Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:09 pm

রেলে অনিয়ম কালোবাজারির কথা স্বীকার করলেন মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের অনুপস্থিতিতে সংসদে প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে রেলে অনিয়ম, দুর্নীতি ও টিকিট কালোবাজারির কথা স্বীকার করলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। এসব বন্ধের জন্য রেলে সুশাসন দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।

স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনের শুরুতে প্রশ্নোত্তর অনুষ্ঠিত হয়। বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সদস্য রুমিন ফারহানার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

এ সময় নিজের গাড়ি চালকের দেওয়া তথ্য উল্লেখ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘টিকিট কাটতে গেলে টিকিট পাওয়া যায় না। কিন্তু দেখা যাচ্ছে ট্রেনে সিট খালি থাকছে।’ কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘রেলের অনিয়ম, দুর্নীতি, কালোবাজারে টিকিট কেনাবেচা বন্ধে সুশাসন দরকার। সুশাসন প্রতিষ্ঠা হলে সব ধরনের অনিয়ম বন্ধ হবে।’

রেলওয়ের অব্যবহƒত ভূমি খাস খতিয়ানে এনে তা ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দিতে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের প্রস্তাবকে স্বাগত জানান মন্ত্রী। প্রশ্নোত্তরে তিনি বলেন, ‘এটি একটি সুন্দর প্রস্তাব। আমি নিজেও এ বিষয়টি ভেবেছি। আমি এটা মন্ত্রিসভায় তুলব।’

বিএনপির সংসদ সদস্যকে উদ্দেশ করে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আপনারা ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করলেন। এবারও নির্বাচনের পর সংসদে আসা নিয়ে অনেক কিছু দেখলাম। আপনারা সংসদে এসে এ ধরনের ভালো প্রস্তাব দিলে জাতিও উপকৃত হতো। আপনাদেরও জনপ্রিয়তা বাড়ত।’

জামালপুরের সংসদ সদস্য মোজাফ্ফর হোসেনের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ১৯৭২ সালে রেলওয়ের ভূমি ছিল ৬০ হাজার ৪০৫ দশমিক ৮৫ একর। বর্তমানে ভূমির পরিমাণ ৬১ হাজার ৮২০ দশমিক ৩৫ একর। এর মধ্যে ৫৮ হাজার ৬০ দশমিক ৫৭ একর ভূমি রেলওয়ের দখলে রয়েছে। ভূমি লিজ দিয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪৫৯ কোটি ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার ৪৯০ টাকা আয় হয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা ও লিজ গ্রহণকারীর কাছে রেলের বকেয়া ১২৪ কোটি ৪৩ লাখ ৬৯ হাজার ১৯৬ টাকা বলে জানান তিনি।

সংরক্ষিত আসনের গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, ২০১৯ সালে রেলে ৪৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, এতে ২১ জন নিহত এবং ১৪১ জন আহত হয়েছে। সংরক্ষিত আসনের শামসুন নাহারের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০০৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এক হাজার ৪৮টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে ৫৯ জন নিহত এবং ৪৩৩ জন আহত হয়েছে।

ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য বেগম শিরীন আখতারের লিখিত প্রশ্নের উত্তরে কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ে দক্ষিণ এশিয়া উপ-আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সহযোগিতার (সাসেক) রেল যোগাযোগ বিনিয়োগ কার্যক্রমের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রকল্পের আওতায় রেলওয়ের হালনাগাদ মাস্টারপ্ল্যান ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি অনুমোদন করা হয়েছে। অনুমোদিত মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০৪৫ সালের জুন পর্যন্ত ছয়টি পর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ লাখ ৫৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৩০টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ঢাকা থেকে মানিকগঞ্জ হয়ে পাটুরিয়া ঘাট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণসহ মোট ২০টি রেলপথ ও রেলসংযোগ নির্মাণ করা হবে।

প্রস্তাবিত অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ের জন্য ৭৯৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ, ৯৭৭ দশমিক ৭০ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণ, ৮৪৬ দশমিক ৫১ কিলোমিটার পুনর্বাসন, ৯টি গুরুত্বপূর্ণ রেলসেতু নির্মাণ, লেভেল ক্রসিং গেট, আইসিডি নির্মাণ, ওয়ার্কশপ, ১৬০টি লোকোমোটিভ, এক হাজার ৮০৪ যাত্রীবাহী কোট সংগ্রহ, আধুনিক রক্ষণাবেক্ষণ ইকুইপমেন্টস সংগ্রহ, ২২২টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থার মানোন্নয়নে রেলওয়ে শক্তিশালীকরণ ও আর্থিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে।