ইসমাইল আলী: তহবিল সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে বিদ্যুৎ খাতে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় দুই বছর ধরে এ খাতে ভর্তুকির পরিমাণ অনেক বাড়াতে হয়েছে। তবে সে অর্থ নিয়মিত ছাড় করা হচ্ছে না। এতে বড় ধরনের তহবিল সংকটে পড়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। এ কারণে বেসরকারি খাতের রেন্টাল-কুইক রেন্টাল ও আইপিপি (ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার) কেন্দ্রগুলোর বিল নিয়মিত পরিশোধ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত এ সংস্থাটি।
চুক্তি অনুযায়ী, বিল জমা দেয়ার ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে তা পরিশোধ করতে হয় পিডিবিকে। তা না হলে ব্যাংক আমানতের সুদহারের (৬%) সঙ্গে দুই শতাংশ যোগ করে (৮%) জরিমানা সুদ দিতে হয়। তহবিল সংকটে বর্তমানে চার মাসেরও বেশি সময় লাগছে বিল পরিশোধে। যদিও আগে সর্বোচ্চ ৬০ দিনের মধ্যেই বিল পরিশোধ করত পিডিবি। আর তহবিল সংকটের কারণে প্রতি বছর বাড়ছে বকেয়া বিলের পরিমাণ ও বকেয়া মাস। এতে প্রতি বছর জরিমানা সুদ বেড়েই চলেছে।
পিডিবির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা যায়, বিলম্বে বিল পরিশোধের জন্য ২০১৭-১৮ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ছয় বছরের বিলম্ব সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬৪৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদায়ী অর্থবছরই অর্ধেকের বেশি তথা এক হাজার ৮২১ কোটি টাকা জরিমানা সুদ দিতে হবে পিডিবিকে। যদিও আমানতের সুদহার উš§ুক্ত করে দেয়ায় আগামীতে জরিমানা সুদহার আরও বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পিডিবির তথ্যমতে, ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষে রেন্টাল ও আইপিপির বিল বকেয়া ছিল এক দশমিক ৫৫ মাসের। ওই বছর মাসিক গড় বিলের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩৯১ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৭-১৮ অর্থবছর মোট বকেয়া বিল ছিল প্রায় দুই হাজার ১৫৬ কোটি টাকা। আট শতাংশ সুদে এর ওপর পিডিবিকে জরিমানা সুদ দিতে হয়েছে ১৭২ কোটি টাকা।
২০১৮-১৯ অর্থবছর শেষে রেন্টাল ও আইপিপির বিল বকেয়ার পরিমাণ কিছুটা কমে দাঁড়ায় এক দশমিক ৩৩ মাস। তবে ওই বছর মাসিক গড় বিলের পরিমাণ অনেকটা বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৭৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই অর্থবছর জুন শেষে মোট বকেয়া বিল ছিল প্রায় দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আট শতাংশ সুদে এর ওপর পিডিবিকে জরিমানা সুদ দিতে হয় ১৮৪ কোটি টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছর শেষে রেন্টাল ও আইপিপির বিল বকেয়ার পরিমাণ বেড়ে হয় এক দশমিক ৯৬ মাস। তবে ওই বছর মাসিক গড় বিলের পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে সামান্য কমে দাঁড়ায় এক হাজার ৭২৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই অর্থবছর জুন শেষে মোট বকেয়া বিল ছিল প্রায় তিন হাজার ৩৮৭ কোটি টাকা। আট শতাংশ সুদে এর ওপর পিডিবিকে জরিমানা সুদ দিতে হয় ২৭১ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছর শেষে রেন্টাল ও আইপিপির বিল বকেয়ার পরিমাণ আবার কমে হয় এক দশমিক ৫৭ মাস। তবে ওই বছর মাসিক গড় বিলের পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশ কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এতে ওই অর্থবছর জুন শেষে মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় চার হাজার ৬৫ কোটি টাকা। আট শতাংশ সুদে এর ওপর পিডিবিকে জরিমানা সুদ দিতে হয় ৩২৫ কোটি টাকা।
২০২১-২২ অর্থবছর শেষে রেন্টাল ও আইপিপির বিল বকেয়ার পরিমাণ বেশ কিছুটা বেড়ে হয় দুই দশমিক ৫১ মাস। ওই বছর মাসিক গড় বিলের পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে বেশ কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় চার হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এতে ওই অর্থবছর জুন শেষে মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১০ হাজার ৮৭৮ কোটি টাকা। আট শতাংশ সুদে এর ওপর পিডিবিকে জরিমানা সুদ দিতে হয় ৮৭০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই অর্থবছর পিডিবির জরিমানা সুদ ১৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
এদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে রেন্টাল ও আইপিপির বিল বকেয়ার পরিমাণ আরও বেড়ে হয় চার দশমিক ২৫ মাস। ওই বছর মাসিক গড় বিলের পরিমাণ আগের অর্থবছরের চেয়ে বেড়ে দাঁড়ায় পাঁচ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা। এতে বিদায়ী অর্থবছর জুন শেষে মোট বকেয়া বিলের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২২ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা। আট শতাংশ সুদে এর ওপর পিডিবিকে জরিমানা সুদ দিতে হবে এক হাজার ৮২১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত অর্থবছর পিডিবির জরিমানা সুদ ১০৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
জানতে চাইলে পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, কিছু কেন্দ্রের সঙ্গে চুক্তি জরিমানা সুদের কথা বলা আছে। আবার কিছু চুক্তিতে তা বলা নেই। তবে গত বছর থেকে বিল পরিশোধে বকেয়া মাস ও পরিমাণ বাড়তে থাকায় বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকরা জরিমানা সুদ দাবি করেন। এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও আইনজ্ঞদের মতামত নেয়া হচ্ছে। তার ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।