Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 11:59 am

রীড ফার্মার ভেজাল ওষুধে ২৮ শিশুর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। গতকাল বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল হক এ তথ্য অবহিত করেন। বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন ওষুধ প্রশাসনের সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপপরিচালক আলতাফ হোসেন।

এর আগে ২৩ আগস্ট স্বাস্থ্য সচিবের দেওয়া এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে তাকে বৃহস্পতিবার হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার আদেশ দেন। আদালত শিশুমৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে গাফিলতি করা দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য সচিবকে তলব করেছিলেন। আদালতে তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। আর রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

আদালতপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আদালতের রায়ে ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে অবহেলার বিষয়টি উঠে আসার পর তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছেÑতা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জানতে চেয়েছিলেন হাইকোর্ট।

ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে সচিবের দেওয়া ব্যাখ্যা বুধবার গ্রহণ না করে সচিবকে ফের ব্যাখ্যা দিতে বলেছিলেন আদালত। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো হাজির হয়ে আদালতে ব্যাখ্যা দেন সিরাজুল হক।

মনজিল মোরসেদ বলেন, স্বাস্থ্য সচিব সিরাজুল হক আদালতে হাজির হয়ে বলেছেন, ওষুধ প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপপরিচালক আলতাফ হোসেনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই মামলার রায়ে গত বছরের নভেম্বরে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান। বাকি চার আসামি হলেনÑমিজানুরের স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আবদুল গনি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে রীড ফার্মার বিষাক্ত প্যারাসিটামল সিরাপ পানে কিডনি নষ্ট হয়ে ২৮ শিশু মারা যায়। কারখানায় ভেজাল ও নিম্নমানের প্যারাসিটামল তৈরির অভিযোগ এনে ২০০৯ সালের ১০ আগস্ট ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তত্ত্বাবধায়ক শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, রীড ফার্মার টেমসেট সিরাপ (প্যারাসিটামল) ও নিডাপ্লেক্স সিরাপ (ভিটামিন বি কমপ্লেক্স) খেয়ে কিডনি অকেজো হয়ে শিশু মারা গেছে মর্মে ২০০৯ সালের ২১ জুলাই কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওষুধ প্রশাসন পরিদফতর জনস্বার্থে ওই ওষুধ সেবন থেকে বিরত থাকতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। শিশু হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এমআর খান ও বিএসএমএমইউ’র সাবেক ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মোয়াজ্জেম হোসেন এবং এইচএসকে আলম ওই দুটি সিরাপের নমুনা সংগ্রহ করে ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করান।

২৯ জুলাই ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবরেটরি পরীক্ষার রিপোর্টে বলা হয়, এগুলোতে ক্ষতিকর ডাই-ইথাইলিন গ্লাইকল মেশানো হয়েছে, যা মূলত প্লাস্টিক বা চামড়ার রঙের থিনার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এগুলো মানুষের দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এই প্যারাসিটামল পান করে শিশু মারাও গেছে। মামলার পর আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। মিজানুর রহমান ওই বছরের ১২ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করলে ঢাকা মহানগর দায়রা আদালত তাকে কারাগারে পাঠান।