প্রতিনিধি, নোয়াখালী: নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভোটের রাতে চল্লিশোর্ধ এক নারীকে দলবেঁধে ধর্ষণ ও নির্যাতনের দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক ফাতেমা ফেরদৌস গতকাল সোমবার আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সহকারী কৌঁসুলি (এপিপি) সালেহ আহমদ সোহেল খান জানান, আসামিদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। যাদের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে, জরিমানা না দিলে তাদের আরও দুই বছর কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
রায়ে বিচারক বলেন, সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত প্রচার সম্পাদক ও সাবেক ইউপি সদস্য রুহুল আমিন এবং মো. হাসান আলী বুলুর প্রত্যক্ষ ইন্ধনে এবং অংশগ্রহণে ধর্ষণের ওই ঘটনা ঘটে।
আসামিদের মধ্যে মো. রুহুল আমিন, মো. হাসান আলী বুলু, মো. সোহেল, স্বপন, ইব্রাহিম খলিল, আবুল হোসেন আবু, মো. সালাউদ্দিন, মো. জসিম উদ্দিন, মো. মুরাদ ও মো. জামাল ওরফে হেঞ্জু মাঝির সর্বোচ্চ সাজার রায় হয়েছে।
আর মো. হানিফ, মো. চৌধুরী, মো. বাদশা আলম বসু, মোশারফ ও মো. মিন্টু ওরফে হেলালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
দণ্ডিতদের মধ্যে মো. মিন্টু ওরফে হেলাল ঘটনার পর থেকেই পলাতক। বাকিদের রায়ের জন্য কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জেলা জজ আদালতের হাজতখানায় আনা হয় সকালে। তখন হাজত প্রাঙ্গণে ভিড় করে আসামিদের স্বজনদের কান্নাকাটি করতে দেখা যায়।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের দিন রাতে উপজেলার মধ্যবাগ্যা গ্রামে চল্লিশোর্ধ ওই নারীর ঘরে ঢুকে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে তাকে দলবেঁধে ধর্ষণ ও নির্যাতন করা হয়।
চার সন্তানের ওই জননীর অভিযোগ ছিল, ভোটকেন্দ্রে কয়েকজন ব্যক্তির সঙ্গে বাকবিতণ্ডার জেরে ওই ঘটনা ঘটানো হয়। সে সময় ওই ঘটনা নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় হয়। ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নামে বিভিন্ন সংগঠন।
পরদিন ওই নারীর স্বামী বাদী হয়ে চরজব্বার থানায় মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিনসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ।
এ মামলায় ২৩ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ ছাড়া আসামিপক্ষ চারজন সাফাই সাক্ষী উপস্থাপন করে। গত ২৯ নভেম্বর অধিকতর যুক্তিতর্ক শেষে ১৬ জানুয়ারি রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক। তবে পরে রায় পিছিয়ে ৫ ফেব্রুয়ারি নতুন তারিখ ধার্য করা হয়।