Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 4:13 am

রেটিংয়ের আওতায় আসছে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশে কর্মসংস্থান ও বাংলাদেশি অভিবাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এবার কর্মরত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর রেটিং করবে সরকার। এজন্য এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত বিধিমালা চূড়ান্ত করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি ‘বৈদেশিক কর্মসংস্থান ও অভিবাসী বিধিমালা’র চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। ওই বিধিমালার সুবাদে রেটিং করা হলে কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে মানসম্পন্ন এজেন্সি বেছে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে, সেইসঙ্গে এ খাতে সুস্থ প্রতিযোগিতা বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্যমতে, বিদেশে কর্মসংস্থান ও অভিবাসনে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সাধারণ মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির রিক্রুটিং এজেন্সি বিদ্যমান নিয়মকানুন মানছে না। বিদেশে পাঠানোর কথা বলে মানুষের সঙ্গে তারা প্রতারণা করছে। এমনকি জালিয়াতি করে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার অভিযোগও উঠছে। আর নিয়মনীতি না মেনে বিদেশে লোক পাঠানোর কারণে বিদেশে গিয়ে ভোগান্তির মুখে পড়ছেন বাংলাদেশি নাগরিকরা। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে।

রিক্রুটিং এজেন্সির কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনতে প্রতিষ্ঠানগুলোর রেটিং করছে সরকার। এ-সংক্রান্ত নীতিমালায় রেটিংয়ের জন্য ৯ সদস্যের কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে, যে কমিটির সভাপতি হবেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মচারী। একই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মচারী কমিটির সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন। কমিটিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা সুরক্ষা বিভাগ, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো, ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড, বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড এবং বায়রার প্রতিনিধি সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ওই কমিটি রেটিংয়ের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। রেটিংয়ের মেয়াদ তিন বছর পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবে আইনভঙ্গের দায়ে কোনো এজেন্সি শাস্তি পেলে সেক্ষেত্রে রেটিংয়ের ওপর তার প্রভাব পড়বে। শাস্তির ধরন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির রেটিং গ্রেড বাতিল, স্থগিত কিংবা অবনমিত করা যাবে।

এদিকে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’ ও ‘ডি’ ক্যাটেগরিতে রেটিংয়ের জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর কাছ থেকে তথ্য নিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সির কার্যক্রম মূল্যায়ন করা হবে। এজন্য ১০০ নম্বরের মধ্যে রেটিংয়ে ৮৫-এর বেশি স্কোর হলে ‘এ’, ৭০ থেকে ৮৪ পর্যন্ত স্কোরের জন্য ‘বি’, ৬০ থেকে ৬৯ পর্যন্ত স্কোরের জন্য ‘সি’ এবং ৫৯ থেকে এর কম স্কোরের জন্য ‘ডি’ রেটিং দেওয়া হবে। এখানে ‘এ’ বলতে ‘উত্তম’, ‘বি’ বলতে ‘সন্তোষজনক’, ‘সি’ বলতে ‘চলতিমান’ ও ‘ডি’ বলতে ‘নি¤œমান’ বোঝাবে।

বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছে, সর্বশেষ তিন বছরে তিন হাজারের বেশি জনকে বিদেশে পাঠিয়েছে, বিদেশ যাওয়া শ্রমিকের ৭০ শতাংশ দক্ষ কর্মী পাঠিয়েছে, নিজস্ব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে, দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে শাখা রয়েছে, উচ্চশিক্ষিত কর্মীদের বিদেশে পাঠিয়েছে, সরকারি অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী পাঠিয়েছে, নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান অভিবাসন ব্যয় বহন করেছে ও বিদেশে অবস্থানরত কর্মীরা সবাই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে টাকা পাঠাচ্ছেনÑএমন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো রেটিংয়ে এগিয়ে থাকবে। এর বিপরীতে তুলনামূলকভাবে কম সময় ধরে বিদেশে লোক পাঠাচ্ছে, বেশি আধাদক্ষ শ্রমিক পাঠাচ্ছে, সরকারি ব্যয়ে তুলনামূলক কর্মী পাঠাচ্ছে ও প্রবাসীদের প্রেরিত অর্থ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে আসছে নাÑএমন কোম্পানিগুলো রেটিংয়ে পিছিয়ে পড়বে। এর মধ্য দিয়ে রিক্রুটিং এজেন্সি বেছে নেওয়া সহজ হবে বলে মনে করছেন সরকারি দায়িত্বশীলরা।

রেটিংয়ের জন্য প্রত্যেকটি রিক্রুটিং এজেন্সির কাছ থেকে ১৪টি তথ্য নেবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিশেষ কমিটি। বিদেশে প্রেরিত কর্মীর সংখ্যা, ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা ও সুনাম, অভিযোগ প্রতিকার ব্যবস্থাপনা ও অনুমোদিত নিরাপদ স্থাপনে অফিস আছে কি না, তার ওপরেই রেটিংয়ের গ্রেড নির্ভর করবে।