নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের জন্য ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি পাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, এখন থেকে রিজার্ভ পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এ সন্তোষ প্রকাশ করেন।
মেজবাউল হক বলেন, আইএমএফের বোর্ড সভায় ইসিএফ অ্যান্ড ইএফএফ ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তার প্রথম রিভিউ সম্পূর্ণ হয়েছে। সেটা তাদের বোর্ড সভায় অনুমোদিত হয়েছে। ফলে ঋণের দ্বিতীয় কিস্তিও ছাড়ের জন্য অনুমোদিত হয়। দ্বিতীয় কিস্তিতে প্রায় ৬৯০ মিলিয়ন ডলার পাব, যা শুক্রবার রিজার্ভে যোগ হবে।
তিনি আরও বলেন, এই মাসে আমাদের ডলারের ইনফ্লো ভালো। আইএমএফের ৬৯০ মিলিয়ন ডলার, এডিবি থেকে ৪০০ মিলিয়ন, সাউথ কোরিয়ার একটা ফান্ড থেকে ৯০ মিলিয়ন ডলার এবং অন্য বিভিন্ন দাতা সংস্থা থেকে ১৩০ মিলিয়ন ডলার আসবে। সব মিলিয়ে এ মাসে রিজার্ভে যোগ হবে ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন। এ মাসে কিছু খরচ হবে। তবে আয়ের চেয়ে ব্যয় কম হ?বে। তাই রিজার্ভ কমার কারণ নেই। ডিসেম্বরে হিসাব করে বলা যাবে। তবে জানুয়ারিতে আকুর পেমেন্ট রয়েছে এক বিলিয়নের মতো। সব মিলিয়ে রিজার্ভ ভালো হবে বলা যায়।
মুখপাত্র জানান, এখন গ্রস রিজার্ভ রয়েছে ২৪ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার। বিপিএম-৬ অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ১৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ গত জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় হয়। সাত কিস্তিতে ৪২ মাসে পুরো ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে। ঋণের গড় সুদের হার ২ দশমিক ২ শতাংশ। আলোচ্য প্যাকেজে দুই ধরনের ঋণ রয়েছে। এর মধ্যে বর্ধিত ঋণ সহায়তা বা বর্ধিত তহবিল (ইসিএফ অ্যান্ড ইএফএফ) থেকে পাওয়া যাবে ৩৩০ কোটি ডলার। রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটির (আরএসএফ) আওতায় পাওয়া যাবে ১৪০ কোটি ডলার।
আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত এ ঋণ কর্মসূচি চলাকালে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ধরনের শর্ত পরিপালন ও সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। দ্বিতীয় কিস্তিতে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) আওতায় ৪৬ কোটি ৩০ লাখ ডলার এবং আরএসএফের আওতায় ২১ কোটি ৯০ লাখ ডলার ছাড় করা হয়।
এদিকে শর্ত অনুযায়ী, জুনভিত্তিক রাজস্ব সংগ্রহ এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংগ্রহ না হওয়ায় দ্বিতীয় কিস্তির অর্থছাড়ে প্রথম দিকে অনিশ্চয়তা ছিল। তবে অক্টোবরে ঢাকা সফরে আসা আইএমএফের মিশনকে সরকার ওই দুটি শর্ত পালন না হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে সক্ষম হয়। এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি থাকায় দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দেবে বলে সরকারকে তখন প্রতিশ্রুতি দেয় মিশন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিশনকে জানানো হয়, অন্যান্য শর্তের ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে দুটি শর্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে নির্বাচনের পর এ বিষয়ে জোরালো উদ্যোগ নেয়া হবে। একই কারণ দেখিয়ে জ্বালানি তেলের স্বয়ংক্রিয় মূল্য নির্ধারণে মার্চ পর্যন্ত সময় চাওয়া হয়।
অন্যান্য শর্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে গত ১৯ অক্টোবর বিবৃতিতে আইএমএফ মিশন জানায়, ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের জন্য প্রথম পর্যালোচনা শেষ করতে বিভিন্ন নীতির বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছে।