রিজার্ভ বিনিয়োগ করতে হবে ভেবেচিন্তে

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের একটি অংশ দিয়ে বিনিয়োগ তহবিল গঠন করা হবে, এমন কথা বেশ কিছুদিন ধরেই বলে আসছিলেন অর্থমন্ত্রী। গতকালের শেয়ার বিজের প্রধান প্রতিবেদন থেকে এটা প্রতীয়মান, এ-সংক্রান্ত নীতিগত সিদ্ধান্তের দিকে এগোচ্ছে সরকার। সম্প্রতি এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এবং এটা করতে বলা হয়েছে জরুরি ভিত্তিতে। এতে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট, সরকার শিগগিরই সিদ্ধান্তে আসতে চাচ্ছে রিজার্ভের অর্থ দিয়ে বিনিয়োগ তহবিল গঠনে। এ ব্যাপারে অর্থনীতিবিদদের দুই রকম অভিমত থাকলেও আমরা কিছু শর্তসাপেক্ষে একে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে চাই। মনে করি, এর মধ্য দিয়ে বিদেশের ব্যাংকে সঞ্চিত থাকা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবহারে কিছুটা অগ্রগতি লাভ করা যাবে। অলস পড়ে না থেকে তা নিয়োজিত হবে উৎপাদনশীলতায়, অন্যদিকে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত হলে গতি পাবে আমাদের উন্নয়ন।

এক্ষেত্রে কিছু বিষয় রাখতে হবে বিবেচনায়। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মালিক সরকার নয়, জনগণ। এখান থেকে অর্থ নিয়ে তহবিল গঠন করা হলে তা কত দিনের জন্য নেওয়া হবে, কোন খাতে বিনিয়োগ করা হবে, সেখান থেকে কী পরিমাণ মুনাফা পাওয়া যাবে, সহায়তাকারী দেশ বা সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া ঋণের তুলনায় সরকারের জন্য তা লাভজনক কি না প্রভৃতি দেখতে হবে ভেবেচিন্তে। এ ব্যাপারে নিকট অতীতে দেওয়া অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, মেগা প্রজেক্টগুলোয় বিনিয়োগ করা হবে এ অর্থ। বস্তুত বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো সংস্থা যখন কোনো মেগা প্রজেক্টে বিনিয়োগ করে, সেখানে তাদের এক ধরনের তদারকি থাকে। সুদও পরিশোধ করতে হয় অপেক্ষাকৃত কম। উল্লিখিত তহবিল থেকে ঋণ নিলে তার সুদের হার যে বেশি হবে, তা বলা বাহুল্য। প্রশ্ন হলো, বাড়তি সুদ সরকার কীভাবে পরিশোধ করবে? তৃতীয় পক্ষের তদারকিহীনতায় অর্থ কতটা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করা হবে, এক্ষেত্রে তা নিয়েও উঠতে পারে প্রশ্ন। যে ঋণের সুদের হার বেশি, তা ব্যবহারে দক্ষতায় ঘাটতি থাকলে মানুষ কি এটাকে স্বাভাবিকভাবে নেবে? সর্বোপরি বিনিয়োগ প্রকল্প থেকে যে ধরনের রিটার্ন আশা করা হচ্ছে, তা কাক্সিক্ষত হারে না হলে এ ঋণ বোঝা হয়ে দাঁড়াবে সরকারের জন্য। সে জন্য আমরা আশা করি, এসব বিষয়ে ভেবেচিন্তে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গেই এগোবেন নীতিনির্ধারকরা।

উল্লিখিত তহবিল থেকে ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতি হতে পারে বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশ্লেষক। তবে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে মানুষের আয় বাড়বে। এতে সমন্বয় করা যাবে মূল্যস্ফীতি। মনে রাখা দরকার, উপার্জন সক্ষমতা যদি থাকে, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ে মানুষ খুব একটা প্রশ্ন তোলে না। আর বর্তমান বাজারে এটা রয়েছে সহনীয় পর্যায়ে। যে কোনো বিনিয়োগেই ঝুঁকির বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হয় সঙ্গত কারণে। ‘সার্বভৌম সম্পদ তহবিল (সভরেন ফান্ড)’ থেকে বিনিয়োগেও যে একই ধারা অবলম্বন করতে হবে, তা বলা বাহুল্য। সেক্ষেত্রে সরকার কী পদ্ধতি অনুসরণ করবে, এটা এখনো অস্পষ্ট। আমরা চাইবো, এ তহবিল গঠনে যেসব নতুন আইন প্রণয়ন ও পুরনো আইনে সংশোধনী আনা হবে, সেখানে বিষয়টি স্পষ্ট করা হবে। সর্বোপরি নীতিনির্ধারকদের মনে রাখা দরকার, রিজার্ভের অর্থ চুরি যাওয়ায় এ নিয়ে জনমনে আছে নানা প্রশ্ন, শঙ্কা ও উদ্বেগ। এ অবস্থায় তাদের স্বস্তিতে রাখতে হলে রিজার্ভের অর্থ দিয়ে যা-ই করা হোক না কেন, তা করতে হবে দক্ষতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে। সরকার যদি এ ধারা অবলম্বন করে, তাহলে সচেতন জনসাধারণও একে নেবে স্বাভাবিকভাবে।

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০