রেমিট্যান্স গ্রহণে নির্ভরশীল হয়ে উঠছে এজেন্ট ব্যাংকিং

শেখ আবু তালেব: ব্যাংকের শাখাগুলো গ্রামীণ এলাকা থেকে দুই থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে থাকে। কিছু এলাকায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের শাখা মেলে না। আবার অনেক উপজেলা শহরেও সব ব্যাংকের শাখা নেই। তাই মাস শেষে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স আনতে পুরো একটি দিন চলে যায়। এখন নিকটস্থ এজেন্ট ব্যাংকিং থেকেই সেই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ফলে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স গ্রহণের পরিমাণ বেড়ে চলছে দ্রুত গতিতে।

মাত্র এক বছরের ব্যবধানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স গ্রহণের হার বৃদ্ধি পায় শতভাগের ওপর। অর্থাৎ এক বছরে দ্বিগুণের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে এমন তথ্য।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ২৮টি ব্যাংক অনুমোদন পেলেও ২৪টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করতে পেরেছে। সবগুলো আমানত সংগ্রহ শুরু করলেও মাত্র ৯টি ব্যাংক ঋণ বিতরণ শুরু করেছে। অনুমোদন পাওয়া ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ শুরু করলে গ্রামীণ এলাকার উদ্যোক্তারা লাভবান হবেন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।

এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা হলো যেখানে ব্যাংকের শাখা নেই, সেখানে বৈধ এজেন্সি চুক্তির অধীনে এজেন্ট নিযুক্ত করে ব্যাংক। এটিরও অনুমোদনে নিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি। পরিচালনা ব্যয় বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলো সাধারণত বাণিজ্যিক এলাকা ছাড়া শাখা স্থাপন করে না। এতে তৃণমূল পর্যায়ের জনগণ তথা জনসংখ্যার বিশাল অংশই ব্যাংকিং সেবার বাইরে থেকে যায়। বাংলাদেশে এই হার প্রায় ৪৮ শতাংশ।

তৃণমূল পর্যায়ে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছাতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করা হয় বাংলাদেশে। এতে গ্রাহক সেবার বিপরীতে ব্যাংক থেকে কমিশনের ভিত্তিতে কাজ করেন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন পাওয়া আউটলেটের মালিক।

কর্মসংস্থানের সুযোগ হওয়ায় অনেকেই আগ্রহী হয়ে পড়ছেন এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে। খরচের দায় না থাকায় ব্যাংকগুলোও সারা দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সম্প্রসারণ করে চলেছে। এ পর্যন্ত মোট ২৮টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছে। তবে ২৪টি ব্যাংক দেশব্যাপী তাদের এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছিল ১১ হাজার ৯৩৭ কোটি কোটি ৬৯ লাখ টাকা। গত সেপ্টম্বরে আসে ৩৮ হাজার ৩৩৫ কোটি ২৪ লাখ টাকা। প্রবৃদ্ধি ২২১ দশমিক ১৩ শতাংশ। অপরদিকে গত জুন-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পায় ৪৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিতরণকৃত রেমিট্যান্সের ৯০ শতাংশই গ্রামীণ এলাকায় গিয়েছে। অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই ৯০ শতাংশ রেমিট্যান্স বিতরণ হয়েছে। অপরদিকে শহরে থাকা এজেন্টগুলোর মাধ্যমে হয়েছে অবশিষ্ট ১০ শতাংশ।

রেমিট্যান্স বিতরণে সবচেয়ে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংক হচ্ছে ইসলামী ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ও রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং। এর মধ্যে শীর্ষে থাকা ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স বিতরণ হয়েছে মোট ৪৫ শতাংশ। এছাড়া ডাচ্-বাংলার মাধ্যমে ২৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে ১৪ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে তিন দশমিক ২৮ শতাংশ বিতরণ হয়।

অপরদিকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এসব এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আমানত এসেছে ১৩ হাজার ৪০ কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ১১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ। গত জুনের তুলনায় বৃদ্ধি পায় ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ। মোট আমানতের ৭৭ শতাংশই আসে প্রত্যন্ত এলাকা থেকে। বর্তমানে এজেন্ট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ১৬১টিতে। এক বছরের মধ্যে এজেন্ট সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পায়। আউটলেট বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৪ হাজার ১৬টিতে।

এই সময়ে মোট হিসাবের সংখ্যা হয় ৮২ লাখ ২১ হাজারে। হিসাব খোলার প্রবৃদ্ধিও শতভাগ ছাড়িয়ে হয়েছে ১০৭ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর মধ্যে নারী হিসাবধারীর সংখ্যা ৩৭ লাখ ৪৯ হাজার। গ্রামীণ এলাকায় অবস্থিত এজেন্টের সংখ্যা ৭১ লাখ ১১ হাজার।

অবশ্য ঋণ বিতরণ হয়েছে এক হাজার ৮৬ কোটি টাকা। আমানত-ঋণ বিতরণের অনুপাত আট দশমিক ৩৪ শতাংশ। বিতরণকৃত ঋণের ৬৫ শতাংশই গ্রামীণ এলাকায় করেছে ব্যাংকগুলো। মোট বিতরণকৃত ঋণের অর্ধেকই ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে হয়েছে।

বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে শীর্ষ পাঁচে উঠে এসেছে ডাচ্-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, দা সিটি ব্যাংক ও এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। মোট এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ৩০ দশমিক ২২ শতাংশই ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের দখলে। এসব ব্যাংকের কাছেই রয়েছে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মোট হিসাবের প্রায় ৯১ শতাংশ। অপরদিকে মোট আমানতের ৮৭ দশমিক ৭৮ শতাংশই এই পাঁচ ব্যাংকের কাছে।

জানা গেছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সুবিধার আওতায় আনতে সর্বপ্রথম ব্রাজিলে এজেন্ট ব্যাংকিং পদ্ধতি চালু করা হয়। এতে দেশটি ৯৯ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবা দেওয়া সম্ভব হয়। এতে সফলতা পাওয়ায় মেক্সিকো, পেরু, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, ভেনেজুয়েলা, আর্জেন্টিনা, বলিভিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, কেনিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, উগান্ডা, ভারতসহ অনেক দেশ পরবর্তীকালে এটি অনুসরণ করে।

বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংক পথচলা শুরু করে ব্যাংক এশিয়ার হাত ধরে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ব্যাংকও এতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নীতিমালা জারি করে অনুমোদন দেয়। বর্তমানে ডাচ্-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ব্র্যাক, আল-আরাফাহ্

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০