Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 11:43 am

রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাননি গিলে ফেলেছেন: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি’প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাননি, গিলে ফেলেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক যুব সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ কথা বলেন।

গতকাল সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রায় যুক্ত হওয়া ১১ হাজার ৭২ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এই পায়রা বন্দরের কথা বলতে গিয়ে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, আমাদের বিরোধীরা, অর্থাৎ বিএনপি বলে যে রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল?’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘অবশ্যই, জিজ্ঞেস করতে চাই যে রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল? তিনি (প্রধানমন্ত্রী) উত্তর দিয়েছেন, রিজার্ভের টাকা চিবিয়ে খাওয়া হয়নি। চিবিয়ে তো খান নাই, গিলে ফেলেছেন। রিজার্ভের টাকা আপনারা গিলে ফেলেছেন।’

‘রিজার্ভের টাকা পায়রা বন্দরে খরচ করা হয়েছে’ বলে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন, তার জবাবে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘পায়রা বন্দরে খরচ করার জন্য রিজার্ভের টাকা নয়, রিজার্ভের টাকা হচ্ছে আমদানি করতে যে টাকা লাগে, তা ডলার দিয়ে পরিশোধ করবেন। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে দেশে যখন অর্থনৈতিক ক্রাইসিস দেখা দেবে, তখন ক্রাইসিস ট্যাকল করবেন।’

পায়রা বন্দরের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পায়রা বন্দর কার্যকর হতে পারে না। কারণ, এর জন্য যে নাব্য দরকার, জাহাজ ভেতরে আসার জন্য পানির যে গভীরতা দরকার, সেই গভীরতা সেখানে নেই। তার জন্য কী করেছেন, সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তিনটা সমাবেশ করে ক্ষমতায় চলে গেছি বলে মনে করছি না। কিন্তু এসব সমাবেশের কারণে আপনাদের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। যে কারণে সমাবেশগুলো বন্ধ করার জন্য আপনারা পরিবহন ধর্মঘট করাচ্ছেন।

‘খেলা হবে’Ñআওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, খেলা তখনই হয়, যখন লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে। খেলা তখন হবে যখন সরকার পদত্যাগ করবে এবং মধ্যবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেবে। তখন সেই নির্বাচনী খেলা হবে। এছাড়া কোনো খেলা খেলতে দেয়া হবে না। দেশের মানুষ আর কখনও সেটা দেবে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, চট্টগ্রামে, ময়মনসিংহ ও খুলনায় ধর্মঘট ডেকেছে। সেই ধর্মঘট দিয়ে কি গণতন্ত্রকামী মানুষকে আটকে রাখতে পেরেছে? পারেনি। জনগণ তাদের দাবি জানাতে হেঁটে বিভিন্নভাবে সমাবেশে এসে উপস্থিত হয়েছে। বরিশালে ধর্মঘট দিয়েছে, রংপুরে ধর্মঘট দিয়েছে কেন, যাতে জনসমাবেশ বন্ধ করা যায়?

মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জে যবুদল নেতা নিহত হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার আজকে গুলি করে আমাদের দমন করতে চায়। তারা অত্যাচার, নির্যাতন করে দমন করতে চায়।

নির্বাচন ব্যবস্থাকে আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন করেছে, যাকে ডিসি-এসপিরা মানে না। তারা নির্বাচন করতে পারে না। সুতরাং নির্বাচনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমরা খুব পরিষ্কারভাবে বলেছি, হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না। নির্বাচনের আগে হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, তার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করতে হবে এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। পরিষ্কার কথা, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা না দিলে এখানে কোনো নির্বাচন হবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের সামনে অনেক কঠিন সময়, অনেক পরীক্ষা, অনেক যুদ্ধ। আজকে যে চেয়ারটি খালি রেখেছি দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার জন্য। তিনি তার সারাটা জীবন সংগ্রাম-লড়াই করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। এখনও তিনি অসুস্থ শরীর নিয়ে বন্দি হয়ে রয়েছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলা, মিথ্যা সাজা দিয়ে দেশের বাইরে রাখা হয়েছে। ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুম-হত্যা করা হয়েছে।

সমাবেশের সভাপতিত্ব করেছেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও সঞ্চালনা করেছেন সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না। সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানুল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ।