রেমিট্যান্স কমে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখুন

জনমানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি, অর্থ পাচার প্রতিরোধ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক আয় বৈধ উপায়ে দেশে আনার লক্ষ্যে দুই শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়। চলতি বছরের প্রথম দিন থেকেই বৈধ উপায়ে দেশে অর্থ পাঠানো উৎসাহিত করতে বিদ্যমান দুই শতাংশ প্রণোদনা আরও বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করেছে সরকার।

২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্সের বিপরীতে দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা দেয়ার পর ব্যাংকিং চ্যানেলে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় এক হাজার ৮২০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। এবার প্রণোদনা বৃদ্ধির পরও রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায়নি। গতকাল শেয়ার বিজের ‘অর্ধেকে নেমেছে রেমিট্যান্স’ শীর্ষক প্রতিবেদেনে বলা হয়, চলতি ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৭ দিনে ৬৮ কো?টি ৫৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। গত বছর ফেব্রুয়ারির প্রথম ১৮ দিনে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছিলেন ১২৭ কো?টি ৭৬ লাখ ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ১০ হাজার ৮৬০ কোটি টাকা। 

কভিড মহামারির মধ্যেও গত বছর রেমিট্যান্সে ঊর্ধ্বমুখী ধারা ছিল। সংক্রমণ কমেছে, ক্রমেই স্বাভাবিক হচ্ছে পরিস্থিতি। এ অবস্থায়  রেমিট্যান্স-প্রবাহে ভাটা পড়তে শুরু করা অপ্রত্যাশিত। কভিড সংক্রমণ শুরুর পর লকডাউনে অনিশ্চয়তার আশঙ্কায় প্রবাসী কর্মীদের অনেকে জমানো টাকা দেশে পাঠাচ্ছিলেন। কেউ চাকরি হারিয়ে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ করে সব অর্থ পাঠিয়ে দেশে ফিরেছেন। অনেকে কর্মস্থলে ফিরতে পারেননি, কেউ দেশেই আয়বর্ধক কোনো কাজে জড়িয়েছেন। তাই প্রবাসী কর্মীর সংখ্যা কমেছে। কভিডকালে প্রবাসী শ্রমিকদের কল্যাণে কভিড ভ্যাকসিন পাওয়ার পদ্ধতি সহজ করা হয়েছে। টিকা প্রাাপ্তিতে প্রবাসী শ্রমিকদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং তাদের ক্ষেত্রে বয়সভিত্তিক নিয়মও শিথিল করা হয়। নিশ্চয়ই সেটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তাতে প্রবাসী শ্রমিকরা উপকৃত হয়েছেন। সংঘবদ্ধ চক্র উড়োজাহাজের টিকিটের দাম নিয়ে কারসাজি করায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রবাসী শ্রমিকরা। সরকার প্রবাসীদের দুর্ভোগ আমলে নিয়ে কারসাজিকারীদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা সংস্থাকে কাজে লাগিয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই উড়োজাহাজের টিকিট নিয়ে কারসাজি বন্ধ হবে।

বিদেশগামী শ্রমিকরা কর্মস্থলে যাওয়ার প্রাক্কালে কী ধরনের সমস্যায় পড়েন, সেটি চিহ্নিত করে কার্যকর ব্যবস্থা নিলে তারা ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হবেন। কোনো ব্যক্তি বা এনজিও থেকে না নিয়ে তারা ব্যাংক থেকে সহজে ঋণ নিতে পারেন, যেন কাউকে জমিজমা বিক্রি না করতে হয়। তাদের বোঝাতে হবে, ব্যাংকের মাধ্যমে গেলে নিজের সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করতে হবে না, আবার ব্যাংক সার্বিক কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পরই সংশ্লিষ্ট শ্রমিকের জন্য টাকা পরিশোধ করবে। এতে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ কমবে। বিদেশে আমাদের দূতাবাস যাতে কর্মীদের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করে, সে বিষয়েও যতœবান হতে হবে। শ্রমিকরা যৌক্তিক নীতিসহায়তা পেলে দেশের প্রতি দায়বোধ থেকেই বৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠাতে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আমরা মনে করি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০