নিজস্ব প্রতিবেদক : যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ চিকিৎসায় জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের অনুমতি পাওয়া অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির উৎপাদনের পর ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের গবেষণাগারে তার নমুনা জমা দিয়েছে এসকেএফ এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।
অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমীন শনিবার জানান, শনিবার এসকেএফ তাদের উৎপাদিত ওষুধের নমুনা জমা দিয়েছে। আর বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস তাদের নমুনা গত বুধবার জমা দিয়েছে বলে জানান তিনি।
রুহুল আমীন বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে প্রতিষ্ঠানগুলো রেমডেসিভির বাজারজাত করার অনুমতি পাবে।তারা অথরাইজেশনের জন্য আবেদন করবে। পরীক্ষার ফলাফল যদি সন্তোষজনক হয় তাহলে তারা মার্কেটিংয়ের অনুমতি পেয়ে যাবে।
তবে শুক্রবার বেক্সিমকোর তৈরি ওষুধের নমুনা জমা দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি প্রতিষ্ঠানটির চিফ অপারেটিং অফিসার রাব্বুর রেজা।
তিনি জানিয়েছিলেন, তারা এ মাসেই ওষুধটি বাজারজাত করতে পারবেন।ওষুধ জমা দেওয়ার বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরও এর আগে কিছু জানায়নি।এসকেএফ, বেক্সিমকো ছাড়াও বাংলাদেশে ইনসেপ্টা, স্কয়ার, এসকেএফ, বিকন, হেলথ কেয়ার, পপুলার এবং অপসোনিন ফার্মাসিউটিক্যালসকে ওষুধটি উৎপাদনের অনুমতি দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।
রেমডেসিভির তৈরি করেছে মার্কিন কোম্পানি গিলিড সায়েন্সেস কোম্পানি। নানা বিতর্কের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন গত সপ্তাহে নভেল করোনাভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ‘জরুরি প্রয়োজনে’ রেমডিসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
ওষুধ শিল্পে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মেধাস্বত্ব-সম্পর্কিত চুক্তির বিধিবিধান বা ট্রেড রিলেটেড অ্যাস্পেক্টস অব ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইটস (ট্রিপস) চুক্তি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আইনগতভাবে ওষুধটি বানাতে পারে।
রেমডেসিভির উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করার কথা জানিয়ে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মুক্তাদির বলেন, আমাদের এখানে এক্সপেরিমেন্ট চলছে। কোনো একটা পর্যায়ে যদি ঠিক না হয় তাহলে আবার সেটা করতে হবে। এ কারণে সময়টা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। আমরা উৎপাদন শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ অতি দ্রুততার সঙ্গে এটি দিয়ে দিতে পারব।
এই ওষুধ তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি গিলিড সায়েন্সেস। নানা আলোচনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন-এফডিএ গত সপ্তাহে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় জরুরি প্রয়োজনে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
রেমডেসিভির তৈরি হয়েছিল ইবোলার চিকিৎসার জন্য। গত ২৯ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র সরকার জানিয়েছিল, হাসপাতালে রেমডেসিভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগে কোভিড-১৯ রোগীদের উপসর্গের স্থায়িত্ব ১৫ দিন থেকে কমে ১১ দিনে নেমেছে।
বিশেষজ্ঞরা এই ফলাফলকে দুর্দান্ত বলে স্বাগত জানালেও বলেছিলেন, এ ওষুধ কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ম্যাজিক বুলেট’ হবে না, সেটাও মনে রাখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (এনআইএআইডি) পরিচালিত ওই পরীক্ষায় এক হাজার ৬৩ জন রোগীকে এই ওষুধ দেওয়া হয়। তবে মৃত্যু ঠেকাতে এ ওষুধের প্রভাব এখনও স্পষ্ট নয়।
রেমডেসিভির পাওয়া রোগীদের মধ্যে মৃত্যুহার ছিল ৮ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ১১ শতাংশ। ওষুধ এই পার্থক্য তৈরিতে কোনো ভূমিকা রেখেছে কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
ওষুধ শিল্পে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মেধাস্বত্ব-সম্পর্কিত চুক্তির বিধিবিধান বা ট্রেড রিলেটেড অ্যাস্পেক্টস অব ইন্টেলেকচ্যুয়াল প্রপার্টি রাইটস (ট্রিপস) চুক্তি অনুযায়ী স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ আইনগতভাবে ওষুধটি তৈরি করতে পারে।বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১৩ হাজার ১৩৪ জনের দেহে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ২০৬ জনের। তবে আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে, গত ২৪ ঘণ্টায়ই আক্রান্ত হয়েছেন ৭০৯ জন।