নিজস্ব প্রতিবেদক : রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বারভিডা)। গতকাল সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজধানীর বিজয়নগরে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশে শুল্ক কাঠামো এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে যে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে নতুন গাড়ির চেয়েও রিকন্ডিশন্ড গাড়ির দাম দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানি শুল্ক কমানো জরুরি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন বারভিডার সভাপতি আবদুল হক। এ সময় সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, সহসভাপতি মনোয়ার হোসেনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বারভিডার সভাপতি বলেন, ‘রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ক্রমাগত শুল্কারোপের কারণে গাড়ির দাম বেড়ে যাচ্ছে। এতে রিকন্ডিশন্ড গাড়ির চাহিদা ও ক্রেতা কমে যাচ্ছে। ফলে গাড়ি আমদানির পরিমাণও কমে গেছে। ফলে সরকার একদিকে রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে এ খাতে কর্মসংস্থান সংকুচিত হয়ে পড়েছে। তাই এ খাতকে বাঁচাতে হলে জরুরিভাবে আমদানি শুল্ক কমাতে হবে। কেননা, ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি আর রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানি শুল্ক কখনও এক হতে পারে না।’
আবদুল হক বলেন, ‘ব্র্যান্ড নিউ গাড়ি আর রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ক্ষেত্রে করারোপে বৈষম্য রয়েছে। একটি জটিল প্রক্রিয়ায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির শুল্কায়ন করা হচ্ছে। আমরা চাই নতুন ও পুরোনো গাড়ি নির্বিশেষে সবার জন্য একটি সুষ্ঠু নীতিমালা প্রণয়ন ও একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা হোক।’
বারভিডা সভাপতি বলেন, ‘জাপান থেকে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ি ইয়েলো বুকে থাকা নিউ প্রাইসের ওপর ভিত্তি করে অপচয় বিয়োজনের পর শুল্কের জন্য মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। অথচ ইয়েলো বুকে পুরোনো গাড়ির মাসিকভিত্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নিয়ে নতুন গাড়ি বিবেচনায় রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মূল্য নির্ধারণ করেছে।’
তিনি বলেন, ‘অতিরিক্ত শুল্কারোপের কারণে বর্তমানে এ খাত হুমকির মুখে পড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৩ হাজার ৭৫ রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তা কমে ১২ হাজার ৫০২তে নেমে এসেছে। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানি হয়েছে মাত্র তিন হাজার ৪৩৮টি। এতে সরকার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে। পাশাপাশি ভোক্তারা ভালো মানের পরিবেশবান্ধব গাড়ি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।’
এদিকে কায়েমি স্বার্থবাদীদের কারণে ঢাকার পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন বারভিডা সভাপতি। তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে যাচ্ছে। কিন্তু ঢাকার বাস দেখলে অত্যন্ত বেদনাবোধ হয় ও লজ্জা লাগে। এটাই কি নিয়তি ছিল?
গাড়ি নিয়ে নানা কথা শেষে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ঢাকার বাস দেখলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে কোন দেশের পর্যায়ে আছে বলে মনে হয়Ñদরিদ্র, মধ্যম আয়, না কি উন্নত? জবাবে বারভিডার সভাপতি বলেন, সত্তরের দশকেও ঢাকায় বিআরটিসি বাসের মানের চেয়ে ভালো ছিল। শৃঙ্খলা ছিল, রুট ব্যবস্থাপনাও ভালো ছিল।
আবদুল হক বলেন, এখন কোনো রুট ব্যবস্থাপনা নেই। ফার্মগেট দিয়ে প্রায় ৩২ রুটের গাড়ি চলে। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরের একজন নাগরিকের ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের ওই নাগরিক আমাকে বলেছেন, তোমাদের জন্য দুটি চ্যালেঞ্জ। একটি ঢাকার ট্রাফিক, যানবাহন ও বাসের নারকীয় অবস্থা নিয়ন্ত্রণ। আরেকটি হলো, ঢাকার হজরত শাহ্জালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে ঠিক করা। এটি করতে পারলে তোমরা এক ধাপ এগোতে পারবে।’