রুগ্ণ কোম্পানিগুলো বাজারে প্রতারণার ফাঁদ পাতছে

২০১০ সালের পর পুঁজিবাজারে যতগুলো কোম্পানি এসেছে তাদের অধিকাংশের অবস্থাই বর্তমানে খারাপ। আর পুঁজিবাজারের ভালো-খারাপ অবস্থানির্ভর করে বাজারে যে ইস্যুগুলো আছে তার ওপর। মানে ভালো শেয়ারের সরবরাহ থাকলে চাহিদাও বেশি থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমরা দেখেশুনে রুগ্ণ কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে এসে প্রতারণার ফাঁদ পেতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বহারা করছি। বিনিয়োগকারীদের এখন ভালো ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য দাবি তোলা উচিত। যাতে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানিগুলো আসে এবং বাজারের গভীরতা বাড়ে। কোনো কোম্পানিকে স্থগিত বা তালিকাচ্যুত করা হলেও যে কারণে এটি করা হয়েছে বা এর পেছনে যারা জড়িত তাদের কিছু করা হয় না। এতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের গ্রন্থনা, সম্পাদনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন ইআরএফ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম দিলাল এবং আইসিএবির ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হোসেন, এফসিএ।
সাইফুল ইসলাম দিলাল বলেন, ২০১০ সালের পর থেকে পুঁজিবাজারে যতগুলো কোম্পানি এসেছে তাদের অধিকাংশের অবস্থাই বর্তমানে খারাপ। আর পুঁজিবাজারের ভালো-খারাপ অবস্থা নির্ভর করে বাজারে যে ইস্যুগুলো আছে তার ওপর। মানে বাজারে ভালো সরবরাহ থাকলে ভালো চাহিদাও থাকবে এবং এটাই স্বাভাবিক। আসলে বাজারে আমরা দেখেশুনে রুগ্ণ কোম্পানিগুলোকে নিয়ে এসে প্রতারণার ফাঁদ পেতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সর্বহারা করছি। কাজেই পুঁজিবাজারে খারাপ কোম্পানিগুলোকে এনে বাজার ভালো করা যাবে না। এখানে কোম্পানি আনার ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থার অধিক সচেতন হতে হবে। আর এটি দেখার দায়িত্ব বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি)। বাজারে এলে নিয়ন্ত্রক সংস্থার যা করা দরকার তা করছে না কিন্তু যা না করলেও হয় সেদিকে তাদের মনোযোগ বেশি। মানে ব্যাপারটি এমন যে, কিছু করে মানুষকে দেখানো দরকার তাই তারা করছে। দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে তারা কিছু করছে না। বাজারে এখন বিনিয়োগকারীদের ভালো ও রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলোকে তালিকাভুক্ত করার জন্য দাবি তোলা উচিত। যাতে পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানিগুলো আসে এবং বাজারের গভীরতা বাড়ে। তাছাড়া ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বাজারে যে কোম্পানিগুলো এসেছে তাদের ইপিএস ও আর্থিক অবস্থার যে দশা তার বিরুদ্ধে যদি কথা না বলা যায় তাহলে পুঁজিবাজারে স্বাভাবিক অবস্থা কখনোই আসবে না। তাই এ বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় আনা দরকার বলে মনে করি।
মাহমুদ হোসেন বলেন, বাজারের দায়িত্ব যাদের ওপর আছে তাদের মধ্যে কারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে এবং কে তার কাজটি সঠিকভাবে করল না তা খুঁজে বের করার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রক সংস্থার আছে। কিন্তু তা না করে বিনিয়োগকারীরা যদি হঠাৎ শোনে, বাজার থেকে কোনো কোম্পানিকে স্থগিত বা তালিকাচ্যুত করা হয়েছে অথচ যে কারণে এটি করা হয়েছে তার পেছনে যারা জড়িত ছিল তাদের কিছু করা হয়নি। তখন বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা থাকবে না এবং তা না থাকাটাই স্বাভাবিক। আর এ বিচারহীনতার সংস্কৃতি যত দিন বাজারে থাকবে ততদিন বিনিয়োগকারীদের বাজারের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে না। তাছাড়া পুঁজিবাজারে রুগ্ণ কোম্পানিগুলোর অডিট করে চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টরা এবং সব ক্ষেত্রে তাদেরই দোষী করা হয়। কারণ সিএফও যিনি থাকেন তিনি কোম্পানির লোক। আর তিনি যে হিসাব তৈরি করে দেন ফার্মগুলোর কাছে সেগুলোর ওপরেই আমাদের কাজ করতে হয়। তাহলে কেন সিএফওদের ও মার্চেন্ট ব্যাংকারদের দোষী করা হবে না? এখানে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বড় গ্রুপসহ সব কোম্পানির মালিক ও শীর্ষ কর্মকর্তারাই কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করে। সেখানে একজন পেটি সিএফওর ব্যবস্থাপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাওয়া কতটা সম্ভব? তাকে শীর্ষ পর্যায় থেকে যা বলা হবে সেভাবেই কাজ করতে বাধ্য। ফলে নিজের সুরক্ষার জন্য তার কিছু করার থাকে না।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০