Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 4:35 am

রেমিট্যান্স বাহন হোক ‘পেপাল’

সোমবার বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) মিলনায়তনে ‘বুস্ট ইউর বিজনেস’ শীর্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা সুখবর নিঃসন্দেহে। তিনি জানিয়েছেন, আগামী ১৯ অক্টোবর আইসিটি মেলায় বাংলাদেশে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করবে অন্যতম বৃহৎ অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম ‘পেপাল’। ঘটনাটি সুখবর প্রথমত এ জন্য যে, স্থানীয় অসংখ্য ফ্রিল্যান্সারের বহুদিনের দাবি ছিল এটি। ২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রূপকল্পের প্রতিশ্রুতি মেলার পর দাবিটি আরও জোরালো হয়েছিল। সে দিক বিবেচনায় অনেকেই হয়তো বলবেন পেপালের বাংলাদেশ যাত্রা সুখবর বটে; কিন্তু সুখবরটা এলো বেশ দেরিতে। আমরা মনে করি, খানিকটা বিলম্ব হলেও পেপালের প্রয়োজনীয়তা ফুরোয়নি এখনও; বরং ‘বেটার লেট দ্যান নেভার’। দ্বিতীয়ত, যে সময় পেপাল চালুর জোর দাবি উঠেছিল কোনোরকম নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা ছাড়া সেবাটি চালু হলে দুই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারত। এক. সেবাটির অপব্যবহার; দুই. সেবাটির অপচয়-সংক্রান্ত। এ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে পেপাল উপযুক্ত সময়ই চালু হয়েছে বলে প্রতীয়মান। তবু খেয়াল রাখা দরকার, পেপালের অপব্যবহার কিংবা এর অপচয়ের ঝুঁকিগুলো এখনও পুরোপুরি তিরোহিত নয়। বিশেষত সেবাটি যেন মানি লন্ডারিং বা সন্ত্রাসে অর্থায়নের মতো বেআইনি কাজে ব্যবহৃত না হতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।

আমাদের প্রতিবেদক জানিয়েছেন, শুরুতে রাষ্ট্রায়ত্তসহ বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের সহায়তায় পেপাল কার্যক্রম চালু করা হবে সীমিত পরিসরে। পর্যায়ক্রমে সেবাটির পরিধি ও বিস্তার সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে ১৯ অক্টোবর সেবাটি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার আগেই এর ব্যবহার-সংক্রান্ত নীতি-নির্দেশনা সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোকে প্রদান করা, যেন শুরু থেকেই এর মাধ্যমে সন্দেহজনক লেনদেন রোধ করা যায়। পেপাল একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে তার আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডও দাঁড়িয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির জন্মদাত্রী যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হস্তক্ষেপের কারণেও মানি লন্ডারিং থেকে শুরু করে নানা আর্থিক অপরাধ প্রতিরোধে নিজস্ব উদ্যোগ নিয়েছে পেপাল। বৈশ্বিক সে অনুশীলনগুলো বাংলাদেশেও সক্রিয় থাকবে তেমন প্রত্যাশা সবার। লেনদেনের এ আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্ম ঘিরে ভিন্ন ধরনের আশাও রয়েছে কারও কারও। সেটি হলো নানা কারণে প্রচলিত ব্যাংকিং চ্যানেল সেভাবে রেমিট্যান্স আকর্ষণ করতে পারছে না। অবশ্য এটা অভিযোগ নয়, বাস্তবতা। তার প্রধান কারণ হিসেবে রেমিট্যান্স আহরণে প্রচলিত ব্যাংকিং অনুশীলনের জটিলতাকেই দায়ী করে আসছেন অনেকে। এ অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই সে কথা বলা যাবে না। অনেকের মতে, এক্ষেত্রে অন্যতম বিকল্প হতে পারে ‘পেপাল’। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিনির্ভর হওয়া সত্তে¡ও পেপাল লেনদেনের জটিল কোনো পদ্ধতি নয়। সুতরাং দক্ষরাই কেবল নন, অর্ধদক্ষ ও অদক্ষ কর্মীরাও সেবাটির সুযোগ নিতে সক্ষম। অন্তত সে সম্ভাবনা যে পেপালের রয়েছে এ কথা অস্বীকার করা যাবে না। তবে সম্ভাবনাটি কতটুকু বিকশিত হবে, তা নির্ভর করে এর নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর ওপর। আবারও বলা দরকার, পেপাল যেন মানি লন্ডারিংয়ে ব্যবহৃত না হয়, তার জন্য সর্বোচ্চ তদারকি নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রেও নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা যেন সেবাটির শ্বাসরোধ করে না বসে, তার দিকে খেয়াল রাখা চাই। কেননা অধিক সংকুচিত ও জটিল হয়ে উঠলে সেবাটি আকর্ষণ হারাবে; পরিণামে পেপাল হারাবে বাংলাদেশি রেমিট্যান্সের অন্যতম বাহন হওয়ার সম্ভাবনা।