ক্রেতা-গ্রাহকদের বিনিয়োগ যাতে নিরাপদ হয়, সে জন্য রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-রিহ্যাবের প্রয়াস প্রশংসনীয়। ‘আবাসনে আপনার বিনিয়োগ নিরাপদ হোক’ শীর্ষক প্রচারপত্রে বলছে, প্লট বা ফ্ল্যাট কেনার আগে অবশ্যই বিস্তারিত জেনে নিন। নানাভাবে ক্রেতাদের সতর্ক করছে। যেমন প্লট বা ফ্ল্যাট বুকিংয়ের আগে যাচাই করুন রাজউক, চউক, কেডিএ, আরডিএ ও কউক কর্তৃক অনুমোদিত কি না। সদস্য ডেভেলপার, ভূমি মালিক ও ফ্ল্যাট-প্লট ক্রেতাদের সঙ্গে মতবিরোধ হলে আপস-সমঝোতায় নিষ্পত্তির জন্য মেডিয়েশন অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস সেলে দরখাস্ত করুন।
ক্রেতাদের সেবায় এমন উদ্যোগ সাধারণ মানুষের আস্থা অর্জনে সহায়তা করছে, সন্দেহ নেই। এ অবস্থায় গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘মনোনয়নপত্র সংগ্রহে বাধা: পাতানো নির্বাচনের দিকে হাঁটছে রিহ্যাব’ শীর্ষক প্রতিবেদন সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মীই বলা চলে। খবরের সারমর্ম হলো বর্তমান কার্যনির্বাহী পরিষদ ২০১৪ সাল থেকে ক্ষমতায়, আবার ক্ষমতায় আসতে চাচ্ছে। তবে ভোটে নয়, জোর করে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় রিহ্যাব নেতারা একতরফা নির্বাচন করে জিততে চাইছেন। তারা অন্যদের মনোনয়নপত্র সংগ্রহে করতে বাধার সৃষ্টি করছেন। এতে প্রতীয়মান হয়, সংগঠনটিতে জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা নেই। সাধারণ মানুষ কী করে বুঝবেন তাদের ফ্ল্যাট-প্লট ব্যবসায় স্বচ্ছতা রয়েছে।
আমরা মনে করি, যে কেউ প্রার্থী হতে পারেন। সুষ্ঠু ভোটে যিনি জিতে আসবেন, তিনিই গ্রহণযোগ্য। সুষ্ঠু ভোটে কখনোই অযোগ্য অসৎ ব্যক্তি নির্বাচিত হবেন না। ‘ডেভেলপার কোম্পানিগুলোর উন্নয়নে বাধা দিতে, কিছু লোক মনোনয়নপত্র কেনার নামে হট্টগোল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন’Ñএ বক্তব্য হয়তো সত্য। কিন্তু একজন সদস্য উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে যাবেন কেন। উন্নয়ন না হলে তিনিও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তাছাড়া সদস্যরা ‘উন্নয়নবিরোধী’কে ভোট দেবেন কেন। সভাপতির কথায় কর্তৃত্ববাদী মনোভাব ফুটে উঠেছে। এটি সাংগঠনিক চেতনা নয়।
রিহ্যাব সদস্য নয়, এমন কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্লট-ফ্ল্যাট কিনে প্রতারিত হলে দায় নেয় না সংগঠনটি। অ-সদস্যদের কোনো দায় নেবে না, এটি অন্যায্য নয়; বরং এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু অ-সদস্যরাই কেবল অপকর্ম করে, এমন ধারণা পোষণ করা বোধ করি সঠিক নয়। বিভিন্ন সময় নানা অপকর্মে-প্রতারণায় রিহ্যাব সদস্যদের সংশ্লিষ্টতার কথা সামনে এসেছে।
সংগঠনটির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ‘আবাসন খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে রিহ্যাবের সদস্যপদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক’ করেছে। আবাসন আমাদের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত। এ খাতে বিনিয়োগ করলে বিনা প্রশ্নে কালোটাকা সাদা করা যায়, বিভিন্ন ধরনের করও ছাড় পাওয়া যায়। কভিডকালেও আবাসন খাত রমরমা। উদ্যোক্তাদের উৎসাহ-প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে, এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়ছে। তাই বলে অপকর্ম-অরাজকতাকে প্রশ্রয় দেয়ার সুযোগ নেই। আমরা আশা করি, নির্বাচনের মাধ্যমে রিহ্যাবে যোগ্য ব্যক্তিরা কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হবে। সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনে বর্তমান নেতারাও পুনর্নির্বাচিত হতে পারেন। সংগঠনের সুনাম রক্ষায় সবাই দায়িত্বশীল হবেন বলেই আমাদের প্রত্যাশা।