আবদুর রহিম, নারায়ণগঞ্জ: রূপগঞ্জে গাজী গ্রুপের গাজী টায়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় শতাধিক মানুষ নিখোঁজ হওয়ার খবর চাউর হয়েছে সর্বোত্র। এরপর থেকে গাজী টায়ারের সামনে নিখোঁজদের সন্ধানে স্বজনরা ভীর করতে শুরু করেন। সকাল থেকে নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানের দাবীতে কেউ ছবি নিয়ে,কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি নিয়ে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কারখানার সামনে অবস্থান নিয়েছেন। নিখোঁজ স্বজনদের ফিরে পেতে আহাজারি করছেন অনেকে।
গাজী টায়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে নিখোঁজ মাসুদ রানা। তাঁর খোঁজে মা রেহানা বেগম সকাল থেকে অপেক্ষা করছে। তাঁর দাবী অগ্নিকাণ্ডের পর থেকে তার ছেলে নিখোঁজ। তাঁর পাশে আহাজারি করতে দেখা গেছে মাসুদ রানার অন্য স্বজনদেরও। কারখানার সামনে জন্মনিবন্ধনের ফটোকপি নিয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করতে দেখা গেছে নিখোঁজ আমানউল্লাহর মা রাশিদা বেগমকে। তিনি জানান, সোমবার সন্ধান পর থেকে তার ছেলের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অপেক্ষায় ছিলেন রাতে বাসায় ফিরবেন, কিন্তু সারারাতেও তাঁর ছেলে বাসায় ফিরে আসেনি। এমন অসংখ্যা স্বজন কারখানার সামনে অপেক্ষা, আহাজারি করছে। রবিবার রাতে রাজধানীর শান্তি নগর থেকে গ্রেফতার হোন নারায়ণগঞ্জ-১আসনের সাবেক সাংসদ ও গাজী গ্রুপের চেয়ারম্যান গোলাম দস্তগীর গাজী।
পরের দিন বিকেলে রূপগঞ্জে গাজীর ফাঁসির দাবীতে মিছিল বের স্থানীয়রা। রাত ৯টার দিকে একদল দূর্বৃত্ত দ্বিতীয় বারের ন্যায় রূপগঞ্জের রূপসী এলাকায় অবস্থিত গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গাজী টায়ারে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে। এসময় কারখানার প্রবেশ পথে আগুন ধরিয়ে দিলে ভেতরে লুটপাটকারীদের একটি অংশ আটকা পরে। মূহুর্তের মধ্যে আগুন পুরো কারখানায় ছড়িয়ে পরে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ফায়ারসার্ভিসের ১২টি ইউনিট প্রায় ৩০ঘন্টা চেষ্টা করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক গণমাধ্যমকে জানান, ভবনটি নাজুক অবস্থায় থাকায় এখন পর্যন্ত ভেতরে ঢুকে উদ্ধার অভিযান শুরু করা যায়নি।
তিনি বলেন, ভোর পাঁচটার দিকে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছেন তারা৷ তবে ভেতরের উত্তাপ থেকে আবারও আগুন ধরে যেতে পারে শঙ্কা রয়েছে৷ “দীর্ঘ চেষ্টার পর আপাতত ফ্লেম (অগ্নিশিখা) ডাউন (নেভানো) করা সম্ভব হয়েছে কিন্তু এখনও ভবনের ভেতরে হিট (উত্তাপ) আছে৷ অল্প অল্প করে আগুন জ্বলছে৷ ভবনটা বেঁকে গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে৷ কয়েকটা জায়গায় সুরকির মতো হয়ে গেছে৷ ভেতরে ঢুকে কাজ করা যাচ্ছে না৷ নিচতলার সিড়ি পর্যন্ত ঢোকা গেছে কেবল৷”
টার্ন টেবিল ল্যাডার (টিটিএল) এর সাহায্যে ভবনটির ছাদে এক দফায় তল্লাশি চালানো হয়েছে জানিয়ে ফায়ার সার্ভিসের এ কর্মকর্তা বলেন, “ছাদের কোনো অংশে হতাহত কাউকে পাওয়া যায়নি৷ ভবনের ভেতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি৷ আগুনটা যেহেতু নেভাতে পেরেছি, সবকিছু বিবেচনা করে ভেতরে উদ্ধার অভিযান শুরু করবো।