ইসমাইল আলী: প্রবাসীরা বিদেশ থেকে প্রতি মাসে যে অর্থ পাঠান তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয়। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ঢাকা বিভাগ। এ দুই বিভাগেই মোট রেমিট্যান্সের প্রায় ৭৩ শতাংশ আসে। অন্য বিভাগের জেলাগুলোয় রেমিট্যান্স আসার হার তুলনামূলক অনেক কম। আর এ রেমিট্যান্সের ৮০ শতাংশের বেশি আসে প্রবাসীদের স্ত্রী ও সন্তানদের কাছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘আর্থসামাজিক ও জনমিতিক জরিপ ২০২৩’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। ২০২২ সালে বিবিএসের পরিচালিত ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ৬৪ দশমিক ৩৩ শতাংশ প্রবাসী তাদের রেমিট্যান্স ব্যাংক বা এজেন্টের মাধ্যমে পাঠান। বাকিদের মধ্যে ২৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ মোবাইল ব্যাংকিং, ছয় দশমিক ৮৪ শতাংশ আত্মীয়ের মাধ্যমে, পরিচিত/বিশেষ ব্যক্তির মাধ্যমে দুই দশমিক ৫২ শতাংশ, মানি ট্রান্সফারের মাধ্যমে দুই দশমিক ০৭ শতাংশ এবং শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ অন্যান্য মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠান।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, রেমিট্যান্সের ৪৩ দশমিক ৭০ শতাংশই আসে চট্টগ্রাম বিভাগের জেলাগুলোয়। আর ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোয় আসে ২৯ দশমিক ০৩ শতাংশ রেমিট্যান্স। এছাড়া সিলেট বিভাগে আট দশমিক ৩৮ শতাংশ, খুলনা বিভাগে ছয় দশমিক ৬০, রাজশাহী বিভাগে পাঁচ দশমিক ৫৯, বরিশাল বিভাগে তিন দশমিক ১৫, ময়মনসিংহ বিভাগে দুই দশমিক ৩০ এবং রংপুর বিভাগে এক দশমিক ২৫ শতাংশ রেমিট্যান্স আসে।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে ব্যাংকের মাধ্যমে। এ হার ৬৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আসে ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশ অর্থ ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে আসে পাঁচ দশমিক ৬২ শতাংশ অর্থ। চট্টগ্রাম বিভাগে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৬২ দশমিক ১২ শতাংশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে সাত দশমিক ১৫ শতাংশ। আর সিলেটে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৬৮ দশমিক ৫০ শতাংশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ ও আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে তিন দশমিক ৯৪ শতাংশ।

বরিশাল বিভাগে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৬৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। খুলনা বিভাগে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৬০ দশমিক ২৬ শতাংশ, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২৬ দশমিক ০৫ শতাংশ এবং আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে আট দশমিক ৫৫ শতাংশ। অন্য তিন বিভাগে ব্যাংক বা এজেন্টের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার হার তুলনামূলক কম। এক্ষেত্রে ময়মনসিংহ ও রাজশাহীতে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে যথাক্রমে ৫৮ দশমিক ৫১ শতাংশ ও ৫৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর রংপুর বিভাগে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে ৫৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা সবচেয়ে কম। এ তিন বিভাগে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসে যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৬১ শতাংশ, ২৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ ও ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। আত্মীয়স্বজনের মাধ্যমে রেমিট্যান্স আসার হার ময়মনসিংহে সাত দশমিক ৫৩ শতাংশ। রাজশাহী ও রংপুরে এ হার অনেক বেশি। এর মধ্যে রাজশাহীতে এ হার ১০ দশমিক ৪৮ শতাংশ ও রংপুরে ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ।
বিবিএসের তথ্যমতে, প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের অর্থ সবচেয়ে বেশি আসে সন্তানদের কাছে। এ হার ৪২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। এছাড়া স্ত্রীর কাছে রেমিট্যান্সের অর্থ আসে ৩৭ দশমিক ৭৯ শতাংশ প্রবাসীর। তবে মা-বাবার কাছে রেমিট্যান্সের অর্থ আসার হার অনেক কম, যা মাত্র এক দশমিক ০৭ শতাংশ। এছাড়া ভাই-বোনদের কাছে রেমিট্যান্সের অর্থ আসে আট দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবাসীর। এর বাইরে ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ রেমিট্যান্স আসে অন্যান্যদের কাছে। এর মধ্যে আড়াই শতাংশ আসে শ্বশুরবাড়ির লোকজনের কাছে।
এদিকে গ্রামের চেয়ে শহরে স্ত্রী বা সন্তানদের কাছে রেমিট্যান্সের অর্থ আসার হার তুলনামূলক কম। গ্রামাঞ্চলে স্ত্রীর কাছে রেমিট্যান্সের ৩৮ দশমিক ২৭ শতাংশ ও সন্তানদের কাছে ৪৫ দশমিক ১৪ শতাংশ আসে। আর শহরাঞ্চলে স্ত্রীর কাছে রেমিট্যান্সের ৩৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ ও সন্তানদের কাছে ৩৫ দশমিক ০৮ শতাংশ আসে। শহরাঞ্চলে ভাই-বোন বা আত্মীয়স্বজনের কাছে রেমিট্যান্স আসার হার গ্রামের তুলনায় বেশি।