পরবর্তী প্রজন্মের ফার্মাসিস্টদের পছন্দের কর্মক্ষেত্র

ড. মো. শাহ এমরান: বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসি বিষয়ে ডিগ্রি দেওয়া হয় বা ফার্মেসি বিষয়টি পড়ানো হয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক কোর্স পদ্ধতি আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সেমিস্টার ধরে হিসাব করলে প্রতি বছর প্রায় ছয় হাজার ফার্মাসিস্ট পাস করে বের হয়। এখন পর্যন্ত ফার্মাসিস্টদের চাকরির ক্ষেত্র শুধু ওষুধ শিল্প কারখানা। ফলে গড়ে ২০০-এর বেশি চাকরির পদ সৃষ্টি হয় না। তাহলে এসব নবীন ফার্মাসিস্ট কোথায় যাবেন? তাদের চাকরির ক্ষেত্র কোথায়? নবীন ফার্মাসিস্টদের চাকরির একটি বড় ক্ষেত্র হলো রিটেইল, ক্লিনিক্যাল ও হসপিটাল ফার্মেসি, যা আমাদের পরবর্তী প্রজšে§র ফার্মাসিস্টদের জন্য হতে পারে পছন্দের কর্মক্ষেত্র।

রিটেইল, ক্লিনিক্যাল ও হসপিটাল ফার্মেসি কী? এগুলো কীভাবে প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা করতে হয়? ফার্মাসিস্ট কীভাবে সেখানে চিকিৎসা সেবা ও ফার্মেসি সেবা দেবেন? রোগীর সঙ্গে একজন ফার্মাসিস্ট কিরূপ আচরণ করবেন? কেমন স্থানে এগুলো স্থাপন করতে হয়? কী পরিমাণ মূলধন লাগে? আবার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে কীভাবে এগুলোকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা যায়, এসব বিষয় এখানে আলোচনা করা হবে।

সে অর্থে নবীন ফার্মাসিস্টদের চাকরির চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পর্ব আকারে এ প্রবন্ধ লেখা হবে। আশা করি লেখাগুলো যাদের উদ্দেশে, তারা বিবেচনায় নেবেন এবং এ বিশালসংখ্যক শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে জনসেবায়, মানবসেবায় আত্মনিয়োগ করার সুযোগ করে দেবেন।

 

পর্ব – ১

মেয়েকে ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনতে গিয়ে ল্যাব এইড হাসপাতালের ফার্মেসি বা ওষুধের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে একজন খুচরা ওষুধ বিক্রেতার সঙ্গে আমার এ সম্পর্কে আলাপ হয়। খুচরা ওষুধ বিক্রয়কেন্দ্র, যেগুলোকে আমরা ওষুধের দোকান বা ড্রাগ স্টোর বলি, তা নিছক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নয়Ñএগুলো সেবাদানকেন্দ্রও বটে। আর যিনি সেখানে কাজ করেন, তিনি ওষুধ বিক্রেতাই নন, একজন দক্ষ ফার্মাসিস্টও বটে। সে কারণে একজন ফার্মাসিস্টকে বিপণন বিষয়ে দক্ষ এবং সেবামূলক মানসিকতাসম্পন্নও হতে হবে। আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, ‘বাণিজ্যে বসত করে লক্ষ্মী’।

তাই ওষুধ দোকানে কয়েকটি বিষয় নিশ্চিত করতে হবে:

ক. ব্যবস্থাপত্র নিয়ে আসা ক্রেতা বা রোগীর প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। তাকে বসতে বলতে হবে। অপেক্ষমাণ কোনো ক্রেতা থাকলে কতক্ষণ লাগতে পারে, তা পরে আসা ক্রেতাকে জানাতে হবে। অর্থাৎ ক্রেতাদের জন্য একটা বসার নির্দিষ্ট জায়গা থাকতে হবে।

খ. ক্রেতা যেখানে বসবেন, তা আরামদায়ক হতে হবে। আমাদের সংস্কৃৃতি হলো বিক্রেতাদের মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছে। কিন্তু ক্রেতা ঘামছেন। এ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খুচরা ওষুধ বিক্রির দোকানে এয়ারকন্ডিশনার থাকলে তো আরও ভালো।

গ. ক্রেতাকে সেবা দিতে দেরি হতে পারে। তা যেন ক্রেতার জন্য বিরক্তিকর না হয়, সে জন্য কিছু পত্র-পত্রিকা, স্বাস্থ্যবিষয়ক পত্রিকা, সাময়িকী রাখা যেতে পারে। আর সেগুলো যেন বাংলায় হয়।

ঘ. সম্ভব হলে একটা টয়লেট বা ওয়াশরুম থাকতে পারে। এটি মানুষের সার্বজনীন প্রয়োজন।

ঙ. বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকলে ভালো হয়। বিদেশে চা বা কফির ব্যবস্থা থাকে।

চ. নতুন রোগীর এরকম কিছু ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যেমন একটা টিসু বক্স, একটা ছোট প্যাড, একটা কলম, রোগীর সঙ্গে শিশু থাকলে তাদের জন্য চকোলেট বা ভিটামিন ট্যাবলেট প্রভৃতি।

ছ. কিছু সেবার কথা ছোট ব্যানার আকারে সহজে গ্রাহকের দৃষ্টি গোচর হয়, এমন জায়গায় টানিয়ে দিতে হবে। যেমন জš§ নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী, নারীদের স্যানিটারি সামগ্রী, মেডিকেটেড কসমেটিকস, ডেন্টাল সামগ্রী, ছোট-খাটো মেডিক্যাল ডিভাইস, শিশুদের ডায়াপারের তালিকা প্রভৃতি।

জ. বিশেষ স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। যেমন, শিশুদের ইনহেলার দেওয়ার মেশিন, ডায়বেটিস রোগীদের ব্লাড সুগার মাপার মেশিন, রোগীদের জন্য ব্লাড প্রেশার মাপার মেশিন প্রভৃতি।

ঝ. রোগীদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য একটা আলাদা কক্ষ থাকতে পারে।

ঞ. সবচেয়ে বড় কথা এমন যেন কখনও না হয়, ‘রোগী বা ক্রেতা ওষুধ না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন’। অর্থাৎ পর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধ মজুদ রাখতে হবে। সম্ভব হলে ক্রেতার সম্মতি নিয়ে পাশের কোনো ফার্মেসি থেকে তা এনে দেওয়া কিংবা কোথায় পাওয়া যাবে, তা জানিয়ে দেওয়া।

 

লেখক: অধ্যাপক, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগ

ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়্র

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০