রেলে ভ্রমণ নিরাপদ, আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হলেও এটি এখনও লাভজনক হয়ে উঠতে পারেনি। সাধারণ মানুষের ধারণা, রেলের কারণেই অনেক ক্ষেত্রে অন্য গণপরিবহন যাত্রীদের জিম্মি করতে পারে না। তাই যোগাযোগ খাতে জনদুর্ভোগ কমাতে এবং শৃঙ্খলা রক্ষায় সংঘবদ্ধ চক্রের কারসাজি রোধেও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে। দুঃখজনক হলো, রেলেও সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয়।
গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১০ মিনিটে ধোয়া যাবে ১৪ কোচের একটি ট্রেন। শ্রমিক লাগবে মাত্র একজন, যিনি যন্ত্র পরিচালনা করবেন। বর্তমানে একেকটি ট্রেন ধোয়ায় ২০ থেকে ২৫ শ্রমিক লাগে। ফলে নতুন প্লান্ট স্থাপনের ফলে জনবল ব্যয় কমবে। সাশ্রয় হবে পানি, আর ধোয়ার পরে চকচক করবে ট্রেন। এসব বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় ৩৬ কোটি টাকায় দুটি স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্লান্ট কিনেছিল রেলওয়ে। যদিও বাস্তবে এগুলো কোনো কাজেই লাগছে না। তা সত্ত্বেও দেশের সব স্টেশনে এ ধরনের প্লান্ট বসানোর সুপারিশ করা হয়েছে। গত বছরের ৮ নভেম্বর উদ্বোধনের পর সংবাদমাধ্যমে ওয়াশিং প্লান্টগুলোর কার্যকারিতা ও নামমাত্র ব্যবহার নিয়ে নানা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে এগুলোর কার্যকারিতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
রেলের ইঞ্জিন ও অন্য যন্ত্রপাতি যথানিয়মে ধোয়া গেলে এগুলো পূর্ণ কার্যকাল সক্রিয় ও কর্মক্ষম থাকে। সে বিবেচনায় ওয়াশিং প্লান্টের গুরুত্ব কম নয়। ওই ওয়াশিং প্লান্টের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। অথচ ওয়াশিং প্লান্ট আদৌ কাজেই লাগছে না। তবুও দেশের প্রত্যেক স্টেশনে তা স্থাপনের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। কোন বিবেচনায় ওয়াশিং প্লান্ট স্থাপন করা হবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। আমাদের মনে হয়, এখানে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় কিংবা লোপাটের সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। অপ্রয়োজনে মানহীন সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া পুনর্বিবেচনা করতে হবে। রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় করার অধিকার কারও নেই।
যেহেতু স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির পাশাপাশি প্রচলিত পদ্ধতিতেও রেলের ধোয়ামোছার কাজ করতে হবে, তাহলে কেনই বা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে। তদন্ত কমিটি বলেছে, ভবিষ্যতে ট্রেনের ভেতরে ও বাইরে উভয় দিক পরিষ্কার করা যায় এমন স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্লান্ট স্থাপনের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি সারাদেশের সব স্টেশনে স্বয়ংক্রিয় ট্রেন ওয়াশিং প্লান্ট স্থাপনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশও করা হয়। হয়তো একসময় সব স্টেশনেই প্লান্ট স্থাপন করতে হবে। কিন্তু সম্ভাব্যতা যাছাই, সমীক্ষা ছাড়াই সব স্টেশনে প্লান্ট স্থাপন ঠিক হবে না। এর আগে তাড়াহুড়ো করায় অনেক প্রকল্প বাতিল করতে হয়েছে, ব্যয় বেড়েছে বহুগুণ। আধুনিক যুগে আধুনিক প্রযুক্তিতে ঝুঁকছে বিশ্ব। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু ওয়াশিং প্লান্ট স্থাপনের নামে রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয় কাম্য নয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মাধ্যমে রেলওয়ের দুর্নীতি ও অর্থ অপচয় রোধে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে বলেই প্রত্যাশা।