গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘নৌ ও সড়কের পর রেলপথে ট্রানজিট চায় ভারত’ শীর্ষক খবরটি এরই মধ্যে অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, গত বছর ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে কনটেইনার পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছিল ভারত। এর শিরোনাম হচ্ছে ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বিটুইন কনটেইনার কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিসিবিএল) অ্যান্ড কনটেইনার করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (কনকর) টু প্রমোট অ্যান্ড এক্সপান্ড কো-অপারেশন বিটুইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড বাংলাদেশ ইন দ্য ফিল্ড অব কনটেইনার ট্রান্সপোর্টেশন ফর মিউচুয়াল বেনিফিট অব বোথ কান্ট্রিজ’। প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহার করে যেখানে ভারত পণ্য পরিবহন করছেই, সেখানে আবার রেলপথের দিকে তাদের দৃষ্টি গেলো কেন? জবাবটা সোজা, নৌপথের চেয়ে রেলে পণ্য পরিবহন ৩০ শতাংশ সাশ্রয়ী। সুতরাং ভারত যে রেলপথ ট্রানজিটে আগ্রহী হবে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আমাদের প্রতিবেদক আরও জানিয়েছেন, ওই মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) খসড়ার ওপর সম্প্রতি পর্যালোচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান ও সম্ভাব্য রেলরুটগুলোর সর্বশেষ অবস্থা তুলে ধরা হয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার আটটি রেল ইন্টারচেঞ্জের কথাই নাকি আলোচিত হয়েছে বেশি। এদিকে উল্লেখ্য, সড়কপথে যানচলাচলের জন্য বাংলাদেশ, ভুটান, নেপাল ও ভারতের (বিবিআইএন) মধ্যে একটি চুক্তি বিদ্যমান। ভারত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, যাতে রেলপথের জন্যও অনুরূপ বিবিআইএন চুক্তি করা যায়।
প্রথম কথা হলো, ভারতের অর্থনৈতিক সম্প্র্রসারণের জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আলোচ্য ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট চালু হওয়া দরকার। এক্ষেত্রে ভারত যে প্রয়োজন অনুভব করছে, সংগত কারণেই অন্যদের পক্ষে তা অনুভব করা সম্ভব নয়। এটি স্পষ্টত বাস্তবতা। অনেকে আবার বিষয়টিকে এভাবে ব্যাখ্যা করেন, ভারত তার ‘নব্য সাম্রাজ্যবাদী থাবা’ বিস্তারের লক্ষ্যেই প্রতিবেশী দেশগুলোকে এভাবে ফাঁদে ফেলতে চাইছে। এমন তত্ত্বের সঙ্গে একমত হওয়ার সুযোগ নেই। বরং ভারতকে সড়ক, নৌ ও রেলপথে ট্রানজিট বা ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর পক্ষে অধিকতর ফায়দা তুলে নেওয়া সম্ভব বলে আমরা মনে করি। সেই অর্থনৈতিক সুবিধাগুলো তুলে নেওয়ার জন্য উপযুক্ত নীতি ও জুতসই কৌশল থাকা দরকার। কেউ কেউ মনে করেন, ভারতের ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক বাণিজ্য বৃদ্ধি। সেজন্য সুবিধামতো রুট সে বাছাই করবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমরা যেখানটায় পিছিয়ে রয়েছি সেটি হলো, ওই ইন্টারচেঞ্জ তথা ট্রানজেকশন পয়েন্টগুলোর সঙ্গে অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সেভাবে যুক্ত করতে পারছি না। অথচ কাজগুলো অনেক আগেই সম্পন্ন করা জরুরি ছিল। ভর্তুকি থাকা সত্ত্বেও উপমহাদেশে ভারতীয় রেলসেবার সুনাম রয়েছে। অথচ কয়েক দশক আগেই তাদের রেলসেবার মান আমাদের তুলনায় ব্যাপক উন্নত ছিল, সেটা বলা যায় না। লক্ষণীয়, বাংলাদেশের রেল অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতীয় সহায়তাও নেওয়া হয় অতীতে। তবে সেগুলো ব্যাপকভাবে ফলপ্রসূ হয়েছে, এ কথা জোর দিয়ে বলা যাবে না। আলোচ্য এমওইউতে বাংলাদেশের রেলসেবার উন্নয়নে ভারতের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ থাকবে বলে আমরা আশা করি। এও প্রত্যাশা, ভারতকে রেল ট্রানজিট দেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ রেলওয়েকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে উন্নীতকরণে সব সহায়তাই মিলবে। ভারতকে রেল ট্রানজিট দেওয়ার মাধ্যমে উভয় দেশই যদি দৃশ্যমানভাবে উপকৃত হয়, তাহলে তা দুই দেশের অর্থনীতি তথা জনগণকে আরও কাছাকাছি আনবে বলেই আমাদের ধারণা।