মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় ব্যবহৃত বেনিফিশিয়ারি ওনার্স বা বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নে সাড়া মিলছে না। জুনের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অ্যাকাউন্ট হোল্ডাররা বিও নবায়নে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যে কারণে এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ বিও নবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে বিষয়টি জানা গেছে।
শেয়ার হিসাব সংরক্ষণকারী সংস্থা সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) কর্তৃক নির্ধারিত বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নের শেষ সময়সীমা ৩০ জুন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ৪৫০ টাকা দিয়ে নবায়ন না করলে বিও অ্যাকাউন্টগুলো বাতিল হয়ে যাবে।
এদিকে চলতি বছর বিপুলসংখ্যক অ্যাকাউন্ট বাতিল হবে বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা। এর জন্য প্রধানত মন্দাবাজার পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন তারা। সংশ্লিষ্টদের মতে, এবার দুই কারণে অসংখ্য বিও বাতিল সংখ্যা বাড়বে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বাজারের মন্দা পরিস্থিতি; অন্যটি প্রাইমারি মার্কেট থেকে বিনিয়োগকারীদের সুবিধা না পাওয়া। তবে এ বছর বিও বাতিল হওয়ার জন্য প্রাইমারি মার্কেটের নাজুক পরিস্থিতিকে দায়ী করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে রাসেল আহমেদ নামে এক বিনিয়োগকারী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিভিন্ন নামে আমার মোট বিও ছিল ২৫টি। এর ২৩টি ব্যবহার হতো আইপিওতে আবেদন করার জন্য। কিন্তু প্রাইমারি মার্কেট ভালো না থাকায় গত বছর ১৩টি অ্যাকাউন্ট বাতিল করে দিয়েছি। বাকিগুলো এবার বাতিল করে দেব। তিনি বলেন, ‘শেয়ারে আবেদন না করে শুধু শুধু অ্যাকাউন্ট রেখে কোনো লাভ নেই। বরং প্রতি বছর ফি গুনতে হয়। এটা বাড়তি খরচ।’
বিও অ্যাকাউন্ট নবায়নে বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের কারণ জানতে চাইলে জয়তুন সিকিউরিটিজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এক সময় আইপিও বিজয়ী বিনিয়োগকারীরা প্রতিটি বিও থেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা কিংবা তার বেশি লাভ করতে পারতেন। সে কারণে একজন গ্রাহক বিভিন্ন নামে অনেক অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করতেন। এখন সে সুযোগ নেই। যার প্রতিফলন পড়ে বিও নবায়ন না করায়। এছাড়া বাজার পরিস্থিতি মন্দা থাকলে সবসময়ই বিও নবায়নে অনিহা দেখা যায়।
নিয়মানুযায়ী জুনের মধ্যে বিও ফি পরিশোধ না করলে সে সব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। তবে যে সব অ্যাকাউন্টে শেয়ার বা টাকা রয়েছে সে সব অ্যাকাউন্ট বাতিল হবে না।
সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুন মাসে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে।
এ সময় বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। পরবর্তীতে এ ফি ৫০ টাকা কমানো হয়েছে।
প্রাপ্ত থ্যমতে মে মাস শেষে বিও সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ৮৩ হাজার ৬১৯ জন। এর মধ্যে সারা দেশে পুরুষদের ২০ লাখ ৩৪ হাজার ৫৫৪টি এবং নারীদের বিও হিসাব সাত লাখ ৩৬ হাজার ৮২৮টি। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে চালু আছে ১২ হাজার ১৩৭টি বিও এবং প্রবাসীদের রয়েছে এক লাখ ৬৪ হাজার ৫৯২টি। সময় নবায়ন না করায় গত দুই বছরে ঝরে গেছে।