রিজার্ভ থেকে দেশের অভন্তরে আর বিনিয়োগ করা হবে না: গভর্নর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ইডিএফ, পায়রাবন্দর ও বিমানসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। তবে এখন থেকে দেশের অভ্যন্তরে আর এক ডলারও বিনিয়োগ করা হবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

গতকাল অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সংগঠন ইআরএফের সঙ্গে এক মতবিনিময়ে এ কথা বলেন তিনি।

চলমান অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে করণীয় নির্ধারণে অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে বৈঠকের ধারাবাহিকতায় গতকাল আমন্ত্রণ জানানো হয় ইআরএফকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন গভর্নর। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ সচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর ও প্রধান অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা। ইআরএফ সভাপতি মোহাম্মদ রেফায়েত উল্লাহ মীরধা ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে ইআরএফ প্রতিনিধিরা নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। বর্তমান সংকট মেটাতে অর্থ পাচার ও বেনামি ঋণ ঠেকাতে কঠোর পদক্ষেপ, শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকসহ পুরো ব্যাংক খাতের নজরদারি জোরদারে বিভিন্ন পরামর্শ দেন তারা।

বৈঠকে গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বিনিময় হারের ওপর ঊর্ধ্বমুখী চাপ কমানো এখনকার মূল চ্যালেঞ্জ। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দিক থেকে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এটা শুধু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর নির্ভর করে না। এখানে বাজার সিন্ডিকেট আছে। বাজার তদারকিতে ঘাটতি আছে।

তিনি বলেন, অর্থনীতিতে একটি ক্রান্তিকাল যাচ্ছে, এটা সবার জানা। তাঁর ৩৬ বছরের চাকরিজীবনে এমন পরিস্থিতি দেখেননি। একটি সময় কেবল বাজেট ঘাটতি ও বৈদেশিক লেনদেনে চলতি হিসাবের ঘাটতি নিয়ে ভাবতে হতো। এর সঙ্গে গত বছরের শেষভাগ থেকে যোগ হয়েছে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি।

গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, নির্বাচনের আগে এক ধরনের অনিশ্চয়তা থাকে। এর সঙ্গে এখন আবার হরতাল-অবরোধ যোগ হয়েছে। এক ধরনের অনিশ্চয়তা থেকে বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় শূন্যে নেমেছে। স্বল্পমেয়াদি বিদেশি ঋণ ও বাণিজ্যিক ঋণ কমেছে। আবার উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থছাড়ে দেরি করছে। তবে এসব সংকট নির্বাচনের পর কেটে যাবে। তাঁর ভাষায়, ‘আমরা এখন টানেলের শেষ প্রান্তে আছি। আলো দেখতে পাচ্ছি। আগামী বছরের জুনের মধ্যে পরিস্থিতি ভালোর দিকে যাবে। তখন আর্থিক হিসাবের উদ্বৃত্ত হবে।’

গভর্নর বলেন, আগামী ডিসেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশে এবং আগামী জুনে সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর যে লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে, তা পূরণ হবে বলে তিনি আশাবাদী। সুদহার এক ধরনের বাজারভিত্তিক হয়ে গেছে। শিগগির বিনিময় হার ব্যবস্থাও বাজারভিত্তিক হয়ে যাবে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় ডলারের দর পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে দর কোথায় গিয়ে ঠেকবে কেউ জানে না।

আব্দুর রউফ তালুকদার আরও বলেন, এটা স্বীকার করতে হবে, অর্থ পাচার খুব খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছিল। হুন্ডির মাধ্যমে যে পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে, তার চেয়ে ১০ গুণ হয়েছে বাণিজ্যের আড়ালে। তবে এলসি তদারকির মাধ্যমে এরই মধ্যে ওভার ইনভয়েসিং কমানো গেছে। তিনি বলেন, দুবাইয়ে ১৩ হাজার বাংলাদেশি কোম্পানি খুলেছে। পর্তুগালে আড়াই হাজার বাংলাদেশি নাগরিকত্ব নিয়েছে। এ ধরনের বিনিয়োগ বাংলাদেশ থেকে পাচার করেই হয়েছে। তাঁর মতে, বাণিজ্যের আড়ালে এখন পাচার অনেক কমে এসেছে। আগে প্রতি মাসে যে ৮ বিলিয়নের মতো এলসি খোলা হতো, তার দেড় বিলিয়নই ছিল ওভার ইনভয়েসিং।

তিনি বলেন, আইএমএফও বলেছে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির কাঠামো ঠিক আছে। যে কারণে দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের বিষয়ে তারা সম্মত। আগামী ১২ ডিসেম্বর আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদের সভার পরদিন ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড় হবে। তিনি জানান, আইএমএফ যেসব বিষয় রিজার্ভ হিসেবে বিবেচনায় নেয় না, তার পরিমাণ এক সময় ৮ বিলিয়ন ছিল। এরই মধ্যে তা কমিয়ে ৫ বিলিয়ন ডলারে নামানো হয়েছে। ৭ বিলিয়ন থেকে ইডিএফ কমিয়ে সাড়ে তিন বিলিয়ন ডলারে নামানো হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে বিমানকে দেওয়া ৪০ কোটি ডলার থেকে প্রতি মাসে ১ কোটি ডলার করে ফেরত আসছে। এভাবে এক পর্যায়ে এসব কিছুই থাকবে না। তখন আইএমএফের হিসাবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে কোনো পার্থক্য থাকবে না।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০