নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা পাঁচ মাস ধরে কমছে প্রবাসী আয়ের গতি। কভিড-১৯ মহামারির মধ্যে বাড়লেও এখন উল্টো গতিতে চলতে শুরু করেছে। মূলত করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসী আয়ের গতি ক্রমে ধীর হয়ে পড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারিতে যে হারে প্রবাসীরা চাকরি হারিয়েছে, সেভাবে নতুন বৈদেশিক নিয়োগ হয়নি। এ কারণে প্রবাসীদের আয় কমছে।
সর্বশেষ অক্টোবরে দেশে ১৬৫ কোটি ডলারের কম রেমিট্যান্স এসেছে, যা গত ১৭ মাসের মধ্যে সর্বনি¤œ। এটি আগের মাস সেপ্টেম্বরের তুলনায় সাড়ে চার শতাংশ এবং গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ কম। সবমিলে চলতি অর্থবছর প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় ফের হুন্ডি প্রবণতা বেড়েছে। এতে ব্যাংকিং চ্যানেলে কমে গেছে প্রবাসী আয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, করোনার সময়ে দেয়া লকডাউনে বিমান যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ ছিল। মানুষের যাতায়াতের সুযোগ না থাকায় ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক ভ্রমণও স্থগিত হয়ে যায়। ফলে হুন্ডিও বন্ধ থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে আকাশ পরিবহন শুরু হওয়ায় হুন্ডি বেড়ে গেছে। আর হুন্ডি বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকিং বা বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমছে।
২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে দুই শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। চলতি অর্থবছরও এ সুবিধা বহাল রাখা হয়েছে। রেমিট্যান্সে দুই শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেয়ার পর থেকে প্রতি মাসে প্রবাসীরা পরিবার-পরিজনের কাছে বেশি অর্থ পাঠাতে শুরু করেন। এমনকি কভিড সংক্রমণের মধ্যেও তাদের এ অর্থ পাঠানো অনেক বেড়ে যায়। কিন্তু এখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, অক্টোবরে প্রবাসীরা দেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৬৪ কোটি ৬৮ লাখ ডলার। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের মে মাসে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে। এর পর থেকে আর কোনো মাসে এর চেয়ে কম রেমিট্যান্স আসেনি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, আগের মাস সেপ্টেম্বরে দেশে রেমিট্যান্স আসে ১৭২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। আর গত অর্থবছরের অক্টোবরে এসেছিল ২১০ কোটি ২১ লাখ ডলার।
সবমিলে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রেমিট্যান্স এসেছে ৭০৫ কোটি ৫১ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ কম। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রেমিট্যান্স এসেছিল ৮৮১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনে পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১তম মাস মেতেও প্রবাসীরা রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান। ওই মাসে দেশে রেমিট্যান্স আসে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার। তবে এর পর থেকে রেমিট্যান্স কমতে শুরু করে, যা চলতি অর্থবছরের এখন পর্যন্ত অব্যাহত আছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে রেমিট্যান্স আসে ১৯৪ কোটি ডলার। এছাড়া চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে ১৮৭ কোটি ১৪ লাখ ডলার এবং আগস্টে ১৮১ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আসে।
করোনার মধ্যে সদ্যসমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবাসী আয়ে বড় রেকর্ড হয়। গত অর্থবছরে প্রবাসীরা প্রায় পৌনে ২৫ বিলিয়ন ডলার বা দুই হাজার ৪৭৮ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেশে পাঠিয়েছেন, যা কোনো এক অর্থবছরে বাংলাদেশের ইতিহাসে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ছয় বিলিয়ন বা ৩৬ শতাংশ বেশি।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রেকর্ড ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে, যা একক মাস হিসেবে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। এছাড়া আগস্টে ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ, সেপ্টেম্বরে ২১৫ কোটি ১০ লাখ, অক্টোবরে ২১০ কোটি ২১ লাখ, নভেম্বরে ২০৭ কোটি ৮৭ লাখ, ডিসেম্বরে ২০৫ কোটি ছয় লাখ, জানুয়ারিতে ১৯৬ কোটি ১৯ লাখ, ফেব্রুয়ারিতে ১৭৮ কোটি ও মার্চে ১৯১ কোটি ৯৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স আসে।