ক্রীড়া প্রতিবেদক: বাংলাদেশের ক্রিকেটে যোগ হলো আরও একটি কেলেঙ্কারির অধ্যায়। রুবেল হোসেন, শাহাদাত হোসেনের পর এবার মাঠের বাইরের কাণ্ডে জেলহাজতে যেতে হলো আরাফাত সানিকে।
তথ্যপ্রযুক্তি আইনে নাসরিন সুলতানা নামে এক তরুণীর মামলায় গ্রেফতার ক্রিকেটার আরাফাত সানিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একদিনের পুলিশ রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত।
তরুণীর মামলা দায়েরের পর সানির গ্রেফতার এবং এ প্রসঙ্গে ছড়িয়ে পড়া সব খবরই পর্যবেক্ষণ করছে বিসিবি। মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস গতকাল জানান, ‘দেখুন, এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। সবচেয়ে বড় কথা, মাঠের বাইরের ব্যাপারগুলো ক্রিকেটারদের ক্যারিয়ারে বেশ প্রভাব ফেলে। শৃঙ্খলা শুধু স্টেডিয়াম সীমানার মধ্যে থাকলেই হয় না। ব্যক্তিগত জীবনেও সেটা ধরে রাখতে হয়। কিন্তু যারা সেটা ধরে রাখতে পারে না, তারা এক সময় ঝরে পড়ে।’
গত ৫ জানুয়ারি সানির বিরুদ্ধে নাসরিন সুলতানা নামে ২৩ বছর বয়সী এক তরুণী মামলাটি করেন। এরপরই শুরু হয় পুলিশের গোপন তদন্ত। জানা যায়, সেখানে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেছে বলেই গ্রেফতার হয়েছেন তারকাখ্যাতি পাওয়া এই ক্রিকেটার। পুলিশের কাছে করা ওই তরুণীর অভিযোগপত্রে বলা হয়েছেÑ‘সাত বছর আগে পরিচয়ের সূত্র ধরে দুজনের ঘনিষ্ঠতা হয়। এক পর্যায়ে আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে গত ৪-১২-২০১৪ সালে উভয়ের অভিভাবককে অবহিত না করে বিয়েবন্ধনে আবদ্ধ হই।’
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, বিয়ের পর থেকেই বউ হিসেবে তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছিলেন নাসরিন। কিন্তু সানি স্ত্রীকে ঘরে না তুলে উল্টো ব্ল্যাকমেইল করেন। এ কারণেই মামলার পথে হেঁটেছেন তিনি।
অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল সকাল ৮টার দিকে আমিনবাজারের বাসা থেকে পুলিশ আরাফাত সানিকে গ্রেফতার করে বলে মোহাম্মদপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জানে আলম মুন্সী সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন। তবে সানির মা নার্গিস আক্তার মোহাম্মদপুর থানার সামনে গতকাল সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তার ছেলে কোনো অপরাধ করেনি। টাকার লোভে ওই মেয়ে তাকে (সানিকে) ‘ফাঁসানোর’ চেষ্টা করছে। ওই তরুণী সানির সঙ্গে বিয়ের দাবি করলেও কোনো কাবিননামা দেখাতে পারেননি বলে দাবি করছেন তিনি।
সানির আগে ২০১৫ সালের ৫ অক্টোবর শিশু গৃহকর্মী নির্যাতন মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করেন জাতীয় দলের পেসার শাহাদাত হোসেন রাজীব। তার আগেরদিন গ্রেফতার হন রাজীবের স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্য। গত বছরের ৬ নভেম্বর মামলায় ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন রাজীব ও তার স্ত্রী জেসমিন জাহান নিত্যকে বেকসুর খালাস দেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব–্যনাল। একই বছর অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপির করা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় গ্রেফতার হন আরেক পেসার রুবেল হোসেন। ডানহাতি এই পেসারের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং ধর্ষণের অভিযোগ আনেন হ্যাপি। পরে প্রতারণার পাল্টা অভিযোগ আনেন রুবেল হোসেনও। শেষ পর্যন্ত মামলাটি প্রত্যাহার করে নেন হ্যাপি নিজেই।
২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় সানির। দেশের হয়ে সবশেষ খেলেছেন গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। ওই সময় অবৈধ বোলিং অ্যাকশনের কারণে তাসকিন আহমেদের সঙ্গে তাকেও নিষিদ্ধ করে আইসিসি। এরই মধ্যে নিজের বোলিং অ্যাকশন ঠিক করেছেন এই বাঁহাতি। যদিও এখনও তার ফেরা হয়নি জাতীয় দলে। গত বছরের শেষদিকে রংপুর রাইডার্সের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেন তিনি। শ্রীলঙ্কার দিনুকা হেতিয়ারাচ্চির পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে শূন্য রানে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি আলোচনাতেও এসেছিলেন। এবার আবারও এলেন আলোচনায় কেন্দ্রবিন্দুতে। তবে মাঠের বাইরের এ ঘটনা তার ক্যারিয়ারে বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। সন্দেহ নেই, এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না আরাফাত সানির।
Add Comment