নিজস্ব প্রতিবেদক: রেলের অগ্রিম টিকিটের জন্য গতকাল শুক্রবার সর্বাধিক মানুষ চেষ্টা চালিয়েছেন। গতকাল ৮ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হয়েছে। সকাল ৮টায় পশ্চিমাঞ্চলের টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম ৩০ মিনিটে রেকর্ড এক কোটি ৩০ লাখ বার টিকিট কাটার জন্য ওয়েবসাইটে চেষ্টা (হিট) চালানো হয়েছে। প্রথম এক ঘণ্টায় দুই কোটি ২০ লাখের মতো হিট হয়েছে।
গতকাল পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ) ১৫ হাজার ৮৯০টি টিকিট বিক্রির জন্য ছাড়া হয়। প্রথম ১৫ মিনিটে সাত হাজার ১৯৪টি টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। আধা ঘণ্টায় বিক্রি হয় ১২ হাজার ৭৮৩টি টিকিট। সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে নির্ধারিত প্রায় সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়। আর বেলা ২টা থেকে রেলের পূর্বাঞ্চলের টিকিট বিক্রি হয়। এ অঞ্চলের জন্য টিকিট ছাড়া হয় গতকাল ১৬ হাজার ৬৯৬টি। রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, পূর্বাঞ্চলের টিকিটের চাহিদাও খুব বেশি ছিল। আজ সর্বশেষ দিন ৯ এপ্রিলের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে।
আগামী ১১ এপ্রিল ঈদের সম্ভাব্য দিন হিসাব করে ঈদযাত্রার সূচি সাজিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। সে অনুযায়ী, গত রোববার ৩ এপ্রিল ট্রেনযাত্রার টিকিট অনলাইনে উš§ুক্ত করা হয়। প্রথম দিন রোববার টিকিটের চাহিদা কিছুটা কম ছিল। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বাড়ছে। সোম, মঙ্গল ও বুধবার টিকিট বিক্রি হয়ে যায় আধা ঘণ্টারও আগে। বৃহস্পতিবার টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম পাঁচ মিনিটেই ট্রেনের টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, শুক্রবার সকাল ৮টায় অনলাইনে টিকিট বিক্রি শুরুর আগে রাজশাহী স্টেশনের জন্য ধূমকেতু এক্সপ্রেসে ৩৫৪টি, পদ্মা, বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনে ৬৩৬টি, সিল্কিসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনে ২৮৮টি, মধুমতি এক্সপ্রেস ট্রেনে ৭০টি এবং পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনে ৬৬০টি আসন ছিল। তবে বিক্রি শুরুর পর বেলা ৮টা দুই মিনিটে দেখা যায় এসব ট্রেনে রাজশাহীর সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে।
সকাল ৮টা ৩ মিনিটে দিনাজপুর স্টেশনের জন্য থাকা ‘অ্যাভেইলেবল টিকিটের’ ঘর শূন্য দেখাচ্ছিল। কয়েকটি টিকিট আছে দেখালেও সেগুলো কিনতে গেলে বিক্রি দেখাচ্ছিল। বিক্রি শুরুর আগে এই স্টেশনের জন্য একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৩১টি, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৬২টি এবং পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ট্রেনের ২১৪টি আসন ছিল। পার্বতীপুর স্টেশনের জন্য নীলসাগর এক্সপ্রেসের ৯০টি, একতা এক্সপ্রেসের ১০৩টি, চিলাহাটি এক্সপ্রেসের ১৫৮টি, দ্রুতযান এক্সপ্রেসের ৯৫টি, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের ৭৭টি ও পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের ১৪২টি টিকিট ছিল বিক্রি শুরুর আগে। বিক্রি শুরুর প্রথম তিন মিনিটের মধ্যে এসব ট্রেনের সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।
রংপুর স্টেশনের জন্য রংপুর এক্সপ্রেসের ১১২টি এবং কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসের ১১৪টি টিকিট ছিল শুক্রবার সকালে। ৮টা ৪ মিনিটের মধ্যে ওই টিকিটগুলো বিক্রি হয়ে যায়। ওই সময় পর্যন্ত ওই দুটি ট্রেনের অন্যান্য স্টেশনের জন্য বরাদ্দ টিকিটও বিক্রি হয়ে গেছে বলে দেখাচ্ছিল। খুলনা স্টেশনের জন্য সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের ১০৬টি এবং চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনের ১৮২টি টিকিট ছিল। বিক্রি শুরুর পর বেলা ৮টা ৫ মিনিটে সব টিকিট বিক্রি হয়ে যায়।
দেখা গেছে, পশ্চিমাঞ্চলের অন্যান্য রুটের ট্রেনগুলোর টিকিটও বিক্রি শুরুর প্রথম পাঁচ মিনিট বা তার আগেই শেষ হয়ে যায়।
গত ১৩ মার্চ রেলভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে রেলওয়ের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সরদার সাহাদাত আলী অগ্রিম টিকিট বিক্রির সূচি প্রকাশ করেন। সূচি অনুযায়ী ২৫ মার্চ বিক্রি হয়েছে ৪ এপ্রিলের টিকিট, ২৬ মার্চ পাওয়া গেছে ৫ এপ্রিলের টিকিট, ২৭ মার্চ বিক্রি হয়েছে ৬ এপ্রিলের, ২৮ মার্চ পাওয়া গেছে ৭ এপ্রিলের টিকিট। ২৯ মার্চ বিক্রি হচ্ছে ৮ এপ্রিলের টিকিট আর ৩০ মার্চ পাওয়া যাবে ৯ এপ্রিলের টিকিট।
এবারও ঈদযাত্রার কোনো টিকিট কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে না। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকেই শতভাগ টিকিট বিক্রি হবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইট, রেলসেবা অ্যাপ ও সহজ ডটকমের প্ল্যাটফর্ম থেকে টিকিট সংগ্রহ করা যাবে। ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হবে ৩ এপ্রিল। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট মিলবে। বাংলাদেশ রেলওয়ে বলছে, চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে ১০, ১১ ও ১২ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি করা হবে।
এবার ঈদের আগে সারাদেশের বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেনের ৩৩ হাজার ৫০০টি টিকিট বিক্রি হবে। ঈদ উপলক্ষে সারাদেশের বিভিন্ন রুটে আট জোড়া বিশেষ ট্রেন চালানো হবে বলে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।