রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি আসছে না

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি আসছে না। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া, ব্যাংকিং চ্যানেল-বহির্ভূতভাবে অর্থ দেশে আসা ও কিছু মুদ্রার মান কমে যাওয়ার কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহে গতি আসছে না বলে জানা গেছে।

রেমিট্যান্সসংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৫ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে নভেম্বরে রেমিট্যান্স এসেছে ৯৫ কোটি ১৩ লাখ ডলার। অর্থাৎ মাত্র ৭৪ লাখ ডলার বেশি এসেছে। আর গত পাঁচ বছরের মধ্যে প্রথম কোনো একক মাস হিসেবে নভেম্বরে ১০০ কোটি ডলারের নিচে রেমিট্যান্স দেশে আসে। বিদায়ী বছরের ডিসেম্বরের এ ধারাবাহিকতা বজায় ছিল।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম পড়ে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের আয় কমে গেছে। ফলে তারা দেশে টাকা পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। আবার যারা টাকা পাঠাচ্ছেন তাদের মধ্যেও সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানো বেড়ে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমশক্তি রফতানি কমে যাওয়াও রেমিট্যান্স পতনের একটি কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৬১৬ কোটি ৬৮ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৭৪৮ কোটি ৭১ লাখ ডলার। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৬৩ শতাংশ বা ১৩২ কোটি তিন লাখ ডলার কম রেমিট্যান্স দেশে এসেছে।  এছাড়া ২০১৪-১৫ অর্থবছরের এ সময়ে রেমিট্যান্স এসেছিল ৭৪৮ কোটি ডলারের বেশি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র শুভংকর সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে প্রবাসীদের আয় কমে গেছে। এটা একটা বড় কারণ। এছাড়া অবৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠানো নিয়ে আলোচনা আগে থেকেই ছিল। তবে নতুন করে মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহার করে একটি গ্রুপ সিঙ্গাপুর-মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে প্রবাসীদের বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করে। আর এসএমএসের মাধ্যমে দেশে খবর পৌঁছে দিলে এখান থেকে সেটা পরিশোধ করা হচ্ছে। অর্থাৎ বৈদেশিক মুদ্রাটা আর দেশে আসছে না। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। ট্রেস করার চেষ্টা করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই রেমিট্যান্সের বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন। কারণ আগের বছরগুলোতে দেখা গেছে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রতি মাসেই রেমিট্যান্স বেড়েছে। না বাড়লেও একই পর্যায়ে থেকেছে। কিন্তু এখন সেটা ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। সুতরাং আমরা কাজ করছি এটা থেকে উত্তরণে।’

ডিসেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ২৮ কোটি ১৬ লাখ ডলার। বিশেষায়িত দুটি ব্যাংকের মাধ্যমে ৯৮ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। এছাড়া  বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এক কোটি ১২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

বরাবরের মতোই বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে। ব্যাংকটির মাধ্যমে রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে ১৯ কোটি ৮৬ লাখ মার্কিন ডলার। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে ১০ কোটি সাত লাখ ডলার, সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে ৯ কোটি ৩৭ লাখ ডলার এবং জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে সাত কোটি ৫৫ লাখ ডলার রেমিট্যান্স আহরিত হয়েছে।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০