রীড ফার্মার ভেজাল ওষুধ: স্বাস্থ্য সচিবের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট

শেয়ার বিজ ডেস্ক: রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে ২৮ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য সচিবের ব্যাখ্যা গ্রহণ করেননি হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য সচিব মো. সিরাজুল হক খানকে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে আজ বৃহস্পতিবার আবারও আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গতকাল বুধবার আদালতে হাজির হন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সিরাজুল হক খান। তার পক্ষে আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী ঘটনার ব্যাখ্যায় বলেন, ‘ব্যবস্থা নেওয়ার আগে শোকজ, তদন্তÑএসব আছে। আমরা ব্যাখা তৈরি করার জন্য সময় পাইনি। আমাদের সময় দরকার।’ বিচারক তখন বলেন, ‘আগামীকাল যথাযথভাবে ব্যাখ্যা দেবেন। ৭৬ শিশু মারা গেল। আপনার (সচিব) ছেলেমেয়ে এখানে থাকে না। যারা মারা গেছে, এরা তো মরার জন্য জšে§ছে! এটা দুর্ভাগ্যজনক। এদেশ গরিব হতে পারে। এভাবে শিশুরা মারা যাবে, এ শিক্ষা তো কাউকে দেওয়া হয়নি।

বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। উল্লেখ্য, রীড ফার্মার ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ সেবনের পর ২০০৯ সালের জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে ২৮টি শিশুর মৃত্যু হয়। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম ওই ঘটনায় ঢাকার ড্রাগ আদালতে একটি মামলা করেন, যাতে রীড ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলার রায়ে গত বছর নভেম্বরে পাঁচ আসামির সবাই খালাস পেয়ে যান। বাকি চার আসামি হলেনÑমিজানুরের স্ত্রী কোম্পানির পরিচালক শিউলি রহমান, পরিচালক আবদুল গণি, ফার্মাসিস্ট মাহবুবুল ইসলাম ও এনামুল হক। তখন ঢাকার ওষুধ আদালতের বিচারক আতোয়ার রহমান ওই রায়ে বলেন, মামলার বাদী ও তদন্ত কর্মকর্তা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের তখনকার সহকারী পরিচালক শফিকুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেনের ‘অযোগ?্যতা ও অদক্ষতার কারণে’ রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যরথ হয়েছে।

আদালতের ওই রায় আসার পরও ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পদে থাকার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ হাইকোর্টে একটি আবেদন করলে গত ১৬ মার্চ হাইকোর্ট রুল জারি করেন। ওষুধ প্রশাসনের ওই দুই কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে। স্বাস্থ্য সচিব ও ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালককে এর জবাব দিতে বলা হয়। ওই রুলের প্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১১ জুলাই হাইকোর্টে একটি প্রতিবেদন দেয়, সেখানেও ওই দুই কর্মকর্তার অবহেলার প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়। এরপর তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চেয়ে আরেকটি সম্পূরক আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ। এরপর ওই ?দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা গত ৩ আগস্ট জানতে চান হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য সচিব এক প্রতিবেদনে আদালতকে জানান, ওই দুই কর্মকর্তাকে সতর্ক করা হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন একটি আবেদন করেন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের মনজিল মোরসেদ। সেই আবেদেনের ভিত্তিতেই ২১ আগস্ট স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবকে তলব করা হয়। আদালতে আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। সচিবের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী। এ প্রসঙ্গে মনজিল মোরসেদ বলেন, স্বাস্থ্যসেবা সচিব সিরাজুল হক আদালতে হাজির হয়ে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা আদালত গ্রহণ করেননি। ফলে ওষুধ প্রশাসনের দুই কর্মকর্তার অদক্ষতা ও অযোগ্যতার বিষয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কেন গ্রহণ করা হয়নি, সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার আবার তাকে যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০