ক্রীড়া প্রতিবেদক: ওয়ানডে সিরিজের মতোই গতকাল শুরুতে ঝড় তুলেছিলেন লিটন দাস। পরে তার দেখানো পথে হাঁটেন ছুটি কাটিয়ে ফেরা সৌম্য সরকার। শেষ পর্যন্ত এ বাঁহাতি ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে দলকে পৌঁছে দেন রানের পাহাড়ে। তার ওপর ভর করে মোস্তাফিজুর রহমান-আমিনুল ইসলাম বিপ্লবরা বল হাতে নিজেদের মেলে ধরেন। নিয়মিত বিরতিতে সফরকারী ব্যাটসম্যানদের সাজঘরে ফিরিয়ে টাইগারদের জয়ের পথে রাখেন। সেই ধারাবাহিকতায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ পেয়ে যায় সবচেয়ে বড় জয়।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গতকাল সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ জিতেছে ৪৮ রানে। এর আগে এ ফরম্যাটে সফরকারীদের বিপক্ষে টাইগারদের বড় জয় ছিল ৪৩ রানের। ২০০৬ সালে খুলনায় নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সেই জয়টি পেয়েছিল তারা।
গতকাল লিটন দাস (৫৯) ও তামিম ইকবালের (৪১) ব্যাটে ভর করে দারুণ শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। পরে সৌম্য সরকার (৩২ বলে ৬২ রান) ঝড়ো ইনিংস খেলে টাইগারদের নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে পৌঁছে দেন ২০০ রানের ঠিকানায়। তার ওপর ভর করে বোলারদের নৈপুণ্যে সফরকারীদের ১৯ ওভারে ১৫২ রানে গুটিয়ে দেয় স্বাগতিকরা। আর তাতে প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সবচেয়ে বড় জয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল মাহমুদউল্লাহর দল। আগামীকাল সিরিজের শেষ ম্যাচে মিরপুরের মুখোমুখি হবে দুই দল।
জিম্বাবুয়ের সামনে রেকর্ড সংগ্রহ দাঁড় করিয়ে শুরু থেকে বল হাতে দারুণ সফল ছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। যে কারণে কোনো সময়ই সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত তাই টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের মতো টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচটিও সহজেই জিতে নেয় বাংলাদেশ।
গতকাল শফিউলের হাত ধরে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই সাফল্য পায় বাংলাদেশ। সে সময় এ ডানহাতি মিড উইকেটে সৌম্যর হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরিয়ে দেন ব্রেন্ডন টেইলরকে। এর কিছুক্ষণ পরই মোস্তাফিজুর রহমান এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ক্রেইগ আরভিনকে। সে ক্ষত শুকানোর আগেই জিম্বাবুয়ে হারায় ওয়েসলি মাধেভেরেকে। এরপর অবশ্য সফরকারীদের উদ্ধার করতে ওপেনার টিনাশে কামুনহুকামউই ও শন উইলিয়ামস চেষ্টা চালান বেশ। সে সময় তারা বড় শট খেলে টাইগারদের চোখ রাঙানি দিচ্ছিলেন। কিন্তু সেটা মেনে নিতে পারেননি লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। পরপর দুই বলে বিপজ্জনক ওই দুই ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন তিনি। তাই হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জেগেছিল তার। পরে অবশ্য সিকান্দার রাজা হ্যাটট্রিক বল ঠেকিয়ে দেন। তবে জিম্বাবুয়ের এ মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে সুবিধা করতে দেননি আফিফ হোসেন। আক্রমণে এসেই এ স্পিনার উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ধরা পড়ান তাকে। সে সময় সফরকারীদের স্কোর ছিল ১১.৩ ওভারে ৬ উইকেটে ৮৩। বাংলাদেশ তাই বড় জয়ের সুবাস পাচ্ছিল। শেষ দিকে অবশ্য সফরকারীদের রিচমন্ড মুতুমবামি ও ডেনাল্ড ত্রিরিপানো চেষ্টা করেছিলেন বড় ইনিংস খেলতে। কিন্তু তাদের খুব একটা সুবিধা করতে দেননি মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ও মোস্তাফিজুর রহমান। যে কারণে অনায়াসে জিতে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
এর আগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ধীরে করেন তামিম ইকবাল। কিন্তু অন্য প্রান্তে ঝড় তোলেন লিটন দাস। ৩৯ বলে ৫৯ রান করে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের দর্শকদেরও কিন্তু ভালোই আনন্দ দেন তিনি। তার সঙ্গী তামিম পরে খোলস ছেড়ে বের হন। শেষ পর্যন্ত ৩৩ বলে ৪১ রানে ফিরলেও ওয়ানডে অধিনায়কত্ব পাওয়াটা বেশ উদ্?যাপনই করছিলেন তিনি। গতকাল তারা ছুঁয়েছেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং জুটির রেকর্ড। তারা গড়েন ৯২ রানের জুটি।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন সৌম্য সরকার। মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে প্রথমে এ বাঁহাতি দলীয় স্কোর বোর্ডে যোগ করেন ৪১ রান। কিন্তু মুশফিক ৮ বলে ২ ছয় মেরে ১৭ রান করে ফিরলে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে আরও ৫৪ রান যোগ করেন সৌম্য। সে পথ ধরে এ তারকা ৩০ বলে সমান ৪টি চার, ৪টি ছয়ে পেয়ে যান টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরির দেখা। শেষ পর্যন্ত ৩২ বলে ৪টি চার ও ৫ ছয়ে ৬২ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। আর তাই নির্ধারিত ২০ ওভারে ৩ উইকেটে ২০০ করে বাংলাদেশ। এটি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ।
জিম্বাবুয়ের হয়ে একটি করে উইকেট নেন ক্রিস্টোফার এমপফু, সিকান্দার রাজা ও ওয়েসলি মাধেভেরে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০০/৩ (২০ ওভারে, তামিম ৪১, লিটন ৫৯, সৌম্য ৬২*, মুশফিক ১৭, মাহমুদউল্লাহ ১৪*, রাজা ১/৩১, মাধেভেরে ১/১৫)।
জিম্বাবুয়ে : ১৫২/১০ (১৮.২ ওভারে, কামুনহুকামউই ২৮, শন উইলিয়ামস ২০, মুতুমবামি ২০, ত্রিরিপানো ২০, মুম্বা ২৫, আমিনুল ৩/৩৪, মোস্তাফিজ ৩/৩২)।
ফল: বাংলাদেশ ৪৮ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: সৌম্য সরকার।