রূপা গ্রুপের পথচলা শুরু ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বরে। বাংলাদেশের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে নবযুগ সৃষ্টির লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে গ্রুপটি। প্রাথমিক পর্যায়ে রূপা সোয়েটার (প্রা.) লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে গ্রুপটি। অল্প সময়ের মধ্যে ক্রেতাসাধারণের মন জয় করে নেয়। শুনতে সহজ মনে হলেও ভীষণ বন্ধুর ছিল তাদের পথচলা। তবে সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশের অন্যতম সফল কনগ্লোমারেটে পরিণত হয়। গ্রুপটির তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে তাদের বার্ষিক রফতানির পরিমাণ প্রায় ৩০ মিলিয়ন ডলার।
জাপানের বিখ্যাত সিমা সেকি গ্রুপের তৈরি নিট পণ্যের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয় রূপা গ্রুপের কারখানাগুলোয়। নিট পোশাক তৈরিতে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে তারা। মূলত ইন্টারশিয়া, কম্পিউটারাইজড জেকার্ড, কেব্লস, লিংকস, পয়েন্টাল নকশা প্রভৃতি বুননে কম্পিউটারাইজড ফ্ল্যাট নিটিং যন্ত্রের বিকল্প নেই। এসব প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহার করা হয় গ্রুপটির সব কারখানায়। সোয়েটার, পুলওভার, কার্ডিগান, গেঞ্জি, জাম্পার, স্কার্ফ প্রভৃতি তৈরির জন্য এ ধরনের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করা হচ্ছে এখানে।
ফ্যাশনের অন্যতম অনুষঙ্গ সোয়েটার। নারী-পুরুষ উভয়ের বেলায় তা প্রযোজ্য। আরামদায়ক ও স্টাইলিশ সোয়েটার তাদের অনন্য করে তোলে। সংগত কারণে একেকজনের বেলায় একেকরকম চাহিদা দেখা যায়। এ চাহিদা বিবেচনায় গুণগত মানে সেরা সোয়েটার উৎপাদন করে থাকে রূপা গ্রুপ। বিশেষ করে ক্রেতার পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হয় তাদের সব পণ্যে। তাদের সব ধরনের চাহিদা পূরণে কখনও পিছপা হয় না গ্রুপটি। তাই কাঁচামাল কেনা থেকে শুরু করে উৎপাদন ও সরবরাহের সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলেছে গ্রুপটি। এ কারণে বিশ্বের প্রায় ২৬ দেশে তাদের ক্রেতা রয়েছে।
মনোরম পরিবেশ ও নিজস্ব কারখানায় প্রস্তুত হয় রূপা গ্রুপের পণ্য। বর্তমানে গাজীপুরের বোর্ড বাজারে পাঁচ একর জমির ওপর নির্মিত এ গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রায় ৬০০০ শ্রমিক কর্মরত। কারখানার উন্নত যন্ত্রপাতির সঠিক ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন সঠিক প্রযুক্তি-জ্ঞান। এজন্য মেধাবী কর্মী তৈরিতে বিশেষ মনোযোগী রূপা গ্রুপ। তাদের সব কারখানাই শ্রমিকবান্ধব ও নিরাপদ বলে সুপরিচিত। কখনও কোনো ত্রুটি পাওয়া গেলে কর্তৃপক্ষ তা সমাধানে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী রূপা গ্রুপের কারখানাগুলোয় অত্যাধুনিক অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ইটিপি স্থাপন করা হয়েছে। কর্মীদের জন্য বিভিন্ন ধরনের সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ রাখা হয়েছে গ্রুপটিতে। যথাসময়ে তাদের বেতন পরিশোধ করা হয়। তাদের কাজের যথাযথ মূল্যায়ন করে থাকে কর্তৃপক্ষ। প্রভিডেন্ট ফান্ড, চিকিৎসাসেবা, মহার্ঘ ভাতা, উৎসব বোনাস প্রভৃতি চালু রয়েছে এখানে। কর্মীরা তাদের কর্মপরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট।
রূপা গ্রুপে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ শামসুল আলম। ১৯৭০ সালে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ হতে এইচএসসি এবং পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে বিএসএস (সম্মান) ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯২ সাল থেকে তিনি এলাকার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ ও মন্দিরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সহায়তা করে আসছেন। তিনি ২০০৩ সাল থেকে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মো. শহীদুল ইসলাম। তিনি ১৯৮১ সালে বরিশাল বিএম কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৮১-৮২ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগে স্নাতক (সম্মান) বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৯৮৬ সালে উত্তীর্ণ হন এবং ১৯৮৮ সালে এমকম ডিগ্রি লাভ করেন। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিজিএমইএ’র বিভিন্ন কর্যক্রমের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের নানামুখী সংকট সমাধানে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করছেন। তিনি ২০০৬ সালে বিজিএমইএ’র সহসভাপতি ও ২০০৮ সালে দ্বিতীয় সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় তিনি তৈরি পোশাকশিল্পের ব্যবসা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
মুনাফা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে রূপা গ্রুপ। কয়েক বছর ধরে এ গ্রুপের আতাহারউদ্দিন হাওলাদার ফাউন্ডেশন (এএইচএফ) ও ধানসিঁড়ি ডেভেলপমেন্ট ট্রাস্ট (ডিডিটি) সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। এ ধরনের কার্যক্রমের মাধ্যমে সমাজ ও মানুষের উপকার করে থাকে গ্রুপটি। ‘হেলথ ফর অল’ নামে একটি কর্মসূচি চালু করেছে তারা। রয়েছে শিক্ষাসহায়ক কর্মসূচি। দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রছাত্রীর জন্য বৃত্তিসহ বিনাবেতনে পড়ালেখার অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে তারা। আরও আছে দারিদ্র্য দূরীকরণ কর্মসূচি। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও নারীদের জন্য সেবা দেওয়া হয়। এএইচএফ ও ডিডিটির মাধ্যমে অল্প খরচে হতদরিদ্র ও আশ্রয়হীনদের আবাসন সুবিধা দিয়ে থাকে গ্রুপটি।
শিক্ষা প্রসারেও ভূমিকা রাখছে গ্রুপটি। এজন্য বরিশালের বাকেরগঞ্জে আতাহারউদ্দিন হাওলাদার কলেজ ও আতাহারউদ্দিন হাওলাদার টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সব মিলিয়ে অসহায় মানুষের সহায় হয়ে থাকতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে বদ্ধপরিকর রূপা গ্রুপের কর্তৃপক্ষ।
কনসার্ন
রূপা সোয়েটার (প্রা.) লিমিটেড
রূপা ফ্যাশনস (প্রা.) লিমিটেড
রূপা অ্যাপারেলস লিমিটেড
রূপা নিটওয়্যার (প্রা.) লিমিটেড
রূপা উলওয়্যার লিমিটেড
রূপা ফ্যাব্রিকস লিমিটেড
রূপা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড
রতন কুমার দাস