রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পেয়েও আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো লাভজনক হয়ে উঠছে না। টিকিট কম্পিউটারাইজড (ই-টিকিটিং) হলে রেলযাত্রীরা উন্নত মানের সেবা পাবেন, রেলও আয়বঞ্চিত হবে না। এ পদ্ধতিতে ট্রেনের সময়সূচি, কোন ট্রেনে কত যাত্রী, কত আসন খালি, ট্রেনের অবস্থান, টিকিট বিক্রিতে আয় প্রভৃতি তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়। এতে কালোবাজারি বা অনিয়মের মাধ্যমে টিকিট জালিয়াতিও বন্ধ হবে। যাত্রীসাধারণের সুবিধার কথা বিবেচনায় বাংলাদেশ রেলওয়েও টিকিট বিতরণে আধুনিক পদ্ধতি চালু করেছে। ফলে ঘরে বসে টিকিট সংগ্রহ করা যায়, ট্রেনের অবস্থান জানা যায়। এত দিন রেলের টিকিট দেয়ার দায়িত্বে ছিল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেমস লিমিটেড (সিএনএস)। রেলের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে ২০০৭ সাল থেকে রেলের টিকিট বিক্রির দায়িত্ব পালন করে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর দফায় দফায় এটি বর্ধিত হয় ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত। অবশ্য নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব না পাওয়ায় ওই সময়ের পরও টিকিট বিক্রির দায়িত্বে ছিল সিএনএস।
ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে এসেছে নতুন অপারেটর ‘সহজ লিমিটেড বাংলাদেশ’। যদিও প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়া হয় দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে। সর্বনি¤œ দরদাতা না হলেও বিশেষ শর্তে ট্রেনের টিকিট বিক্রির কাজ পায় কোম্পানিটি। গতকাল শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়, একাধিক বিদায়ী কর্মকর্তা সহজ ডটকমকে চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে কাজটি দেয়ার সুপারিশ করেছিল। আর চুক্তি অনুযায়ী, অপারেটরের যেসব সক্ষমতার শর্ত ছিল, তা সহজ এখনও দেখাতে পারেনি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটিকে রেলের সার্ভার ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয়েছে দরপত্রের শর্ত না মেনে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সম্পাদিত চুক্তির শর্তানুসারে, ২১ কার্যদিবস পর ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু করার কথা সহজ ডটকমের। ব্যর্থতায় প্রতিদিনের জন্য পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। অথচ চুক্তির ২১ কার্যদিবস পর পাঁচ দিন (২১-২৫ মার্চ) তারা টিকিট বিক্রি করতে পারেনি। এ সময় রেলওয়ে হাতে লিখে টিকিট বিক্রি করেছে। তবে অজ্ঞাত কারণে কোম্পানিটিকে এ পাঁচ দিনের জন্য কোনো জরিমানা করা হয়নি।
আধুনিক যুগে হাতে লেখা টিকিট দিয়ে উন্নত সেবা দেয়া সম্ভব নয়। এতে বিনা টিকিটে ভ্রমণ ও অনিয়ম বেড়ে যাবে। অপারেটর সহজ ডটকম ই-টিকিটিং পদ্ধতিতে টিকিট বিক্রি নিরবচ্ছিন্ন করতে পারেনি। এর দায় এড়াতে পারেন না রেলের কর্তাব্যক্তিরা।
ঈদে সাধারণত রেলে ভ্রমণ বাড়ে। টিকিট সংগ্রহে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ভিআইপিসহ নানা কোটার নামে টিকিটের বড় অংশ রেখে দেন রেলকর্মীরা। পরে এসব টিকিটের অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত বিক্রি হয় না। এসব অবিক্রীত টিকিট নানাভাবে শেষ পর্যন্ত কালোবাজারেই যায়। যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে এবং টিকিট বিক্রিতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হলে ই-টিকিটিং পুরোদমে চালু করতে হবে। সহজ সেটি কঠিন করে ফেলছে বলেই প্রতীয়মান। প্রতিষ্ঠানটি চুক্তির শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি রেল, এটি দুঃখজনক। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করে রেলের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ ও আস্থা বৃদ্ধিতে রেল কর্তৃপক্ষ বাস্তবানুগ ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।