Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 10:12 pm

রেমিট্যান্স পাঠানোর শীর্ষে সৌদি আরব প্রবাসীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে বিভিন্ন দেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন সৌদি আরবের প্রবাসীরা। দেশটি থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের পুরো সময়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৪৫৪ কোটি ১৯ লাখ ডলার। তবে তার আগের অর্থবছর থেকে এ আয় কমেছে ২০ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছে ৫৭২ কোটি ১৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বিদায়ী অর্থবছরে নীতিমালা শিথিল করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, কোনো কাগজপত্র ছাড়াই যত খুশি তত রেমিট্যান্স আনা যাবে। এতে বর্ধিত হারে অর্থাৎ আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা পেতেও কোনো বাধা থাকবে না। এ শিথিলতা চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রবাসী আয় আনতে নীতিমালা শিথিলের পরেও প্রবাহ বাড়ছে না। এর অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানান, যে হারে বিদেশ থেকে শ্রমিক ফিরে এসেছে, ওই হারে যায়নি। দ্বিতীয়ত, দীর্ঘ দুই বছরের বেশি সময়ে চলমান করোনাভাইরাসের প্রভাবের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধেও বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিদায়ী অর্থবছরে দেশটি থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৪৩ কোটি ৮৪ লাখ ডলার,  যা আগের অর্থবছরে এসেছে ৩৪৬ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বরাবরই সৌদি আরব থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসছিল। বিদায়ী অর্থবছরে তৃতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে আরব আমিরাত থেকে। দেশটির প্রবাসীরা ২০৭ কোটি ১৮ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন। চতুর্থ অবস্থানে থাকা যুক্তরাজ্য থেকে ২০৩ কোটি ৯২ লাখ ডলার, পঞ্চম স্থানে থাকা কুয়েতের প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৬৮ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। এছাড়া কাতার থেকে এসেছে ১৩৪ কোটি ৬৪ লাখ ডলার, ইতালি থেকে ১০৫ কোটি ৪২ লাখ ডলার এবং মালেশিয়া থেকে এসেছে ১০২ কোটি ডলার। ওমান থেকে এসেছে ৮৯ কোটি ডলার এবং বাহরাইন থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৬ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দুই হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক তিন বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম। ২০২০-২১ অর্থবছরে দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই মধ্যে রেমিট্যান্সে সরকারি প্রণোদনার হার দুই শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। দেশে বড় অংকের রেমিট্যান্স পাঠানোর শর্তও শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আগে পাঁচ লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠালে তার বিপরীতে প্রণোদনা পেতে হলে আয়ের উৎস দেখিয়ে নথিপত্র ব্যাংকে জমা দিতে হতো। সম্প্রতি সে শর্তও শিথিল করা হয়েছে। তারপরও দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ না বেড়ে উল্টো কমেছে।

রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে তরতর করে বেড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত বছরের আগস্টে রিজার্ভের পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু আমদানি ব্যয়ে অস্বাভাবিক উল্লম্ফনের পাশাপাশি রেমিট্যান্স আয় কমে যাওয়ায় রিজার্ভে সংকুচিত হয়ে এসেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে ১৯৬ কোটি ডলার পরিশোধের পর গত ১২ জুলাই রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে।