রেকর্ড অবস্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ : ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে দেশের পুঁজিবাজার। সাত মাস ধরে এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে লেনদেন, বাজার মূলধনসহ সব সূচকের অবস্থান রয়েছে ঊর্ধ্বমুখী। এ ধারাবাহিকতার জের ধরে গতকাল প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বাজার মূলধনের রেকর্ড হয়েছে। পাশাপাশি লেনদেন ও সূচকের বড় উত্থান দেখা যায়। এটাকে বাজারের শুভ লক্ষণ বলে মনে করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা।

গতকালের বাজারচিত্র লক্ষ করলে দেখা যায়, বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের পাশাপাশি শেয়ার এবং ইউনিটের চাহিদা বৃদ্ধির কারণে সকাল থেকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর বাড়তে থাকে। দিন শেষে এক কার্যদিবসে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ইউনিটের বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা।

গতকাল লেনদেন শুরুর আগে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। দিন শেষে তা বেড়ে দাঁড়ায় চার লাখ ৩৯ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্য দিয়ে ডিএসইতে সর্বোচ্চ বাজার মূলধনের রেকর্ড সৃষ্টি হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ৩ জানুয়ারি সর্বোচ্চ বাজার মূলধন ছিল চার লাখ ২৫ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা।

এদিকে বাজার মূলধনে রেকর্ড সৃষ্টির দিনে সূচকের বড় উত্থানে শেষ হয় লেনদেন। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১১০ পয়েন্ট বেড়ে স্থির হয় পাঁচ হাজার ৩২৮ পয়েন্টে। এর মধ্যে দিয়ে ডিএসইর এই সূচকটি এক বছর পাঁচ মাস ২১ দিন বা ৩২১ কার্যদিবসের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে চলে যায়। এর আগে ২০১৯ সালের ৭ জুলাই সূচকের অবস্থান গতকালের চেয়ে বেশি ছিল। সেদিন সূচকের অবস্থান ছিল পাঁচ হাজার ৩৩৩ পয়েন্টে। একইভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল ডিএসইর অন্যান্য সূচক।

অন্যদিকে সূচকের পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনে গতকাল বড় উত্থান দেখা যায়। গতকাল ডিএসইতে এক হাজার ৫২৯ কোটি ৩০ লাখ টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট লেনদেন হয়, যা আগের কার্যদিবস থেকে ১২৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা বেশি। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ৪০৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট। অন্যদিকে গতকালের লেনদেন ছিল গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে চলতি বছরের ২৮ জুলাই গতকালের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছিল। ওই দিন লেনদেন হয়েছিল দুই হাজার ৫৪৩ কোটি ২৫ লাখ টাকার।

একইভাবে গতকাল ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৬৬ শতাংশ শেয়ার ও ইউনিটদরও বেড়েছে। দিন শেষে লেনদেনে অংশ নেয়া ৩৬২টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৩৮টি প্রতিষ্ঠানের দরও বাড়তে দেখা যায়।

এদিকে বাজারের এই ধারাবাহিকতাকে ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে বাজারসংশ্লিষ্ট সবাই। তাদের অভিমত, ২০১০ সালের পর প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজারে ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এটা সার্বিক বাজারের জন্য ভালো। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে সামনে বাজারের অবস্থা আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা বললে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাজার বিনিয়োগের অনুকূলে রয়েছে। বেশিরভাগ শেয়ারই এখন কম মূল্যে রয়েছে, যা সহজেই ক্রয়যোগ্য। তাছাড়া ধারাবাহিক স্থিতিশীল থাকার কারণে বাজারের সঙ্গেও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন। এটা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো বার্তা। তবে এর মধ্যেও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। তাদের উচিত হবে ভালো কোম্পানির শেয়ারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করা। তিনি বলেন, বাজারে যত বেশি ভালো মানের কোম্পানি তালিকাভুক্ত হবে, বাজার পরিস্থিতি ততই বদলে যাবে।

অন্যদিকে পুঁজিবাজারের এ পরিস্থিতির জন্য বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জনের কথা বলেছেন বাংলাদেশ সিউিরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসই) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। সাম্প্রতিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরার কারণে বাজারে ধারাবাহিক স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে, যে কারণে গত ছয় মাসের ব্যবধানে বাজার মূলধন বেড়েছে এক লাখ কোটি টাকার বেশি। আশা করছি আগামী দিনগুলোয় বাজারের সার্বিক অবস্থা আরও ভালো হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০