রিজার্ভ নামবে ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে

রোহান রাজিব :বাংলাদেশ ব্যাংক আগামী সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) (জুলাই-আগস্ট) সময়ের ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের আমদানি দায় পরিশোধ করবে। ফলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবারও কমবে।

গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই আমদানি বিল পরিশোধ করবে। ফলে রিজার্ভ আরও কমে যাবে। রিজার্ভ কমলেও নির্ধারিত সময়ই বিল পরিশোধ করতে হবে। কারণ চুক্তি অনুযায়ী দুই মাস পর পর এ বিল পরিশোধ করতে হয়।

আঞ্চলিক দেশগুলোর লেনদেনের নিষ্পত্তির একটি মাধ্যম হলো আকু। তেহরানভিত্তিক এ সংস্থার সদস্য দেশ হলোÑভারত, বাংলাদেশ, ভুটান, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান। সদস্য দেশগুলো প্রতি ২ মাস অন্তর অর্থ পরিশোধ করে।

আকু পেমেন্ট করার পর সাধারণত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যায়।  প্রতি দুই মাসের দায় পরবর্তী মাসের প্রথম সপ্তাহে পরিশোধ করে এসব দেশ।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের জানুয়ারিতে ১ দশমিক ১২ বিলিয়ন, মার্চে ১ দশমিক ০৫ বিলিয়ন, মে মাসে ১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন এবং জুলাই মাসে পরিশোধ করা হয় ১ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব অনুযায়ী, গত ৩০ আগস্ট বাংলাদেশের রিজার্ভ ছিল ২৩ দশমিক ০৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু আগামী সপ্তাহে আকু বিল পরিশোধের পর রিজার্ভ ২২ বিলিয়ন ডলারের নিচে নামতে পারে। এ পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে ৪ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে।

আর গত ৩০ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ২০ বিলিয়ন; যা আগের বছরের একই দিনে ছিল ৩৯ দশমিক ০৪ বিলিয়ন ডলার।

গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রবাসীরা ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন; যা এক বছর আগে পাঠানো ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ডলারের চেয়ে ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের ১ মাস ২৫ দিনে ৩ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার হয়েছিল। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় বিশ্বব্যাপী পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে বেশি পরিমাণ আমদানি বিল পরিশোধ করতে হয়। এতে রিজার্ভ কমতে থাকে।

সম্প্র্রতি অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশি কিছু উদ্যোগ নেয়ার পর আমদানি কমেছে।

আমদানি কমায় বিদায়ী অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি চলতি হিসাবের ঘাটতি কমানো গেছে। তবে আর্থিক হিসাবের ঘাটতি নতুন রেকর্ড করেছে। এর পরিমাণ ২১৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। এর আগে আর্থিক হিসাবের সর্বোচ্চ ঘাটতি ছিল ২০০৮-০৯ অর্থবছরে, সাড়ে ৮২ কোটি ডলার। বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং ঋণের প্রবাহ কমে যাওয়া এবং বেসরকারি খাতের ঋণসহ ঋণের দায় পরিশোধ বেড়ে যাওয়ার কারণেই এই ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

আর্থিক হিসাবে ঘাটতি সচরাচর দেখা যায় না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এখন পর্যন্ত পাঁচবার এই ঘাটতি হয়েছিল। রিজার্ভ নিয়ে যে বাংলাদেশ ব্যাংক হিমশিম খাচ্ছে, এর বড় কারণ এই ঘাটতি। বৈদেশিক মুদ্রায় আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হওয়াই এর মূল কারণ। এ কারণেই গত অর্থবছরে সামগ্রিক লেনদেনে ঘাটতি হয়েছে ৮২২ কোটি ২০ লাখ ডলার। এটিও বাংলাদেশের জন্য নতুন রেকর্ড।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০