Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 1:08 pm

রেয়ার আর্থ রপ্তানি নিষিদ্ধ করছে মালয়েশিয়া

শেয়ার বিজ ডেস্ক: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম গত সোমবার জানান, তার দেশ রেয়ার আর্থ (বিরল ধাতু বা দুর্লভ খনিজ পদার্থ) রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে যাচ্ছে। এজন্য একটি আইন প্রণয়ন করার কথা জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে এ দুর্লভ খনিজ পদার্থের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় সবশেষ যুক্ত হলো মালয়েশিয়া। খবর: রয়টার্স।

মালয়েশিয়ায় দুর্লভ খনিজ পদার্থের বিশাল মজুত রয়েছে। দেশটিতে প্রায় ৩০ হাজার মেট্রিক টন বিরল ধাতু রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভের তথ্যে দেখা গেছে। ২০১৯ সালে এ জরিপের ফল প্রকাশ করা হয়। বিরল ধাতুর সবচেয়ে বেশি মজুত চীনের, যার পরিমাণ আনুমানিক ৪৪ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ৪০ লাখ টন।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে চীনের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর বৈরিতার কারণে অন্যান্য দেশের বিরল ধাতুর ওপর নজর দিয়েছে দেশগুলো। এ কারণে মালয়েশিয়া নিজেদের শিল্পের উন্নয়নের স্বার্থে বিরল ধাতুর ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যাচ্ছে।

এই বিরল ধাতু দিয়ে …।

আনোয়ার বলেন, সরকার এ ধাতু শিল্পের উন্নয়নে সহায়তা করতে চায়। তাই নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে আখেরে দেশেরই উন্নতি হবে। তবে তিনি জানাননি, কবে থেকে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে।

মালয়েশিয়ার মোট দেশজ প্রবৃদ্ধি বা জিডিপি বিশাল অবদান রাখে বিরল ধাতুন। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ দেশটির জিডিপিতে ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন রিংগিত (২ বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার) অবদান রাখবে এ ধাতু। এ খাতে মোট ৭ হাজার মানষের কর্মসংস্থান হবে বলে সংসদে জানান আনোয়ার।

‘রেয়ার আর্থের উৎস অনুসন্ধান করা হবে। ব্যবসায়ে একে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তার সমন্বিত উপায় খুঁজে বেরা করা হবে। সরবরাহ শৃঙ্খল ঠিক রাখার জন্য আপস্ট্রিম, মিডস্ট্রিম ও ডাউনস্ট্রিম শিল্পগুলোর উন্নয়ন করা হবে’, বলেন আনোয়ার।

প্রসঙ্গত, তেল ও গ্যাস শিল্পে আপস্ট্রিম বলতে অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস আহরণ ও উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়। মিডস্ট্রিমের বেলায় অপরিশোধিত তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহন প্রতিষ্ঠান এবং ডাউনস্ট্রিম দিয়ে তেল ও গ্যাসের পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বোঝানো হয়।

মালয়েশিয়ার এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়বে চীনের বিরল ধাতু আমদানির ওপর। চলতি বছরের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোয় উৎপাদিত মোট দুর্লভ খনিজ পদার্থের ৮ শতাংশ আমদানি করে চীন। দেশটির শুল্ক তথ্য অনুযায়ী, এ খবর জানা গেছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এর বাইরে আরও বেশি পরিমাণে আকরিক আমদানি করেছে চীন।

চলতি বছরের শুরুর দিকে চীনও সেমিকন্ডাক্টরে ব্যবহƒত কিছু ধাতু রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেয়। মূলত যুক্তরাষ্ট্র চীনের প্রযুক্তি খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

প্রজেক্ট ব্ল–-এর বিশ্লেষক ডেভিড মেরিম্যান বলেন, বিস্তারিত তথ্য না থাকার কারণে মালয়েশিয়ার এ নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না, তবে এর ফলে মালয়েশিয়ায় কার্যক্রম চালিয়ে আসা চীনা কোম্পানিগুলো বেকায়দায় পড়তে যাচ্ছে। নতুন আইন প্রণয়ন করা হলে মালয়েশিয়ায় চীনা বিনিয়োগের প্রভাব পড়বে। চীন এশিয়ার অন্য দেশগুলো থেকে দুর্লভ খনিজ পদার্থ নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের প্রসেসিং (প্রক্রিয়াজাত) করে থাকে।

চীনের বাইরে অস্ট্রেলিয়ার লিনাস রেয়ার আর্থ লিমিটেড বিরল ধাতুর সবচেয়ে বড় উৎপাদক। তাদের কাছে মন্তব্যের জন্য যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

রেডিয়েশন ঝুঁকির কারণে মালয়েশিয়া ইতোমধ্যে লিনাসের কিছু কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। তবে লিনাস সব ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।