মৃগীতে আক্রান্ত হতে পারে যে কেউ। এটা কোনো সংক্রামক রোগ নয়। মস্তিষ্কের কোষগুলো যদি হঠাৎ করে অতিমাত্রায় উত্তেজিত হয়ে পড়ে তখন মৃগী রোগ দেখা দেয়। এ রোগের কারণে খিঁচুনি হয়, অনেক সময় রোগী অজ্ঞান হয়ে যান। এর বৈশিষ্ট্য হলো রোগী বারবার আক্রান্ত হয়। তবে পরে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। এ রোগের প্রকৃত কারণ জানা না গেলেও মস্তিষ্কে আঘাত, স্ট্রোক, মস্তিষ্কে টিউমার বা সংক্রমণ, জš§গত ত্রুটি প্রভৃতিকে সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জিনগত মিউটেশন কিছুু ক্ষেত্রে দায়ী বলে মনে করা হয়। মস্তিষ্কের সেরেব্রাল কর্টেক্সের স্নায়ুকোষসমূহের অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ক্রিয়ার ফলে খিঁচুনি হয়। রোগটিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় নিউরোলোজিক্যাল ডিজিজ বলে।
লক্ষণ
বড় ধরনের মৃগী রোগের লক্ষণ
স আচরণে পরিবর্তন আসে
ফিট বা খিঁচুনি হওয়ার আগে রোগী বুঝতে পারে
রোগী জ্ঞান হারায়। মাটিতে পড়ে যায়। সব মাংশপেশী টান টান হয়ে যায়, তখন কান্নার মতো চিৎকার করে। ঝাঁকুনির মতো খিঁচুনি শুরু হয়। মুখ দিয়ে ফেনা বের হয়। রোগী জিহ্বা কামড় দিয়ে রাখতে পারে। রোগীর অজান্তেই প্রস্রাব, পায়খানা বেরিয়ে আসতে পারে
রোগীর শরীর আস্তে আস্তে শীথিল হয়ে আসে। গভীর ঘুমে ঢলে পড়ে। জেগে উঠার পর কিছু সময়ের জন্য সঠিকভাবে চিন্তা করতে পারে না। কি ঘটেছে সে ব্যাপারে কিছুই মনে করতে পারে না
মৃদু ধরনের মৃগী রোগের লক্ষণ
হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে যায়। এটা ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড স্থায়ী থাকে
কখনও অজ্ঞান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে খিঁচুনি শুরু হতে পারে
রোগী অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়তে পারে। আবার সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান ফিরে দাঁড়িয়ে যায়
চিকিৎসা
কোনো ব্যক্তি মৃগী রোগে আক্রান্ত হলে নিজে কি করে তা বলতে পারে না। এ সময় তার পাশে যে থাকবেন তিনিই সবচেয়ে বড় সাহায্যকারী ও উপকারী। জ্ঞান ফেরার পর কিছু সময়ের জন্য রোগীর মধ্যে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। এ সময়টুকু রোগীর পাশে থাকুন। স্বাভাবিক অবস্থায় না ফেরা পর্যন্ত রোগীকে ছেড়ে যাবেন না। কাউকে খিঁচুনিতে আক্রান্ত হতে দেখলে আতঙ্কিত হবেন না। কয়েকটি বিষয় মেনে চলা যেতে পারে
রোগী দাঁড়ানো কিংবা চেয়ারে বসা অবস্থায় খিঁচুনিতে আক্রান্ত হলে আলতো করে ধরে মেঝেতে শুইয়ে দিন, যাতে রোগী পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত না পায়। রোগীর মাথার নিচে নরম জাতীয় বালিশ, কাপড় কিংবা ফোম দিন
খিঁচুনি শেষ হলে রোগীকে এক পাশে কাত করে শুইয়ে দিন
রোগীর গলায় টাই বাঁধা থাকলে বা বেল্ট পরা থাকলে তা খুলে দিন। জামাকাপড় ঢিলা করে দিন। রোগীর আশেপাশে ভিড় জমতে দেবেন না
খিঁচুনি পাঁচ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয় কিংবা একবার খিঁচুনির পর জ্ঞান ফেরার আগেই দ্বিতীয়বার খিঁচুনি হয় সেক্ষেত্রে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে বা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান
খিঁচুনি শেষ হলে রোগীর নাড়ির স্পন্দন অনুভব করুন এবং রোগী ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছে
কি না সেদিকে দৃষ্টি রাখুন। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হয়Ñএমন কিছু মুখে বা নাকে থাকলে তা সরিয়ে দিন
নিউরো মেডিসিন (স্নায়ু) বিশেষজ্ঞের সঙ্গে যোগযোগ করতে হবে
সতর্কতা
খিঁচুনি বন্ধ করার জন্য রোগীকে চেপে ধরবেন না। মুখে জোর করে আঙুল বা অন্য কিছু ঢোকানোর চেষ্টা করবেন না। জিহ্বায় দাঁত দিয়ে কামড় লাগলেও খিঁচুনিরত অবস্থায় তা ছাড়ানোর জন্য জোরাজুরি করা যাবে না
বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে এমন জিনিস যেমন আগুন, পানি, ধারালো বস্তু, আসবাব রোগীর কাছ থেকে সরিয়ে নিন। খিঁচুনি আক্রান্ত অবস্থায় রোগীকে সরানোর চেষ্টা করবেন না
যে কাজ জীবনের প্রতি ঝুঁকিপূর্ণ তা মৃগী রোগীদের দেওয়া যাবে না। গাড়ি চালানো, আগুনের পাশে কাজ করা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা, উঁচুতে কাজ করা প্রভৃতি করতে দেওয়া যাবে না। এছাড়া যেসব জিনিস মৃগী রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় সেগুলো বাদ দিতে হবে
ইন্টারনেট অবলম্বনে শিপন আহমেদ