রোগীদের আস্থার জায়গা হবে ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল

রোগীদের আস্থার জায়গা হবে ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টার। ক্যানসার চিকিৎসার জন্য যেন দেশের বাইরে যেতে না হয় সেই চেষ্টা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সে জন্য বিশ্বমানের আরও ৩০টি সেন্টার নির্মাণ করা হবে। কার্ডিয়াক চিকিৎসায় যেমন সাফল্য পেয়েছে ল্যাবএইড, সুনাম অর্জন করেছে, ক্যানসার চিকিৎসায়ও ঠিক তেমন সুনাম অর্জন করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। শেয়ার বিজের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সাকিফ শামীম এসব কথা জানান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নজরুল ইসলাম

শেয়ার বিজ: অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ক্যানসারের প্রাদুর্ভাব কতখানি?

সাকিফ শামীম: সেভাবে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১ লাখ ৫৬ হাজার জন বছরে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর ১ লাখ ৯ হাজার জনের মতো বছরে মারা যাচ্ছেন। অন্যান্য দেশের তুলনায় এটি বেশিই। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এটা অবশ্যই বেশি। ইউরোপীয় দেশগুলোর চেয়েও বেশি। সিঙ্গাপুর ও জাপানের চেয়েও বেশি। আর ভারতের সমান। আরলি ডায়াগনসিস ও রেগুলার মেমোগ্রাফি থাকলে শনাক্ত হার আরও বাড়বে।

শেয়ার বিজ: কোন ধরনের ক্যানসার বর্তমানে বেশি শনাক্ত হচ্ছে?

সাকিফ শামীম: আমাদের দেশে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে হেড-নেক, ব্রেস্ট, ওরাল ও ফুসফুসের ক্যানসারে। তবে আমাদের হাসপাতালে আসা ১০০ জনের মধ্যে ৪৫ জনই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী আমরা পেয়েছি।

শেয়ার বিজ: সাম্প্রতিক সময়ে নারীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্যানসারজনিত রোগ বিশেষ করে স্তন ক্যানসার, ওভারিয়ান ক্যানসার প্রভৃতির প্রাদুর্ভাব ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে এর মূল কারণ কী?

সাকিফ শামীম: জীবনযাপনের ধরনই মূল কারণ। এ ছাড়া ধূমপান, দেরিতে বিয়ে, খাদ্যাভ্যাস, পিল নেয়া, অ্যালকোহল গ্রহণও দায়ী।

শেয়ার বিজ: সিওপিডি থেকে পরবর্তীকালে ক্যানসারে রূপান্তরিত রোগের বিস্তৃতি বাংলাদেশে কতখানি? জন্য তামাকপণ্য কতখানি দায়ী?

সাকিফ শামীম: বাংলাদেশে অনেক মানুষ ধূমপান করেন। ধূমপান থেকে ফুসফুস ক্যানসারের আশঙ্কা বেশি থাকে। দীর্ঘ সময়ে এর ভোগান্তি পোহাতে হয়। অনেকে টেরই পান না। সময় গড়িয়ে যায়। হঠাৎ প্রকাশ পায়। তখন দেখা যায়, ফুসফুসে পানি জমে গেছে। ফুসফুস হঠাৎ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। এটা তার দীর্ঘদিনের অভ্যাসের ফল। আমরা যখন সার্জারি করি, তখন দেখি হার্টে প্রলেপ পড়ে গেছে। তখন সাত-আট দিনের মধ্যে মারা যান।

শেয়ার বিজ: ক্যানসার চিকিৎসায় বিশেষায়িত চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা কতটুকু? সন্তোষজনক বলে আপনি মনে করেন কি না

সাকিফ শামীম: আসলে দেশে ক্যানসারের স্বয়ংসম্পূর্ণ চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা নেই। ১৮ কোটি মানুষের দেশ। রেডিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়ার কেন্দ্র আছে মাত্র ২৫ থেকে ৩০টি। যেখানে মেশিন দরকার ২৫০টি। তারপর কেমো, বেড ও ডে কেয়ার। এগুলোই শেষ কথা নয়। মূলত ক্যানসার চিকিৎসা হলো একটি মাল্টি ডিসিপ্লিনারি অ্যাপ্রোচ। সমন্বিত চিকিৎসাসেবার দরকার। অর্থাৎ একজন রোগী যেন সব ধরনের চিকিৎসাসেবা এক জায়গায় পেয়ে যান। কিন্তু সেটি নেই।

ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত কোনো রোগীর যদি ব্রেন মেটাস্টেসিস থাকে, তখন তার জন্য একজন থোরাসিক সার্জন, নিউরো সার্জন, নিউরোলজিস্ট, সাইক্রিয়াট্রিস্ট, প্যাথলজিস্ট, রেডিয়াশনকলজিস্ট, অনকোলজিস্ট ও একজন মেডিকেল অনকোলজিস্টেরও প্রয়োজন হয়। কিন্তু একসঙ্গে এসব সেবার পাওয়ার যে ব্যবস্থা, সেটা আমাদের দেশে অভাব রয়েছে। শুধু মহাখালীর ক্যানসার হাসপাতালে এসব পাওয়া যায়। তাই সেখানে প্রচুর রোগী। তাদের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম পোহাতে হয়। তখন চিকিৎসাটা ধীর হয়ে যায়। তবে সরকার আটটি বিশেষায়িত ক্যানসার হাসপাতাল করবে, এটা ভালো খবর। এটা যদি হয়, তাহলে চিকিৎসাসেবা বাড়বে। আমাদেরও উদ্যোগ রয়েছে। আমরা আরও ৩০টি সেন্টার করব।

শেয়ার বিজ: ক্যানসারসহ অন্যান্য রোগের চিকিৎসায় আমাদের দেশের মানুষ বিদেশে বিশেষ করে পার্শ্ববর্তী ভারতে যেমন যায়, তেমনটা আগ্রহ নিয়ে নিজের দেশে চিকিৎসা করাতে তাদের আগ্রহের অভাব বেশ লক্ষণীয়, চিকিৎসাসেবার এই গুণগত পার্থক্যটা কোথায় এবং তা কতখানি?

সাকিফ শামীম: আস্থার সংকট। ভুল চিকিৎসা। এক জায়গায় সব চিকিৎসা না পাওয়া। একেক চিকিৎসার জন্য একেক জায়গায় যেতে হয়। রোগীরা বিরক্ত। স্বজনরাও বিরক্ত। সে জন্য ভারতে চলে যাচ্ছেন রোগীরা। ভারতের সেন্টারগুলোয় ক্যানসারের সব ধরনের চিকিৎসা এক জায়গায় পাওয়া যায়। শনাক্ত থেকে শুরু করে শেষ পর্যন্ত সব চিকিৎসাসেবা তারা দিয়ে থাকে।

শেয়ার বিজ: বাংলাদেশে ক্যানসারবিষয়ক আন্তর্জাতিক মানের গবেষণার সুযোগ কতটুকু? বিষয়েল্যাবএইড ক্যানসার হসপিটাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারএর কোনো ভূমিকা/চলমান সক্রিয়তা রয়েছে কি না

সাকিফ শামীম: আমরা স্তন ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছি। আরও পরিকল্পনা রয়েছে। রাজধানীর উত্তরায় ক্লিনিক্যাল ডেডিকেডেট ইউনিট করব। সেখানে বৃহৎ আকারে গবেষণা করার সুযোগ থাকবে। তাছাড়াএখানে ক্যান্সার রোগীদের জন্য হাইপোফ্র্যাকশন ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা থাকবে।

শেয়ার বিজ: বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি কতখানি সার্থক বলে আপনি মনে করেন?

সাকিফ শামীম: তারা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। আরও বেশি আশা করছি। তবে আমাদের তো এমবিবিএস চিকিৎসকই কম। ক্যানসার বিশেষজ্ঞও তো আরও কম। তারপরও সবাই চেষ্টা করছেন। আমরাও সচেতনতার কাজ করছি। সবার উদ্দেশ্যই এক।

শেয়ার বিজ: বাংলাদেশিদের জীবনযাত্রা তথা খাদ্যাভ্যাস ভেজাল খাদ্য গ্রহণ বা খাদ্যে বিষক্রিয়া ক্যানসারজনিত রোগের জন্য কতটা দায়ী বলে আপনি মনে করেন?

সাকিফ শামীম: নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি আমরা খেয়াল রাখি না। আমরা ব্যায়াম করি না। দৌড়াই না। হাঁটি না। সময় পাই না। কিন্তু সময় বের করে নিতে হবে। একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে। সচেতন হলে আক্রান্তের হার কমে আসবে।

শেয়ার বিজ: বাংলাদেশে ক্যানসারের চিকিৎসা বেশ ব্যয়বহুল, যা মধ্যবিত্তনি¤œ মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে, আক্রান্ত অনেকে চিকিসার অভাবে মৃত্যুবরণ করেন এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন?

সাকিফ শামীম: বীমা পলিসিতে যেতে হবে। উন্নত দেশগুলোয় যেমনটি করা হয়। সরকারিভাবে এটি করা যেতে পারে। সরকারি চিকিৎসাসেবা তো অনেকটাই ফ্রি। গুণগতমান আরও বাড়াতে বীমা চালু করা যেতে পারে। তবে এটা জটিল বিষয়। তাই দীর্ঘ মেয়াদে এটা হতে পারে। স্বাস্থ্যসেবায় আরও বাজেট বাড়াতে হবে। ব্যক্তিকেও তার স্বাস্থ্যের জন্য বাজেট রাখতে হবে। শপিং, ভ্রমণের জন্য বাজেট রাখা গেলে স্বাস্থ্যের জন্যও রাখা উচিত। কিন্তু মানুষ এটাকে সেভাবে ভাবে না। অনেকে এ কথা শুনে অবাক হনÑস্বাস্থ্যের জন্য ব্যক্তিগত বাজেট!

শেয়ার বিজ: ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল সুপার স্পেশালিটি সেন্টার নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

সাকিফ শামীম: এটি দেশের সর্বপ্রথম কম্প্রিহেন্সিভ ক্যানসার হাসপাতাল। ভারতে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে আমরা কাজ করছি। রোগীদের আস্থার জায়গা হবে ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টার। কার্ডিয়াকে আমরা যেমন সুনাম অর্জন করেছি, ক্যানসার চিকিৎসাসেবায়ও আমরা সে রকম সুনাম অর্জন করতে চাই। সে জন্য আমরা বিশ্বমানের ৩০টি সেন্টার নির্মাণ করব, যেখানে সবাই চিকিৎসা পাবেন। কারণ ক্যানসারের রোগী অনেক অসহায় অবস্থায় থাকেন। তাকে নিয়ে টানাটানি কেন হবে? দেশের বাইরে কেন নিতে হবে? সেটা যেন না হয়, সেই প্রচেষ্টাই আমরা করছি। আমরা একটি আধুনিক হসপিস সেন্টার স্থাপন করেছি। সেখানে তাদের থাকা-খাওয়াসহ সব ব্যবস্থা রয়েছে। মৃত্যুটাকে যত কম বেদনাদায়ক করা যায়, সেই প্রচেষ্টা আমরা করছি। ২৪ ঘণ্টা আমরা রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখি। গুণগতমান বজায় রেখে যত কম খরচে চিকিৎসা দেয়া যায়, সেটাই আমরা দিয়ে থাকি। মান কতটা উন্নত হয়েছে আর ভুল কত কম, তাও দেখার বিষয় রয়েছে। তাহলে আস্থা বাড়বে।

শেয়ার বিজ: আপনাদের হাসপাতালে সেবা দানে কী কী প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে?

সাকিফ শামীম: ক্যানসার চিকিৎসায় আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। এটি হবে দেশসেরা ক্যানসারÑচিকিৎসক, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধার এক সমন্বিত প্রতিষ্ঠান। আমাদের সুসজ্জিত প্যাথলজি ল্যাব, আইসিইউ, এইচডিইউ, আটটি মডিউলার অ্যাডভান্স অপারেশন থিয়েটার, ডে-কেয়ার সেন্টার, ডায়ালাইসিস সেন্টার, প্যালিয়েটিভ কেয়ার ও সাইকোথেরাপি সেন্টার রয়েছে। সপ্তাহে সাত দিন, ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা ও ফার্মেসি সবই চালু থাকবে এখানে। এছাড়া ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতালে রয়েছেÑক্যানসার চিকিৎসার সর্বাধুনিক সব প্রযুক্তি যেমনÑকেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি, টার্গেটেডথেরাপি, হরমোনথেরাপি, জিনথেরাপি ও রেডিওথেরাপি টেকনিক। এসব রয়েছে একই ছাদের নিচে। ক্যানসার রোগীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আমাদের হাসপাতালটিতে ১৫০ বেডের পাশাপাশি রয়েছে স্পেশাল কেমোবেডের ব্যবস্থা। ক্যানসারের সঠিক ডায়াগনসিস নিশ্চিত করতে ম্যান বিহাইন্ড মেশিন বলে এ কটা কথা রয়েছে। সে জন্য সুনির্দিষ্ট পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি দক্ষ ল্যাবরেটরি বিশেষজ্ঞ, হিস্টোপ্যাথলজিস্ট, ইন্টারভেনশনাল রেডিওলজিস্টের সমন্বয় করা হয়েছে। তাই আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল ও সুপার স্পেশালিটি সেন্টার বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা দিয়ে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা দিতে সম্পূর্ণভাবে সক্ষম।

উল্লেখ্য, বিশ্বমানের চিকিৎসাসেবা রোগীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে ২০২১ সালের মার্চে ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার যাত্রা করে। রাজধানীর গ্রিন রোডে ১৮টি ফ্লোরবিশিষ্ট হাসপাতালটি গড়ে তোলা হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০