প্রতিনিধি, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ): নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় টানা তিন সপ্তাহ ধরে চলছে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা। প্রতিদিন ঘটছে হামলা, মারধর, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, বোমা ও গুলিবর্ষণের ঘটনা। বহিরাগত সন্ত্রাসীরা সেখানে এক সন্ত্রাসীর পক্ষ নিয়ে তাণ্ডব চালাচ্ছে। সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। এজন্য বসানো হয়েছে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প।
উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামে ঘটছে এসব ঘটনা।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী আর সেখানকার বাসিন্দারা জানান, গত ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানকার ১নং ওয়ার্ড থেকে মেম্বার পদে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে হেরে যান রূপগঞ্জের অন্যতম সন্ত্রাসী ও মোশা বাহিনীর প্রধান মোশারফ। এরপর থেকে হারের বদলা নিতে গ্রামে একের পর এক তাণ্ডব চালাচ্ছে। বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীর (বীর প্রতীক) সরাসরি তার পক্ষ নেয়ায় মোশারফ হয়ে উঠেছেন আরও বেপরোয়া।
গত তিন সপ্তাহ ধরে টানা সংঘর্ষ চলছে নাওড়ায়। গ্রামবাসীও মোশারফের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছেন সশস্ত্র প্রতিরোধ। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে মোশা বাহিনীর সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয় গ্রামবাসীর। এ সময় মোশা বাহিনীর দুটি বাড়ি আর গ্রামের আরও ৪টি বাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। মোশা বাহিনীর হামলায় আহত হন অন্তত ১২ জন। এসব ঘটনা পরিদর্শনে গত বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে যান বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী (বীর প্রতীক)। এ সময় তিনি সরাসরি মোশারফ ও লোকজনের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শন করে ক্ষতিপূরণ দেন। গ্রামবাসী বারবার অনুরোধ করলেও গ্রামের লোকজন তার প্রতিপক্ষ রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের অনুসারী দাবি করে মন্ত্রী গ্রামের অন্য কোনো ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পরিদর্শন করেননি। খোঁজ নেননি আহত ব্যক্তিদের। মন্ত্রীর এমন আচরণে ক্ষুব্ধ সেখানকার মানুষ।
এলাকাবাসী জানান, রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত। এর পক্ষে মন্ত্রী গাজী আর তার ছেলে পাপ্পা ও অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম। রফিককে কোণঠাসা করতে মন্ত্রী সন্ত্রাসী মোশারফের পক্ষ নিয়ে কায়েতপাড়ার সংঘাতকে উস্কে দিচ্ছেন বলে দাবি তাদের। এ কারণে গত ২০ দিনেও থামেনি কায়েতপাড়ার নাওড়া গ্রামের সংঘাত। সে এলাকা যেন এখন আতঙ্কের নগরী। অন্য এলাকার কোনো মানুষ সেখানে প্রয়োজন হলেও যাচ্ছেন না। হামলা আর গ্রেপ্তার আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক মানুষ।
এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (গ-অঞ্চল) আবির হোসেন বলেন, নাওড়া গ্রামের শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার স্বার্থে পুলিশ, র্যাব আর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাতদিন সেখানে পরিশ্রম করছে। এসব হামলা সংঘর্ষে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। নাওড়ায় একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করেছি। আমরা সংঘাত থামানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাচ্ছি।