রেকর্ড রপ্তানিতে চীনের বিদ্যুৎ সংকট বাড়ছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: কয়লা সরবরাহ কমে যাওয়ায় সম্প্রতি বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট তীব্র হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ উত্তরাঞ্চলেও জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে চীনের কয়লা উত্তোলন কমে যাওয়ায় দেশটির কয়েকটি প্রদেশে বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে গত মাসে রেকর্ড রপ্তানি বাণিজ্য বিদ্যুতের সংকট আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। খবর: ব্ল–মবার্গ, ইয়াহু ফাইন্যান্স।

চলতি বছরের গত সেপ্টেম্বর মাসে চীনে রেকর্ড রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ বছরের শেষে ছুটির আগে জোরালো চাহিদা এবং পণ্যের বাড়তি দাম সারাদেশে বিদ্যুৎ ঘাটতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। গতকাল বুধবার চীনের জেনারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব কাস্টমস (জিএসি) এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় সেপ্টেম্বরে চীনের রপ্তানি ২৮ দশমিক এক শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩০৫ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা অর্থনীতিবিদদের ২১ দশমিক পাঁচ বিলয়ন ডলারের অনুমানকে ছাড়িয়ে গেছে। অন্যদিকে আমদানি প্রবৃদ্ধি অর্থনীতিবিদদের ২০ দশমিক ৯ বিলয়ন ডলারের অনুমান থেকে কমে ১৭ দশমিক ছয় বিলয়ন ডলার হয়েছে। ফলে সেপ্টেম্বরে উদ্বৃত্ত বাণিজ্য রয়েছে ৬৬ দশমিক আট বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকদের মতে, কভিড মহামারি-পরবর্তী চীনের আর্থিক পুনরুদ্ধারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেড়েই চলছিল, যা দুর্বল গৃহস্থালির ব্যয় নির্বাহ করতে সহায়তা করে। চলতি অক্টোবরের শুরুতে সপ্তাহব্যাপী ছুটির আগে চীনের তৈরি পণ্যের চাহিদা অনেকগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে ক্রিসমাসের থ্যাঙ্কসগিভিং ও টয়-জাতীয় পণ্যের ক্ষেত্রে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপক চাহিদা থাকায় রপ্তানি ক্রয়াদেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্রেতাদের ক্রয়াদেশ বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ চাহিদা বেড়ে গেছে, যা চলমান বিদ্যুৎ সংকটকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

এ বিষয়ে চায়না ইকোনমিস্ট বার্কলেজ পিএলসির প্রধান অর্থনীতিবিদ জিয়ান চ্যাং বলেন, বাণিজ্য তথ্যে বলছে, চীনা পণ্যে নিয়মিত বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ধীর হচ্ছে প্রবৃদ্ধি। 

আর নোমুরা হোল্ডিং ইনকের প্রধান অর্থনীতিবিদরা শক্তিশালী রপ্তানি বৃদ্ধির কারণের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। উচ্চতর শিল্পপণ্যের দাম বৃদ্ধি রপ্তানির ক্ষেত্রে পাঁচ শতাংশের বেশি অবদান রাখতে পারে বলে মনে করেন নোমুরার অর্থনীতিবিদরা।

যদিও রপ্তানিকারকরা উচ্চ পরিবহন খরচ, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুতের স্বল্পতা এবং পরিবেশগত বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার মতো একাধিক চ্যালেঞ্জ মনে করেন।

এ বিষয়ে কাস্টমস বিভাগের মূখপাত্র লি কুইয়েন বলেন,  লজিস্টিক সমস্যাসহ দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় বছরের শেষ তথা চতুর্থ প্রান্তিকে রপ্তানি হ্রাস পেতে পারে। তিনি বলেন, কিছু পথে চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য ছিল না। তিনি বলেন, আমরা বিষয়টি সূক্ষ্মভাবে দেখছি।

এদিকে কয়লার ঘাটতি এবং দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় গত মাসে বিদ্যুৎবিভ্রাটে বেশ কয়েকটি প্রদেশে বিদ্যুৎ কারখানা বন্ধ করায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে বলে মনে করা হয়। বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে অ্যালুমিনিয়াম স্মেল্টার থেকে শুরু করে টেক্সটাইল উৎপাদনকারী, সয়াবিন প্রক্রিয়াকরণ কারখানা, শিল্পকারখানা পর্যন্ত বন্ধ করা কিংবা আংশিক বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।যদিও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, দাম বৃদ্ধির বিষয়টি তারা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

এদিকে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে কারখানা বন্ধ থাকায় দেশীয় চাহিদা হ্রাস পেয়েছে। এজন্য আমদানি কমে গেছে। ফলে সেপ্টেম্বরে লোহা আকরিক আমদানির পরিমাণ আগের মাসের ৯৭ দশমিক পাঁচ মিলিয়ন টন থেকে হ্রাস পেয়ে ৯৫ দশমিক ছয় মিলিয়ন টনে নেমেছে, যদিও বিদ্যুৎ ঘাটতি মোকাবিলায় কয়লা ও গ্যাসের আমদানি বেড়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০