রেমালে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ান

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশও আজ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর জন্য এই ক্ষতি মারাত্মক আকার ধারণ করে। উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ হয়ে পড়ে গৃহহীন, বিদ্যুৎহীন, খাদ্য ও বাসস্থানহীন। সম্প্রতি সর্বশেষ আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘রেমাল’। এর মধ্যে উপকূল অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড়টি। ১০ জনেরও অধিক মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। গত রোববার রাত আটটার দিকে এই ঘূর্ণিঝড়টির কেন্দ্র মোংলার দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া উপকূল অতিক্রম শুরু করেছিল। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলাসহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যায়। বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি হয়। খুলনায় ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে ১৬৮ কোটি ৫৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার মৎস্য সম্পদ এবং ৭৬ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে বৃষ্টি ও ঝড় হাওয়া বইছে। যার কারণে বিভিন্ন স্থানে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা জলাবদ্ধতার কারণে চলাফেরা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সারাদেশে প্রায় দেড় কোটি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে। এভাবে চলতে থাকবে আরও কয়েকদিন, ফলে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সবার কর্তব্য। ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে যে কাজগুলো দ্বারা আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে পারি তা হলোÑ

রাস্তাঘাটের ওপর উপড়ে পড়া গাছপালা সরিয়ে ফেলা, যাতে সহজে সাহায্যকারী দল আসতে পারে এবং দ্রুত যোগাযোগ সম্ভব হয়।

আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষকে বাড়ি ফিরতে সাহায্য করা এবং নিজের ভিটায় বা গ্রামে অন্যদের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয়া। অতি দ্রুত উদ্ধার দল নিয়ে খাল, নদী, পুকুর ও সমুদ্রে ভাসা বা বনাঞ্চলে বা কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধার করতে সাহায্য করা। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণ যাতে শুধু এনজিও বা সরকারি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজে যেন অন্যকে সাহায্য করে, সে বিষয়ে সবাইকে সচেষ্ট করা। দ্বীপের বা চরের নিকটবর্তী কাদার মধ্যে আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারের জন্য দলবদ্ধ হয়ে দড়ি ও নৌকার সাহায্যে লোক উদ্ধারকাজ শুরু করা যায়। কাদায় আটকে পড়া লোকের কাছে দড়ি বা বাঁশ পৌঁছে দিয়ে তাকে উদ্ধারকাজে সাহায্য করা যায়। পুকুরের বা নদীর পানি ফুটিয়ে পান করতে সবাইকে সচেষ্ট করা। বৃষ্টির পানি ধরে রাখারও পরামর্শ দেয়া যেতে পারে, যদি বন্যার মতো অবস্থা না হয়। নারী, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও অসুস্থ লোকদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ত্রাণ বণ্টন করতে সাহায্য করা, সবার কাছে যেন ত্রাণ পৌঁছে সেদিকে লক্ষ্য রাখাও কর্তব্য। দ্রুত উৎপাদনশীল ধান ও শাকসবজির জন্য জমি প্রস্তুত করতে কৃষকদের সাহায্য করা, বীজ সংগ্রহ এবং কৃষিকাজ শুরু করতে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া, যাতে যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি ফসল ঘরে আসে। এছাড়া বিভিন্ন উপায়ে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানো যায়। আমাদের সবার উচিত ঘূর্ণিঝড় ‘রেমালে’ ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের পাশে দাঁড়িয়ে মানবতার পরিচয় দেয়া, সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি নিজেদের উদ্যোগেও ত্রাণ বিতরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা উচিত। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যথাসম্ভব আমাদের সাহায্য করা উচিত। তাহলে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে আমরা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে হওয়া ক্ষয়ক্ষতি ভুলে আবার স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যেতে পারব।

মোহাম্মদ আবদুর রহমান

শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০