রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনেও লোডশেডিংয়ের অসহনীয় মাত্রা

মাহমুদুল হক আনসারী: দেশজুড়ে চলমান দাবদাহে বেড়েছে বিদ্যুতের চাহিদা। ক্রমবর্ধমান এই চাহিদা পূরণের চেষ্টায় রেকর্ড হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এর পরও রাজধানীর বাইরের জেলা-উপজেলা শহরসহ গ্রামাঞ্চলে ছয় থেকে আট ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। ভাপসা গরমে ঘনঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ গ্রামাঞ্চলের মানুষ। এ ছাড়া গ্রামাঞ্চলে ব্যাহত হচ্ছে শেষ মুহূর্তের সেচ কার্যক্রম। কৃষকের সেচ কার্যক্রম ঠিক রাখতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং পরিস্থিতি কমিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়ার কথা জানা যায়। তবে রাজধানীতে লোডশেডিং কম।

গত সোমবার বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ১৬ হাজার ২৩৩ মেগাওয়াট বিদ্যুতের উৎপাদনের রেকর্ড করে। এটিই এখন পর্যন্ত দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন। কিন্তু ওই রেকর্ডের দিনেও সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল প্রায় ১৭ হাজার মেগাওয়াট, যা পূরণ করা সম্ভব হয়। ঢাকার বাইরে যেসব অঞ্চলে লোডশেডিং বেশি হচ্ছে, সেসব এলাকা চিহ্নিত করা হচ্ছে। অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে যেন কৃষকের সেচ কার্যক্রম ব্যাহত না হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রয়োজনে রাজধানীসহ শহরাঞ্চলে কিছুটা লোডশেডিং করেও গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিংয়ের পরিমাণ কমিয়ে আনা হবে বলে জানা যায়। আগামী দু-তিন দিনের মধ্যেই গ্রামাঞ্চলের লোডশেডিং পরিস্থিতি কিছুটা কমে আসবে। এদিকে রাজধানীতে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। বিদ্যুৎ সরবরাহকারী দুই প্রতিষ্ঠান ডিপিডিসি ও ডেসকো বলে, লোডশেডিং না হলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে কিছু কিছু এলাকায় স্বল্প সময়ের জন্য বিদ্যুৎবিভ্রাট হচ্ছে বলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান।

পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের জোনভিত্তিক বিদ্যুৎ চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যে দেখা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় এই বিতরণ কোম্পানিকে এক হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট লোডশেডিং করতে হয়েছে। এই সময় সারাদেশে কোম্পানিটির বিদ্যুৎ চাহিদা ছিল আট হাজার ৮৯৬ মেগাওয়াট, সরবরাহ করেছে সাত হাজার ১৫২ মেগাওয়াট। গতকাল আরইবির বিতরণ এলাকার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লোডশেডিং হয়েছে। চট্টগ্রামের শহর ও নগরে সমান তালে লোডশেডিং চলছে। তীব্র গরমের মধ্যে রাতের বেলাও ঘনঘন লোডশেডিং হওয়ায় মানুষের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে। শিশু ও অসুস্থ বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আছেন। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পেতে আমাদের যে পরিমাণ উপকেন্দ্র ও মেশিনারিজ প্রয়োজন, তার ব্যবস্থা করা এখনও হয়ে ওঠেনি। বিভিন্ন এলাকায় উপকেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলমান, সেগুলোর কাজ সম্পন্ন হলে বিদ্যুতের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা আয়কর আইনজীবী আমির হোসেন বলেন, গণমাধ্যমে দেখলাম দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। এর পরও মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছে না। তিনি লোডশেডিং সহনীয়ভাবে রাখার দাবি করেন। রাতের বেলা নামাজ ও আজানের সময় বিদ্যুৎ চলে যাওয়াকে তিনি অসৌজন্যমূলক কর্মকাণ্ড বলে মনে করেন। চট্টগ্রামের আকবরশাহ পাহাড়তলী, কাট্টলি ও সিটি গেট এলাকার ইঞ্জিনিয়ার মাসুম বলেন, অফিস সেরে বাসায় এসে দেখি  বিদ্যুৎ নেই। রাতে ও সন্ধ্যার সময় বিদুৎ থাকে না। অসুস্থ বাবা-মা গরমে ছটফট করেন। অসহনীয় তাপমাত্রায় অতিষ্ঠ সমাজকর্মী ছাবেকন্নাহার বলেন, শহরের বিদ্যুতের এমন পরিস্থিতি মোটেও সহ্য করতে পারছি না। বর্তমান বিদ্যুৎ উৎপাদনের এ সময় ঘনঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়া বন্ধ করতে হবে। আবার অফিস পাড়ায় একটি অফিসে একটি এসির মধ্যে একজন বসে আছেন। সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ ব্যবহারে যথেষ্ট অপচয় করতে দেখা যায়। অফিস খোলা, কেউ নেই, কিন্তু ফ্যান-এসি চলছে। আবার কোনো অফিসে এসি-ফ্যান দুটোই চলছে। এগুলো  দেখা দরকার। মিলকার খানার উৎপাদন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উৎপাদন ব্যাঘাত হওয়ায় ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। এই কয়েক দিনের ব্যবধানে বেকারি খাদ্যের মূল্য বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। বাসাবাড়িতে পানির সংকট। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের দরুন কল থেকে পানি ওঠানো সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমজীবী মানুষের দুর্গতির সীমা নেই। বাসার রান্নার কাজ শেষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন গৃহিণীরা। বিদ্যুতের সরবরাহের সঙ্গে বাসাবাড়ির পানির সম্পর্ক। তাই বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে আনতে হবে এবং বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করতে হবে।

 

মাহমুদুল হক আনসারী

সংগঠক, গবেষক ও কলামিস্ট

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০