পলাশ শরিফ: অগ্রণী ব্যাংকের কাছে রেলওয়ের পাওনা প্রায় ৪০ কোটি টাকা। অডিট আপত্তির জের ধরে প্রায় দেড় বছর আগে পাওনা আদায়ের উদ্যোগ নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চিঠি চালাচালি চললেও আড়াই বছর ধরে অর্থ ফেরত দিচ্ছে না অগ্রণী ব্যাংক।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দেশের পশ্চিমাঞ্চলে টিকিট বিক্রিসহ অন্যান্য আয়ের অর্থ সংগ্রহে ১৯৯৮ সালের জুলাইয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ওই চুক্তি অনুযায়ী, পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন রেলওয়ে স্টেশনের আয়সহ রেলওয়ের অর্থ রাজশাহী অঞ্চলের অগ্রণী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখার মাধ্যমে সাহেববাজার করপোরেট শাখায় জমা হবে। সংগ্রহের পর দুই সপ্তাহের মধ্যেই বিভিন্ন শাখা থেকে সাহেববাজার করপোরেট শাখায় স্থানান্তর করা হবে। অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখা থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের রাজশাহী শাখায় রেলওয়ের হিসাব খাতে পরবর্তী চার সপ্তাহের মধ্যে জমা দেওয়ার কথা ছিল। ক্ষেত্র বিশেষে, ওই অর্থ সমন্বয়ে অগ্রণী ব্যাংককে সর্বোচ্চ ছয় সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে। ওই শর্ত পরিপালনে ব্যত্যয় ঘটলে অগ্রণী ব্যাংককে পাঁচ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে বলেও চুক্তিতে উল্লেখ রয়েছে। প্রায় দেড় দশক ধরে ওই চুক্তি মেনেই রেলওয়ের অর্থ সংগ্রহ ও বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিয়ে আসছে অগ্রণী ব্যাংক।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রেলওয়ের অর্থ নিয়ে বিপত্তি দেখা দেয় ২০১৪ সালে। রহস্যজনক কারণে ওই বছরের জুলাই থেকে রেলওয়ের নামে রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন শাখায় জমা করা অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা দিচ্ছে না অগ্রণী ব্যাংক। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ২০১৩-১৪ অর্থবছরের কার্যক্রম নিরীক্ষাকালে বিষয়টি রেলওয়ে অডিট অধিদফতরের নজরে আসে। ওই এক অর্থবছরে জমা করা অর্থের সুদ হিসেবে তিন কোটি ৫২ লাখ ৮৬ হাজার ৫৬৪ টাকার অডিট আপত্তি তোলা হয়। তবে উত্থাপনের প্রায় দেড় বছরেও ওই আপত্তি নিষ্পত্তি হয়নি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সুদসহ রেলওয়ের পাওনা ৪০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। রেলওয়ের পক্ষ থেকে ওই অর্থ ফেরতে রাজশাহীর সাহেববাজার করপোরেট শাখায় কয়েক দফায় চিঠি দেওয়া হলেও বিষয়টি আমলে নেওয়া হয়নি।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্য শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জিন্নাহ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রেলওয়ের টাকা অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে জমা হয় বলেই জানি। এখন অগ্রণী ব্যাংক ওই টাকা রেলওয়ের অ্যাকাউন্টে জমা দেয় কি না সে বিষয়ে আমার জানা নেই।’
এদিকে শেয়ার বিজের সঙ্গে আলাপকালে অগ্রণী ব্যাংকের রাজশাহী সাহেববাজার করপোরেট শাখার অডিট বিষয়ে দায়িত্বরত প্রিন্সিপাল অফিসার আহাদ খান গাজীসহ দায়িত্বশীলরা এ বিষয়ে হালনাগাদ কোনো তথ্যই জানাতে পারেননি। এ বিষয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা এসেছে কি নাÑসে বিষয়েও স্পষ্টভাবে কিছু বলেননি তিনি।
সূত্রগুলো বলছে, অডিট অধিদফতরের আপত্তির পর ওই অর্থ আদায় নিয়ে নড়েচড়ে বসেছিল রেলওয়ে। ওই ঘটনায় রেলওয়ের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত কি নাÑ তা খতিয়ে দেখার পরিকল্পনাও করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে পদক্ষেপটি আর এগোয়নি। অর্থ আদায়ে সর্বশেষ ২০১৬ সালের মার্চে রেলওয়ের পক্ষ থেকে পাওনা পরিশোধে ব্যবস্থা নিতে অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে ২০১৬ সালের মার্চ পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংকের ওই শাখায় রেলওয়ের নামে প্রায় ৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা জমা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
Add Comment