রিজার্ভ থেকে রেকর্ড সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলার বিক্রি

রোহান রাজিব: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে এক অর্থবছরে রেকর্ড ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের পুরো সময়ে রিজার্ভ থেকে সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছর শেষ হতে আরও ৪ দিন বাকি রয়েছে। তবে ঈদ উপলক্ষে আজ থেকে সরকারি ছুটি শুরু হওয়ায় গতকাল পর্যন্ত এ অর্থবছরের ডলার বিক্রির শেষ দিন ছিল। অন্যদিকে ঈদের আগে রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে রিজার্ভ বেড়ে ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, দেশের রপ্তানি, রেমিট্যান্সে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি এবং নানা নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার মাধ্যমে আমদানি কমেছে। তবে আগে নেয়া ঋণ পরিশোধের চাপ, নতুন বাণিজ্য ঋণ কমে যাওয়া এবং আশানুরূপ বিদেশি বিনিয়োগ না আসায় ডলার সংকট পুরোপুরি কাটছে না। ডলার সংকট থাকার কারণে ব্যাংকগুলো চাহিদামতো ঋণপত্র খুলতে পারছে না। তাই নিয়মিত রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করতে হচ্ছে। তবে রেমিট্যান্স গতি ফেরাতে ভবিষ্যতে ডলার সংকট কেটে যাবে বলে আশাবাদী তারা।

জানা যায়, গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি আমদানি দায় মেটাতে বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে ৮৫ দশমিক ৯৯ মিলিয়ন ডলার বিক্রি করে। এতে করে চলতি অর্থবছরের ১২ মাসে ১৩ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করা হয়। এর আগে ২০২১-২২ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বিদেশের সঙ্গে সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি বেড়ে চলতি অর্থবছরের গত এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে ৮৮০ কোটি ডলার হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৫২৯ কোটি ডলার। এ অবস্থায় কোনো ব্যাংক যেন আমদানি দায় পরিশোধে ব্যর্থ না হয়, সে জন্য রিজার্ভ কমলেও ডলার বিক্রি করে যাচ্ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে যায়।

তবে রেমিট্যান্স গতি ফেরায় আবারও রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। জ–ন মাসের ২৫ দিনে ২ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছে প্রবাসীরা। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে গত রোববার পর্যন্ত ২১ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। যা গত অর্থবছরের (২০২১-২২) পুরো সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯০ শতাংশ বেশি। গতকাল দিনশেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।

গত বছর একই সময়ে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ এক বছরে রিজার্ভ কমেছে ১০ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন ডলার।

তবে প্রকৃত রিজার্ভ আরও কম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতি আইএমএফ মানে না। কারণ রিজার্ভের অর্থে বিদেশে বিভিন্ন বন্ড, মুদ্রা ও স্বর্ণে বিনিয়োগ; রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল গঠন; বাংলাদেশ বিমানকে উড়োজাহাজ কিনতে সোনালী ব্যাংককে ধার; পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের খনন কর্মসূচিতে অর্থ দেয়া এবং শ্রীলঙ্কাকে অর্থ ধার দেয়া বাবদ খরচ ৮২০ কোটি ডলার রয়েছে, যা এখন ৬০০ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। তবে মুদ্রানীতিতে আইএমএফ ও বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমান যে পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করে, তা মেনে চলার ঘোষণা দেয়া হয়। অর্থাৎ দুই পদ্ধতিতে রিজার্ভ হিসাব করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে নিট রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ করবে না।

আইএমএফ গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জন্য ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করেছে, অন্য অনেক শর্তের মধ্যে অন্যতম শর্ত হচ্ছে জুনের মধ্যে ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ অন্তত ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারে উন্নীত করা। আইএমএফের মানদণ্ড অনুযায়ী আগামী সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের রিজার্ভ ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারের নিচে থাকতে পারবে না।

এদিকে রেমিট্যান্স বাড়ার ফলে ব্যাংকগুলোয় ডলার সরবরাহ বেড়েছে। ব্যাংকগুলোর নস্ট্রো হিসাব, বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার হিসাব ও নগদ রয়েছে ৩ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন পজিটিভ, যা ডলারের বাজারের তারল্য হিসেবে পরিচিত। গত বছরের শেষে যা ২০০ কোটি ডলারের নিচে নেমেছিল। পাশাপাশি বর্তমানে ব্যাংকগুলোর ২৪৯ মিলিয়ন ডলার ধারণের ক্ষমতা বা নেট ওপেন পজিশন লিমিট (এনওপি) রয়েছে।

আইএমএফের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে আরেকটি শর্ত ছিল ডলারের বিনিয়ম হার বাজারভিত্তিক করা। কারণ দেশে বর্তমানে ডলারের অনেকগুলো বিনিময় হার রয়েছে। এ বিষয়ে মুদ্রানীতি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান বলেন, আগামী জুলাই থেকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক হবে। তখন আর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম দরে ডলার দেবে না। বর্তমানে ব্যাংকগুলো রপ্তানিতে ১০৭ এবং রেমিট্যান্সে ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা দর দিচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক সরকারি এলসির দেনা মেটাতে ১০৬ টাকায় ডলার বিক্রি করে। জুলাই থেকে সব দরই হবে অভিন্ন।

তবে গতকাল বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে জড়িত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের জ্যেষ্ঠ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ডলারের একক অঙ্কের বিনিময় হার শুরু হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রির পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে কেনাও শুরু করেছে। গত বৃহস্পতিবার দুটি বেসরকারি খাতের ব্যাংক থেকে ৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার কিনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এটি ছিল এ অর্থবছরে বেসরকারি খাত থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেনা প্রথম ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, অর্থবছরের হিসাবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ভালো দেখাতে ব্যাংক থেকে ডলার কেনা শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত রয়েছে, জুনের মধ্যে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলারে উন্নীত করা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০