Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 6:06 pm

রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীদের অধিকার সমুন্নত রাখতে পদক্ষেপ প্রয়োজন

 

রেজাউল করিম খোকন : ২০২২ সালে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে নেতিবাচক ধারা থাকলেও এ বছর ২০২৩ সালে প্রবৃদ্ধি অর্জনের পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাটির মতে, দেশের প্রবাসী আয়ে এখন সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এ বছরের শেষে আনুষ্ঠানিক তথা বৈধ চ্যানেলে বাংলাদেশের মোট প্রবাসী আয়ের পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ২৩ বিলিয়ন বা দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংক ও নোমাডের ‘মাইগ্রেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্রিফ ৩৯’-এ বলা হয়েছে, নি¤œমধ্যম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে প্রবাসী আয়প্রাপ্তিতে বাংলাদেশ ২০২৩ সালের শেষেও সপ্তম স্থানে থাকবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তাবলি পালনের কারণে দেশীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে এবং আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের আস্থা ফেরায় প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের শ্রমবাজারের চাঙা ভাব এবং উচ্চ আয়ের দেশগুলোয় মূল্যস্ফীতি কমার কারণে প্রবাসী আয়প্রবাহ বাড়বে। তবে সৌদি আরব ও কুয়েতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে রীতিমতো ধস নামার কারণে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, দেশে গত নভেম্বর মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি। চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯ দশমিক ৯২ বিলিয়ন বা এক হাজার ৯৯২ কোটি ৫৭ লাখ ডলার। ফলে বিশ্বব্যাংকের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২৩ সালের শেষে প্রবাসী আয় ২৩ বিলিয়ন থেকে ৩০৭ কোটি ডলার আরও প্রয়োজন, যেটাকে কঠিন বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবাসী আয়ে অতিরিক্ত প্রণোদনা দেয়ার ফলে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই থেকে নভেম্বরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের আয় পাঠানো বেড়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন ব্যবস্থার কারণে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে বাংলাদেশের প্রবাসী আয় বাড়লেও এই বৃদ্ধির হার একই থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। মূলত ব্যালেন্স অব পেমেন্ট বা বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্যে সংকটের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করায় অনানুষ্ঠানিক বাজার তৈরি হয়েছে। অনানুষ্ঠানিক বাজারে ডলারের দর বেশি থাকায় বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশের প্রবাসীরা বৈধ চ্যানেলের পরিবর্তে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে আয় বেশি পাঠান। ২০২৪ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ভালো হলেও তেলের দাম কমে যাওয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসীদের নতুন কর্মসংস্থান খুব বেশি হবে না। সে কারণে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধি হবে না। ২০২৪ সালেও বাংলাদেশে প্রবাসী আয় দুই হাজার ৩০০ কোটি ডলার, অর্থাৎ সমানই থাকবে। এক কোটি ২০ লাখ প্রবাসী কর্মীর পাঠানো কষ্টার্জিত অর্থ দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছে। বিশেষ করে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে যে ঘাটতি, তার অনেকটাই পূরণ করে থাকেন আমাদের প্রবাসী কর্মীরা। নানা বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে প্রতিবছরই বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। যদিও সেই তুলনায় প্রবাসী আয় বাড়ছে না। এতসব আনন্দের খবরে যে দুঃসংবাদটি আমাদের উদ্বিগ্ন করে, সেটি হলো প্রবাসীদের নিরাপত্তাহীনতা। প্রবাসে সব হারিয়ে, পুলিশের হাতে আটক হয়ে এবং বাধ্য হয়ে শূন্য হাতে ফিরে আসা শ্রমিকের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারের বিপরীতে এখন ১১৫ টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। ফলে গত মাসে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়ে বড় পতন দেখা গেলেও চলতি মাসে তা কিছুটা গতি পেয়েছে। বৈধ পথে প্রবাসী আয় নিয়ে এলে সরকার আগে থেকেই ব্যাংকের মাধ্যমে আড়াই শতাংশ হারে প্রণোদনা দিত। দেশে ডলার সংকটের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এখন এই আড়াই শতাংশের পাশাপাশি ব্যাংকগুলো চাইলে অতিরিক্ত আরও আড়াই শতাংশ পর্যন্ত প্রণোদনা দিয়ে প্রবাসী আয় আনতে পারবে। এর ফলে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় আনলে গ্রাহকেরা প্রতি ডলারে কমবেশি ১১৫ টাকা পাচ্ছেন। আগে প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলারে আরও কম টাকা পাওয়া যেত। কারণ তখন প্রবাসী আয়ে ডলারের একটা দাম বেঁধে দেয়া ছিল। তাতে প্রতি ডলারে মিলত ১১০ টাকা। তবে ডলার সংকটের কারণে কোনো কোনো ব্যাংক এর চেয়ে বেশি দামে প্রবাসী আয় কিনত। এখন নতুন নিয়মে সরকারি প্রণোদনার সঙ্গে ব্যাংকের প্রণোদনা যোগ হওয়ার ফলে গ্রাহকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। তাতে প্রবাসীদের মধ্যে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি করে প্রবাসী আয় পাঠানোর প্রবণতা বাড়ছে।

ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য বলছে, এ বছরের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত শূন্য হাতে দেশে ফিরে এসেছেন ৮০ হাজার ৮১১ প্রবাসী। তাদের মধ্যে পুরুষ কর্মী ৭৮ হাজার ৭৯ জন এবং নারী কর্মী দুই হাজার ৭৩২ জন। তবে এর বাইরে যারা পাসপোর্ট নিয়ে ফিরে আসছেন, তাদের কোনো হিসাব নেই এ সংস্থার কাছে। অভিবাসন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ব্যর্থ অভিবাসনের প্রকৃত চিত্র আরও নাজুক। প্রবাসী কর্মীর ভ‚মিকা ও তাদের অধিকারকে সম্মানিত করার বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়েছে জাতিসংঘ। দেশেও এবার অভিবাসন দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘প্রবাসী কর্মীরা উন্নয়নের অংশীদার, সমুন্নত রাখব তাদের অধিকার’। প্রবাসী কর্মীরা যে উন্নয়নের অংশীদার, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাদের অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে সরকারের ভ‚মিকা নিয়ে প্রশ্ন আছে। প্রথমত, প্রবাসী কর্মীদের বেশিরভাগই যান দালালদের মাধ্যমে, যারা অনেক বেশি টাকা দিতে হয়। প্রবাসী কর্মীরা দালালদেরই বেশি টাকা দিচ্ছেন, তা নয়, ভুয়া কাগজপত্র নিয়ে যাওয়ার কারণে গন্তব্য দেশটিতে তারা নানা রকম হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হন। যে চাকরির কথা বলে তাদের বিদেশে নেয়া হয়, সেই চাকরি দেয়া হয় না। একজন কর্মীও বিদেশে গিয়ে যাতে প্রতারিত হয়ে ফিরে না আসেন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে সরকার। কিন্তু সরকারের এই চেষ্টার ফল বাস্তবে দেখা যাচ্ছে না বলেই অধিকসংখ্যক প্রবাসী কর্মী চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে কিংবা কাজ না করেই ফিরে আসতে বাধ্য হন। প্রবাসী কর্মীদের ফিরে আসার আরেকটি কারণ অদক্ষতা। হয়রানি ও প্রতারিত হওয়া থেকে প্রবাসী কর্মীদের রক্ষা করতে হলে প্রতিটি নিয়োগ ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখতে হবে। কাগজপত্র ঠিক থাকা সত্তে¡ও তারা যাতে বিদেশে হয়রানির শিকার না হন, গন্তব্য দেশটিকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোকে নিবিড়ভাবে তদারক করতে হবে। নানামুখী পদক্ষেপ সত্তে¡ও যদি কোনো প্রবাসী কর্মী শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হন, তাহলে দেশে তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি। আর বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে না পারলে তারা যাতে আত্মকর্মসংস্থান গড়ে তুলতে পারেন, সেজন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে হবে। তবে সবকিছুর ওপরে প্রবাসী কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভ‚মিকা অনেক। তারা জিডিপিতে ছয় থেকে সাত শতাংশ অবদান রাখছেন। বাংলাদেশের কর্মীরা যেকোনো ধরনের কাজ করতে পারেন। তাদের দক্ষ করে তুলতে হবে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা প্রমাণ হয়েছে কভিড মহামারির সময়। কভিডের পরপর শুরু হওয়া বর্তমান বিশ্বব্যাপী অভ‚তপূর্ব আর্থসামাজিক-রাজনৈতিক সংকটেও প্রবাসীদের পাঠানো বৈদেশিক মুদ্রাই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্বল। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতি ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভ‚মিকা রাখছে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প উৎপাদন, স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ, হাসপাতাল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডেও এ অর্থ ব্যয় হয়। রেমিট্যান্স আয়ের প্রায় ৬৩ শতাংশ ব্যয় হয় দৈনন্দিন খরচের খাতে। এতে ওই পরিবারগুলোর দারিদ্র্য দূর হয়। রেমিট্যান্স পাওয়ার পর একটি পরিবারের আয় আগের তুলনায় ৮২ শতাংশ বাড়ে। অবশ্য সংখ্যাতাত্তি¡ক এসব হিসাব-নিকাশের বিপরীতে যদি বলা হয় ‘বাংলাদেশ প্রবাসীদের কী দিচ্ছে,’ তাহলে আমাদের বেশ নিরাশ হতে হয়। সরকারের মতে, এক কোটি ২০ লাখেরও বেশি প্রবাসীর অধিকার, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রধান দায়িত্ব শ্রমকল্যাণ উইংয়ের। কিন্তু বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশি কর্মীরা গেলেও তাদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় ২৬টি দেশের বাংলাদেশ মিশনে শ্রমকল্যাণ উইং আছে মাত্র ২৯টি, যার মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব ও ইতালিতে দুটি করে। সৌদি আরবে ২৩ লাখের বেশি বাংলাদেশি শ্রমিকের যে দুটি উইং আছে, সেখানে জনবল মাত্র ১২ জন। এত প্রবাসীর সেবা নিশ্চিত করা ওই ক্ষুদ্র জনবল দিয়ে কীভাবে সম্ভব? আর যেসব দেশে উইং নেই, তাদের জন্য কী হবে? বিপদগ্রস্ত, দুর্ঘটনাকবলিত ও বঞ্চিত প্রবাসীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, নারী কর্মীদের নিগ্রহ থেকে বাঁচানো; লাশ হওয়া বাংলাদেশির অধিকার রক্ষা, ক্ষতিপূরণ আদায়সহ প্রবাসীদের যাবতীয় সমস্যার দেখভাল করাই মূলত শ্রমকল্যাণ উইংয়ের কাজ। কিন্তু প্রবাসীরা দীর্ঘদিন ধরেই এ নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশের ইমিগ্র্যান্ট নাগরিকদের তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবেই গণ্য করা হয়। উন্নত সব দেশেও একই অবস্থা। নাগরিক হয়েও যদি তারা তৃতীয় শ্রেণির হন, তাহলে অদক্ষ ও অল্প দক্ষ শ্রমিক কর্মীরা কী সমাদর পান, সহজেই অনুমেয়। প্রবাসীদের আমরা কাগজ-কলমে অর্থনীতির মেরুদণ্ড বলি। অথচ প্রায়ই পত্রপত্রিকায় খবর দেখা যায়, নিজের দেশের বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের প্রচণ্ড দুর্ভোগের মুখে পড়তে হয়। হয়রানির শিকার হওয়া তো তাদের নিয়তির লিখন। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার এই দুঃসময়ে অনেকে ‘ভিআইপি মর্যাদা’ নিয়ে খোদ বিমানবন্দর দিয়ে ডলার পাচার করছেন। প্রবাসী কর্মীদের সমস্যার কথা লিখে শেষ করা যাবে না। তাদের ভোগান্তি যেন শুরু হয় ঘর থেকেই। আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের বেশিরভাগ গ্রামের অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত মানুষ। দালালরা প্রবাসজীবনের কষ্টের কথা গোপন করে উচ্চ বেতন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কাজের জায়গা এবং রাজকীয় জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখিয়ে বিদেশ পাঠানোর ফাঁদে ফেলে। তারপর পাসপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, ডাক্তারি পরীক্ষা, ভিসা, ইমিগ্রেশন, স্মার্টকার্ড, বিমানভাড়া প্রভৃতির কথা বলে সূ²ভাবে হাতিয়ে নেয় প্রয়োজনের দ্বিগুণ টাকা। সহজ-সরল এসব মানুষ প্রবাসে গিয়ে দুর্দিন পার করেন। অনেক সময় বিদেশের কর্মস্থলে অমানবিক অবস্থা সত্তে¡ও বাংলাদেশি শ্রমিক-কর্মীকে বাধ্য হয়ে দাসের জীবন কাটাতে হয়। কারণ বিপুল অর্থ খরচ করে তাকে প্রবাসে যেতে হয়েছে, যা তিনি জমি বেচে অথবা এনজিওর উচ্চ সুদের ঋণ করে সংগ্রহ করেছেন। এ অবস্থার অবসান হওয়া প্রয়োজন। প্রবাসীদের ভোগান্তি দূর করতে প্রবাসজীবনের শুরু থেকে কাজ করতে হবে। প্রবাস সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ দালালের ফাঁদে না পড়েন। মানব পাচারকারীদের কঠোরভাবে দমন করতে হবে। দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের নির্মূলে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের শ্রমশক্তিকে দক্ষ শক্তিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে কর্মসূচি নিতে হবে। তাদের বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে হবে। রেমিট্যান্সের প্রবাহ ঠিক রাখতে দক্ষদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। বিমানবন্দরে আসা-যাওয়ার পথে চরম ভোগান্তি দূর করতে হবে। প্রবাসীদের যাতায়াতে দেশের বিমানবন্দরগুলোয় পৃথক চ্যানেল প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তারাই আমাদের অর্থনীতির প্রাণÑএ বিবেচনায় প্রয়োজনীয় সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, শত প্রতিক‚লতার মধ্যেও বাংলাদেশের অর্থনীতির অব্যাহত অগ্রযাত্রা বিশ্ববাসীর কাছে এখন এক অনুপ্রেরণার নাম, যার মূল কারিগর রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মহামন্দার দুঃসময়ে বাংলাদেশকে উদ্ধারে প্রবাসে অবস্থানরত বাংলাদেশি ভাইবোনরাই সর্বাগ্রে এগিয়ে আসেন। তাই তাদের যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়া আমাদের কর্তব্য। প্রায় দুই বছর ধরে প্রতি মাসে গড়ে এক লাখের মতো কর্মী যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। অথচ প্রবাসী আয় তেমন বাড়ছে না। দক্ষ কর্মীর অভাবই এর জন্য দায়ী। প্রবাসী আয় বাড়াতে হলে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ কর্মী তৈরি করে বিদেশে পাঠাতে হবে। অনেক কর্মী পাঠানো হচ্ছে কিন্তু মাথাপিছু প্রবাসী আয় অনেক কম। অনেক দেশ কম লোক পাঠিয়ে বাড়তি প্রবাসী আয় নিয়ে আসে। কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শুধু আর্থিক অবদান নয়, প্রবাসীদের সামাজিক অবদানেরও স্বীকৃতি থাকা দরকার। আর দেশে ফিরে এসেও প্রবাসীরা যাতে অর্থনীতিতে ভ‚মিকা রাখতে পারে, সেজন্য প্রকল্পের মাধ্যমে সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার, কলাম লেখক