রিভিউ আবেদন খারিজ ভাঙতেই হবে বিজিএমইএ ভবন

নিজস্ব প্রতিবেদক: তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারকদের সমিতির (বিজিএমইএ) বহুতল ভবন ভাঙার নির্দেশ সংক্রান্ত আপিলের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ।

গতকাল রোববার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন। এর প্রতিক্রিয়ায় বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মুহিউদ্দিন জানিয়েছেন, আদালতের রায়কে মেনে নিয়ে অন্যত্র সরে যাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। গতকাল আদালতে বিজিএমইএ’র পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী, সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। বিজিএমইএ ভবন অন্যত্র সরাতে কত দিন সময় লাগবে, তা জানিয়ে আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে একটি আবেদন দিতে বলা হয়েছে আপিল বিভাগের আদেশে। বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত আবেদন দাখিলের পর পরবর্তী আদেশ দেওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ’র পক্ষের আইনজীবী ইমতিয়াজ মইনুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আদালত রিভিউ আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। তবে ভাঙার জন্য ওই ভবন খালি করতে কতদিন সময় দরকার, আদালত সে বিষয়ে আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন। আমরা মৌখিকভাবে তিন বছর সময় চেয়েছি। আদালত বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ বিষয়ে লিখিতভাবে আবেদন করতে বলেছেন। সেই দিনই সময় আবেদনের বিষয়ে আদালত আদেশ দেবেন।’

জানা যায়, রাজউকের অনুমোদন ছাড়া বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ বিষয়ে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি আদালতের দৃষ্টিতে আনেন সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মুনিরউদ্দিন। পরদিন ৩ অক্টোবর হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে একটি রুল জারি করেন। রুলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। সেই রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) ও বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ বিজিএমইএ ভবন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

হাইকোর্ট রায়ে বলেছিলেন, ‘বিজিএমইএ ভবনটি সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যান্সারের মতো। এ ধ্বংসাত্মক ভবন অচিরেই বিনষ্ট না করা হলে এটি শুধু হাতিরঝিল প্রকল্পই নয়, সারা ঢাকা শহরকে সংক্রমিত করবে।’ রায়ে আরও বলা হয়, বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে, দাবি পাওয়ার এক বছরের মধ্যে তাদের টাকা ফেরত দিতে হবে। পরে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে ২০১১ সালের ৫ এপ্রিল আবেদন করে বিজিএমইএ।

২০১৬ সালের ২ জুন ওই আবেদনটি খারিজ করে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ। একই বছর ৮ নভেম্বর আপিলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। রায়ে বিজিএমইএকে অবিলম্বে ভবন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হয়। অন্যথায় রাজউককে ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে বলা হয়। রাজউক ভাঙলেও বিজিএমইএকে ভবন ভাঙার খরচ বহন করতে হবে বলে আদালত রায়ে বলেছিলেন।

রায়ের অনুলিপি প্রকাশের এক মাসের ব্যবধানে রিভিউ করে বিজিএমইএ। গত ২ মার্চ শুনানির জন্য কার্যতালিকায় ছিল ওই রিভিউ আবেদনটি। রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের প্রেক্ষাপটে সেদিন এ বিষয়ে শুনানি হয়নি। পরে গতকাল রোববার আবেদনটির ওপর শুনানি হয় এবং শুনানি শেষে আপিল বিভাগ তা খারিজ করে দেন। এ রায়ের পর ভবন ভাঙার ঠিকাতে আর কোনো আইনি পদক্ষেপ বাকি নেই বলে আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

পরে এ প্রসঙ্গে অভিমত দেন এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি ও বিজিএমএই’র সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে কেনিয়ার বাণিজ্য প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা সিরিয়াসলি প্লট দেখছি। আমাদের বিজিএমইএ নেতারা এ বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। উত্তরা এবং পূর্বাচলে জমি দেখছেন তারা।’

আদালতের রায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘স্বাধীন বিচার ব্যবস্থার রায়কে আমরা শ্রদ্ধা করি। তাই, বিজিএমইএ ভবন সরানো হবে। তবে এর জন্য আমাদের প্রয়োজনীয় সময়ের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত। নতুন ভবন করে সেখানে যাওয়ার মতো প্রয়োজনীয় সময় চেয়েছি আমরা। এ ব্যাপারে সরকার আমাদের সক্রিয় সহযোগিতা করছে।’

উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৮ সালে বিজিএমইএ তাদের প্রধান কার্যালয়ের ভবন নির্মাণের জন্য সোনারগাঁও হোটেলের পাশে বেগুনবাড়ী খালপাড়ের ওই জায়গাটি নির্ধারণ করে। পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কাছ থেকে ৫ কোটি ১৭ লাখ টাকায় জমিটি কেনে। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ভবনটি তৈরির কাজ শুরু হয়। ভবনটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্মাণকাজ শেষে ২০০৬ সালের অক্টোবরে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ভবনটির উদ্বোধন করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০