রেকর্ড উৎপাদনের পরও বাড়ছে লবণের দাম

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম:দেশে লবণের চাহিদার সিংহভাগ আসে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা থেকে। কক্সবাজারে প্রতিমণ লবণ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। পরিবহন ও গাড়িতে ওঠা-নামা ও কমিশনসহ প্রতিমণে খরচ পড়ে আরও প্রায় ৭০ টাকা। এরপর মিলে ওয়াশ ও ক্রাশ করে বাজারজাত করা হয়। কিন্তু মিল মালিকরা এখন সেই লবণ বিক্রি করছেন প্রতি বস্তা (৭৪ কেজি) এক হাজার ১৫০ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকায়। অথচ চাষিদের কাছ থেকে লবণ কেনার সময় প্রতি মণে চার থেকে পাঁচ কেজি বেশি নেয়া হয়। চলতি বছর দেশে রেকর্ড পরিমাণ লবণ উৎপাদন হওয়ার পরও কোরবানির ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে লবণের দাম ততই বাড়ছে।

জানা যায়, দেশে উৎপাদিত লবণের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে কক্সবাজার থেকে। বাকি ১০ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাঁশখালীসহ দেশের অন্যান্য উপকূলীয় এলাকায়। লবণ উৎপাদনের মৌসুমে কক্সবাজার উপকূলের ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে প্রায় ২২ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে লবণ চাষে গত ৬২ বছরে এত লবণ কখনও উৎপাদিত হয়নি। সর্বশেষ ২০২২ সালে ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদিত হয়।

মৌসুমজুড়ে দাবদাহ, কম বৃষ্টি, জমিতে শতভাগ আধুনিক পলিথিন প্রযুক্তিতে চাষবাদ এবং নতুন জমিতে লবণ চাষের কারণে উৎপাদনে নতুন রেকর্ড হয়েছে। কিন্তু চাষিরা ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা মিল মালিকদের কাছে জিম্মি বলে অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজারে বাণিজ্যিক লবণ উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬০ সালে। চলতি মৌসুমে (১৫ নভেম্বর থেকে ১৫ মে) জেলার টেকনাফ, কক্সবাজার সদর, পেকুয়া, মহেশখালী, ঈদগাঁও, চকরিয়া, কুতুবদিয়া ও বাঁশখালীতে ৬৬ হাজার ৪২৪ একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। ৬ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদিত হয়েছে ২১ লাখ ৭৫ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে একই সময়ে উৎপাদিত হয়েছিল ১৮ লাখ ১৫ হাজার ১৫৬ মেট্রিক টন। এ হিসাবে চলতি মৌসুমে গত মৌসুমের তুলনায় প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন লবণ বেশি উৎপাদিত হয়েছে।

এ বিষয়ে চাক্তাইয়ের মেসার্স হাজি আহমদ লাল মিয়া সল্ট ক্রাসিং ইন্ডাস্ট্রিজের আসাদুজ্জামান বলেন, লবণের সংকট নেই। তবে ব্যবসার অবস্থা ভালো নয়। দাম ঊর্ধ্বমুখী। ক্রাশ লবণ চলছে প্রতি বস্তা এক হাজার ২৫০ টাকায়। লোডশেডিংয়ের কারণে মিলগুলো ঠিকভাবে চালানো যাচ্ছে না, তাই উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কোরবানির সময় দাম আরও বাড়ার আশঙ্কা তার। তিনি বলেন, মাস খানেক আগে লবণের দাম ছিল ৯৫০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন লবণের দাম বৃদ্ধিকে সিন্ডিকেটের কারসাজি উল্লেখ করে বলেন, পর্যাপ্ত লবণ উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও লবণের দাম কেন বাড়বে? তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের পকেট কাটা হচ্ছে। একটি গরু বা মহিষের চামড়ায় আট থেকে ১০ কেজি লবণ লাগে। গত বছর গরু, মহিষ ও ছাগল মিলে প্রায় তিন লাখ চামড়া সংগ্রহ হওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক চামড়া শহরে আসে না। অনেক ব্যাপারী স্থানীয়ভাবে লবণজাত করে সরাসরি ঢাকায় বিক্রি করেন। বর্তমানে প্রতি বস্তা লবণ এক হাজার ১২০ থেকে এক হাজার ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বৃষ্টি হলে দাম ফের বাড়িয়ে দেয়া হয়। এটা কারসাজি ছাড়া আর কিছুই নয়।

এ বিষয়ে বিসিকের লবণ মাঠ পরিদর্শক ইদ্রিস আলী বলেন, এ বছরের মতো লবণ উৎপাদন আর কখনও হয়নি। এবার ২২ লাখ ৩৩ হাজার টন লবণ উৎপাদন হয়েছে। দেশের মোট চাহিদা ২৩ লাখ টন। চাষি পর্যায়ে লবণের পাইকারি দর মণপ্রতি ৪০০ টাকা। এবার যেহেতু লবণের ঘাটতি নেই, তাই আমদানিরও প্রয়োজন নেই। এবারের কোরবানি ঈদে সারাদেশে লবণের চাহিদা রয়েছে এক লাখ টন। কোরবানির চামড়ায় যে লবণ ব্যবহার করা হয়, তার জন্য লবণের ওয়াশ বা ক্রাসের প্রয়োজন নেই। মাঠে উৎপাদিত লবণ সরাসরি চামড়ায় ব্যবহার করা যায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০