শ্যামপুরে বাস্তবায়িত ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্পে স্থানান্তরিত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ?‘মেসার্স রয়েল টন লেকার কোটিং’ নামক রাসায়নিক প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্য অনুমতি নবায়ন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন।

শ্যামপুরে স্থানান্তরিত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বাণিজ্য অনুমতি নবায়নের আবেদন করা হলে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডিএসসিসি এই প্রতিষ্ঠানকে নবায়নকৃত এই বাণিজ্য অনুমতি দেয়।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, শ্যামপুরে স্থানান্তরিত হওয়ায় আমি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে অন্যান্য সব রাসায়নিক গুদাম ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও সেখানে স্থানান্তরিত হবে। নিরাপদ হবে আমাদের পুরান ঢাকার সামগ্রিক পরিবেশ।

যারা স্থানান্তরিত হবে না, পর্যায়ক্রমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শ্যামপুরে অস্থায়ী ভিত্তিতে যে রাসায়নিক গুদামগুলো নির্মাণ করা হয়েছে, সেখানে আগুন নেভানোর আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া খোলামেলা পরিবেশ হওয়ার সেখানে ঝুঁকির মাত্রাও অনেক কম। পাশাপাশি এসব রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠানকে স্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জায়গার ওপর যে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তা প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে আমরা জেনেছি। জননিরাপত্তার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টিকারী এসব রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠান যদি সেখানে স্থানান্তরিত না হয়, তাহলে আমরা সেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করব।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৪ জুন শ্যামপুরে ‘অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য নির্মিত গুদাম’ প্রকল্প চালু করা হয়। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস সেসব গুদাম উদ্বোধন করেন।

রাসায়নিক গুদাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছিলেন, পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্যাদি স্থানান্তর-সংক্রান্ত নীতিমালা যেন ব্যবসাবান্ধব হয়। স্থানান্তর প্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ীরা যেন উৎসাহিত ও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, সে বাস্তবতা আমলে নেয়ার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি। আমরা বিশ্বাস করি, এসব বিপজ্জনক রাসায়নিক সামগ্রী পর্যায়ক্রমে স্থানান্তরের মাধ্যমে ঢাকাকে আমরা একটি বাসযোগ্য ও দুর্যোগ-সহনশীল নগরীতে পরিণত করতে পারব।

জানা গেছে, নিমতলী অগ্নিকাণ্ডে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০১৩ সাল থেকে পুরান ঢাকায় অবস্থিত এসব রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠানকে এবং চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ডের পর ২০১৯ সাল থেকে রাসায়নিক গুদাম ও প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বিস্ফোরক-জাতীয় রাসায়নিক ব্যবহƒত হয়, এ ধরনের প্লাস্টিক কারখানা ও প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে বাণিজ্য অনুমতি প্রদান এবং বাণিজ্য অনুমতি নবায়ন বন্ধ রাখে।

এছাড়া মন্ত্রিপরিষদের নির্দেশনার আলোকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং বিস্ফোরক পরিদপ্তরসহ সরকারের আরও বিশেষ তিনটি সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনটি দল গঠন করে পুরান ঢাকায় (অঞ্চল ৩, ৪ ও  ৫) অবস্থিত বিস্ফোরক জাতীয় প্লাস্টিক ও রাসায়নিক ব্যবসা পরিচালনাকারী গুদাম ও প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রস্তুত করে। ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন মন্ত্রিপরিষদে সে তালিকা পাঠায়। তালিকায় পুরান ঢাকায় অবস্থিত সর্বমোট এক হাজার ৯২৪টি রাসায়নিক গুদামের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরবরাহ করা হয়। তালিকায় রাসায়নিকের ধরন এবং ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় অতি ঝুঁকিপূর্ণ, মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ ও নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ গুদামের সংখ্যা এবং এসব গুদামে রাখা রাসায়নিক দ্রব্যাদির নামও উল্লেখ করা হয়।